'আমার স্বামীর তো কোনো অপরাধ ছিল না'
প্রকাশ | ২৬ মার্চ ২০১৭, ২১:৫৭
সিলেটে দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ি এলাকার আতিয়া মহলে জঙ্গি আস্তানায় অভিযানকালে কাছেই বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় দুই পুলিশ পরিদর্শক সহ মোট ৬ জন নিহত হয়েছেন। ২৫ মার্চ, শনিবার সন্ধ্যায় দুই দফা বোমা বিস্ফোরণে নিহত সিলেট মহানগর পুলিশের বিশেষ শাখার পরিদর্শক চৌধুরী মোহাম্মদ আবু কয়সর দিপু ও জালালাবাদ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মনিরুল ইসলামের লাশ আজ তাদের বাড়িতে পৌঁছালে সেখানে এক শোকাবহ পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
এঁদের মধ্যে আবু কয়সরের লাশ আজ সুনামগঞ্জে তার গ্রামের বাড়িতে পৌঁছেছে। তবে মনিরুলের পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে, লাশ এখন পথে রয়েছে। আজই লাশ পৌঁছাবে তার গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর সদর উপজেলার এওজবালিয়া ইউনিয়নের পূর্ব এওজবালিয়া গ্রামে।
রবিবার নিহত মনিরুলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, কাঁদতে কাঁদতে কথা বলার মতো শক্তি হারিয়ে ফেলছিলেন তার স্ত্রী পারভিন আক্তার।
তিনি বলছিলেন, "আমার এই মাছুম বাচ্চার কী হবে? বাবা বাবা বলে ডাকলে তাকে আমি কী বলে সান্ত্বনা দেব? কারা আমার স্বামীকে এভাবে মেরে ফেলল। আমার স্বামীর তো কোনো অপরাধ ছিল না। কেন তাঁকে এভাবে জীবন দিতে হলো। আমি সরকারের কাছে স্বামী হত্যার বিচার চাই"।
নিহত মনিরুলের স্ত্রী পারভিনের কোলে অঝোর ধারায় কাঁদতে দেখা যায় ১৭ মাস বয়সের একমাত্র শিশুপুত্র মোজাক্কেরুল ইসলাম ওরফে ফারাবীকেও।
ছেলের শোকে অনেকটা বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন মনিরুলের মা ফিরোজা খাতুন।
পারভিনের বড় ভাই আবদুল করিম বলেন, "ছোট ভাই শামীমের বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে গত বৃহস্পতিবার রাতে মনিরুল গ্রামের বাড়িতে আসেন। শুক্রবার রাতে সিলেট থেকে ফোন পেয়ে শনিবার সকাল ছয়টায় পুনরায় সিলেটের উদ্দেশে রওনা হন। বেলা তিনটার দিকে তিনি সিলেট গিয়ে পৌঁছান এবং কর্মস্থলে যোগ দেন। এরপর রাতে কর্তব্যরত অবস্থায় বোমা হামলায় নিহত হওয়ার খবর পাই"।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা মনিরুল ২০০৩ সালে পুলিশের উপপরিদর্শক পদে যোগ দেন। পরে পদোন্নতি পেয়ে পরিদর্শক হন এবং জালালাবাদ থানায় যোগ দেন।
এদিকে রবিবার বিকেলেই চৌধুরী মোহাম্মদ আবু কয়সর দীপুর (৫০) মরদেহ বিকেলে সিলেট থেকে সুনামগঞ্জে আনা হয়েছে। সিলেট থেকে একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে বিকেল পাঁচটার দিকে তার মরদেহ সুনামগঞ্জ পৌর শহরের নতুনপাড়া এলাকার বাসায় এসে পৌঁছায়। এ সময় শহরের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজন ওই বাড়িতে ভিড় করেন। সুনামগঞ্জ পুলিশ সুপার মো. হারুন-অর-রশীদসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তখন উপস্থিত ছিলেন। লাশ নিয়ে আসার পর সেখানে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, চৌধুরী মোহাম্মদ আবু কয়সরের বাবা মো. আছদ্দর আলী চৌধুরী আইনজীবী ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ছিলেন। তার মা হাসনা বেগম চৌধুরী। সাত ভাই ও এক বোনের মধ্যে কয়সর ছিলেন তৃতীয়। সুনামগঞ্জে কৃতী ক্রিকেট খেলোয়াড় হিসেবে পরিচিত ছিলেন কয়সর। পাড়ার মডার্ন ক্রিকেট ক্লাবের অধিনায়ক ছিলেন একসময়। স্ত্রী লোপা বেগমকে নিয়ে তিনি সিলেটেই থাকতেন। তাদের কোনো সন্তান ছিল না।
সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আয়ুব বখত জগলুল বলেন, "অত্যন্ত ভদ্র, বিনয়ী ও সৎ মানুষ ছিলেন কয়সর চৌধুরী। তার মৃত্যুর খবর পেয়ে সুনামগঞ্জের মানুষ শোকাহত। আমরা কল্পনাও করতে পারিনি যে তিনি এভাবে চলে যাবেন। এই মর্মান্তিক মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না"।
পুলিশ সুপার জানান, এশার নামাজের পর শহরের কেন্দ্রীয় ঈদগাহে চৌধুরী মোহাম্মদ আবু কয়সরের জানাজা হবে। পরে শহরের তেঘরিয়া কবরস্থানে মরদেহ দাফন করা হবে।