'বিশেষ বিধান' এর বলে প্রথম বাল্যবিবাহ
প্রকাশ | ২৩ মার্চ ২০১৭, ২৩:১৫
বাল্য বিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭ এর বিশেষ বিধান নিয়ে শুরু থেকেই সমালোচনা করে আসছিলেন বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ সহ দেশ বিদেশের নানা মানবাধিকার সংগঠন। এর মাধ্যমে বাল্যবিবাহের হার বেড়ে যবে ও ধর্ষকরা রেহাই পাবে এমন মন্তব্যই করে আসছিলেন তারা। তবে সরকারের পক্ষ থেকে শুরু থেকেই বলা হচ্ছিল বাল্য বিবাহ কমানোর উদ্দেশ্যেই এই আইন পাশ করা হয়েছে এবং এর অপব্যবহারের কোন সুযোগ নেই।
কিন্তু ‘বিশেষ প্রেক্ষাপটে’ দুই পরিবারের সম্মতিতে ১৮ বছরের আগেই বিয়ে দেয়ার এই আইনের বলে প্রথম বাল্যবিয়ের স্বীকৃতি দেয়া হলো চট্টগ্রামের একটি আদালতে। শুধু তাই নয়, এর মধ্য দিয়ে ধর্ষণ মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন স্বামী হওয়া যুবকটি।
বুধবার চট্টগ্রামের শিশু আদালতে দুই পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে কাজী ডেকে এনে ওই বিয়ে দেওয়া হয়। এর পর ধর্ষণের মামলাটি নিষ্পত্তি করে আসামি গোলাম মোস্তফাকে (২৫) মুক্তির নির্দেশ দেয় আদালত।
আদালত সূত্র জানায়, নগরীর আকবর শাহ থানার বেলতলী ঘোনা এলাকার নেভি মতিনের কলোনির বাসিন্দা মোস্তফা। মোস্তফার বাবার নাম আবুল কালাম। মেয়েটি তার প্রতিবেশী। মেয়েটির বাবা একজন রিকশাচালক।
প্রেমের সম্পর্কের জেরে ২০১৪ সালের ২০ অক্টোবর অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে মোস্তফাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয় মেয়েটি। মামলার নথি অনুযায়ী, তখন তার বয়স ছিল ১৩ বছর আট মাস। সে হিসাবে মা হওয়া মেয়েটির বয়স এখনও ১৮ বছরের কম।
২০১৫ সালের ২৫ মে মোস্তফার বিরুদ্ধে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ এনে আকবর শাহ থানায় মামলা করে মেয়েটি। পরদিন চট্টগ্রামের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩ এ হাজির করা হলে আদালত মোস্তফাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
গত ৮ জানুয়ারি সমঝোতা প্রস্তাব দিয়ে আদালতে হলফনামা জমা দেয় মেয়েটি। এরই প্রেক্ষিতে বুধবার উভয় পক্ষের উপস্থিতিতে আদালতে বিয়ে পড়ানো হয়। আদালতে একজন কাজী উপস্থিত হয়ে তিন লাখ টাকা কাবিনে তাদের বিয়ে পড়ান। এসময় মেয়েটির কোলে তার এক বছর চার মাস বয়সী শিশুটিও ছিল।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অতিরিক্ত পিপি এম এ ফয়েজ বলেন, "মোস্তফার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক থেকে অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা হয়। ওই অবস্থায় মেয়েটি বিয়ের প্রস্তাব দিলে মোস্তফা তখন রাজি হয়নি। পরে মেয়েটি ধর্ষণের মামলা করলে মোস্তফা গ্রেপ্তার হয়"।
এরমধ্যে মেয়েটি একটি কন্যা শিশুর জন্ম দেয়। এখন উভয়পক্ষ তাদের বিয়েতে আগ্রহ প্রকাশ করে। তাদের সম্মতিতেই বিয়ে দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি সংসদে পাস হওয়া বাল্য বিবাহ নিরোধ আইনে ছেলে ও মেয়ের বিয়ের ন্যূনতম বয়স আগের মতো ২১ ও ১৮ বছর বহাল থাকলেও ‘বিশেষ প্রেক্ষাপটে’ কম বয়সেও বিয়ের সুযোগ তৈরি হয়।
আইনের বিশেষ বিধানে বলা হয়, “এই আইনের অন্যান্য বিধানে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, কোনো বিশেষ প্রেক্ষাপটে অপ্রাপ্তবয়স্ক কোনো নারীর সর্বোত্তম স্বার্থে আদালতের নির্দেশনাক্রমে এবং মাতা-পিতার সম্মতিক্রমে বিধি দ্বারা নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণক্রমে বিবাহ সম্পাদিত হইলে উহা এই আইনের অধীন অপরাধ বলিয়া গণ্য হইবে না”।