তনু হত্যার এক বছর, আজও শনাক্ত হয়নি ঘাতকরা
প্রকাশ | ২০ মার্চ ২০১৭, ১৪:৫৪
সোহাগী জাহান তনু হত্যার এক বছর আজ। মাসের পর মাস পেরিয়ে ২০ মার্চ (সোমবার) একটি বছর চলে গেল। কিন্তু তনুর ঘাতকরা আজও শনাক্ত কিংবা গ্রেপ্তার হয়নি। যতই দিন যাচ্ছে সুষ্ঠু তদন্ত আর বিচার পাওয়া নিয়ে স্বজনদের মাঝে সংশয় আর হতাশা ততই বাড়ছে।
১৯ মার্চ (রবিবার) তনুর মা ও পরিবারের লোকজন বলেন, ‘স্পর্শকাতর একটি এলাকা থেকে তনুর লাশ উদ্ধার করা হলো, অথচ এখনো কাউকে শনাক্ত করা গেল না। এখনো সিআইডি বলছে- ঘাতকরা ধরা পড়বে, বিচার হবে। কিন্তু এভাবে আর কতদিন যাবে। আমরা ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি, জানি না বিচার পাব কি না। যদি সম্ভব হয় প্রধানমন্ত্রী এবং সেনাবাহিনী প্রধানের সঙ্গে দেখা করে মেয়ে হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাইব।’
তনুর মা আনোয়ারা বেগম জানান, ১৯ মার্চ (রবিবার) দুপুরে একটি টিঅ্যান্ডটি নম্বর থেকে তনুর বাবাকে হুমকি দেওয়া হয়েছে। একটি সংস্থার নাম উল্লেখ করে তনুর বাবাকে বলা হয়েছে তিনি চাকরি করতে চান কিনা। চাকরি করতে চাইলে চুপ থাকতে বলা হয়েছে। মিডিয়ার সঙ্গে এত কথা বলার দরকার নাই বলে জানানো হয়েছে।
দুই দফা ময়নাতদন্ত, মামলার তদন্তকারী সংস্থা ও কর্মকর্তা পরিবর্তন হলেও এ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি তনু হত্যা মামলা। বিভিন্ন সময়ে সামরিক-বেসামরিক ৭০ জনের অধিক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা, দুই দফা ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে মৃত্যুর কারণ অস্পষ্ট থাকা, এমনকি ডিএনএ পরীক্ষায় ৩ ধর্ষণকারীর শুক্রাণু পেলেও এ পর্যন্ত ডিএনএ ম্যাচ করে ঘাতকদের শনাক্ত করতে না পারায় এ মামলার ভবিষ্যত্ কিংবা বিচার পাওয়া নিয়ে তনুর পরিবার, মানবাধিকার সংগঠনসহ বিভিন্ন মহল সংশয় প্রকাশ করেছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সিআইডি-কুমিল্লার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার জালাল উদ্দীন আহমেদ জানান, মামলাটির তদন্ত নিজস্ব গতিতে চলছে, তাই তদন্তাধীন বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না।
উল্লেখ্য, কুমিল্লা সেনানিবাসের ভেতরের একটি জঙ্গল থেকে গত বছরের ২০ মার্চ রাতে কলেজছাত্রী সোহাগী জাহান তনুর লাশ উদ্ধার করা হয়। পরদিন তার বাবা কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহায়ক ইয়ার হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে কোতয়ালী মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। থানা পুলিশ ও ডিবি’র পর গত বছরের ১ এপ্রিল থেকে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি।
বিচারের দাবিতে দেশব্যাপী প্রতিবাদের ঝড় উঠলেও ধীরে ধীরে সবই থেমে গেছে। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ ছাড়াও দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, সাংস্কৃতিক, সামাজিক সংগঠন, গণজাগরণ মঞ্চ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো একসময় সরব থাকলেও এ নৃশংস হত্যাকাণ্ড নিয়ে এখন কেউ কথা বলছে না। মামলার অগ্রগতিও জিজ্ঞাসাবাদেই আটকে আছে।