‘বিশেষ বিধান’ রেখেই বাল্য বিবাহ আইন পাস
প্রকাশ | ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৩:৫৩ | আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৪:৪০
দেশে বিদেশে নানা ব্যক্তি ও সংগঠনের সমালোচনা ও আপত্তির মধ্যেই 'বিশেষ প্রেক্ষাপটে' মেয়েদের ১৮ বছরের আগেই বিয়ের বিধান রেখে সংসদে পাস হলো বিতর্কিত এই বাল্য বিবাহ আইন।
সোমবার সংসদে ‘বাল্য বিবাহ নিরোধ বিল-২০১৭’ পাসের প্রস্তাব করেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি, যা কণ্ঠভোটে পাস হয়ে যায়।
এই আইন পাস হওয়ায় মেয়ে ও ছেলেদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স আগের মতো ১৮ ও ২১ বছর বহাল থাকলেও ‘বিশেষ প্রেক্ষাপটে’ তার কম বয়সেও বিয়ের সুযোগ তৈরি হল।
তবে বিশেষ প্রেক্ষাপট কী এবং কত কম বয়সে বিয়ে করা যাবে, তা আইনে স্পষ্ট করা হয়নি। মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর বলা হয়েছিল, এগুলো আদালত নির্ধারণ করবে। তবে পাস হওয়া বিলে ‘বিশেষ প্রেক্ষাপট’ বিধি দ্বারা নির্ধারিত রাখার কথা বলা হয়েছে, যা সংসদে উত্থাপিত খসড়ায় ছিল না।
আইন পাসের প্রক্রিয়ার সময় ওঠা প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী চুমকি বলেন, “বিশেষ বিধানের এই সুযোগ যে কেউ চাইলেই পাবে না।
“কোনো অনভিপ্রেত ঘটনার ক্ষেত্রে পিতামাতা বা বৈধ অভিভাবক এবং আদালতের সম্মতি লাগবে। আদালতের অনুমতি ছাড়া কেউ বিয়ে দিতে পারবে না।”
২০১৪ সালে যুক্তরাজ্যে অনুষ্ঠিত গার্লস সামিটে প্রধানমন্ত্রী যে ঘোষণা দিয়ে এসেছেন, তা বাস্তবায়নে এই আইন কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে আশা করেন প্রতিমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী ২০২১ সালের মধ্যে ১৫ বছরের নিচে বিয়ের হার শূন্যে, ১৫-১৮ বছর বয়সীদের বিয়ের হার এক-তৃতীয়াংশে নামিয়ে আনার পর ২০৪১ সালের মধ্যে বাল্যবিবাহ মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণা দেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, “আমাদের দেশের মানুষ বাল্যবিবাহের কুফল সম্পর্কে জানেন কিন্তু মানেন না। বাল্যবিবাহ বন্ধে সংসদে উত্থাপিত আইনের ভূমিকা অনস্বীকার্য।”
বাল্য বিয়ের স্বীকৃতি দেওয়ার আইন বলে সমালোচনা উঠলেও বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্পর্কে প্রতিমন্ত্রী চুমকি বলেন, বাল্য বিয়ে ঠেকাতেই এই আইন করেছেন তারা।
বিল পাসের আগে বিলের ওপর দেওয়া বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যদের জনমত যাচাই, বাছাই কমিটিতে পাঠানো ও সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নিয়ে আলোচনা হলেও কণ্ঠভোটে তা বাতিল হয়ে যায়।
সংসদে উত্থাপিত বিলে বিশেষ বিধান সম্পর্কে বলা হয়েছিল, “এই আইনের অন্যান্য বিধানে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, কোনো বিশেষ প্রেক্ষাপটে অপ্রাপ্তবয়স্ক কোনো নারীর সর্বোত্তম স্বার্থে আদালতের নির্দেশনাক্রমে এবং মাতা-পিতার সম্মতিক্রমে বিধি দ্বারা নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণক্রমে বিবাহ সম্পাদিত হইলে উহা এই আইনের অধীন অপরাধ বলিয়া গণ্য হইবে না।”
এখানে সংসদীয় কমিটি ‘কোনো নারীর’ শব্দটি বাদ দিয়ে শুধু ‘অপ্রাপ্তবয়স্ক’ এবং ‘মাতা-পিতা’র সঙ্গে ‘প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অভিভাবকের’ সম্মতির শব্দটি যোগ করেছে।
পাস হওয়া বিলে বলা হয়েছে, কোনো অপ্রাপ্তবয়স্ক নারী বা পুরুষ বাল্য বিয়ে করলে তিনি সর্বোচ্চ এক মাসের কারাদণ্ড এবং পাঁচ হাজারের বদলে ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
সংসদে উত্থাপিত বিলে ১৫ দিনের আটকাদেশ বা পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের সম্মুখীন হওয়ার বিধান প্রস্তাব করা হয়েছিল। সংসদীয় কমিটি দণ্ডের বিধান পরিবর্তনের সুপারিশ করে।
উল্লেখ্য, সামাজিক ক্ষেত্রে নানা সূচকে অগ্রগতি হলেও বাল্য বিয়ে রোধের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখনো পিছিয়ে আছে। ইউনিসেফের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে বাল্য বিয়ের হার সবচেয়ে বেশি। ১৮ বছর বয়স হওয়ার আগেই বাংলাদেশের ৬৬ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয়ে যায়।
মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর বয়স কমানোর বিধানের সুযোগে বাংলাদেশে বাল্য বিয়ে উৎসাহিত হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে দেশের নারী সংগঠনগুলোর পাশাপাশি হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো বিলটি পাস না করতে বাংলাদেশের আইনপ্রণেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছিল।