সিফাতকে ‘আত্মহত্যার প্ররোচনা’: স্বামীর কারাদণ্ড
প্রকাশ | ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৩:৫৪ | আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৪:৫৩
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ওয়াহিদা সিফাতের মৃত্যুর ঘটনাকে ‘আত্মহত্যা’ বিবেচনা করে তাতে ‘প্ররোচনা’ দেয়ায় তার স্বামী মোহাম্মদ আসিফ প্রিসলিকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।
সোমবার আসামিদের উপস্থিতিতে ঢাকার ৩ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক সাঈদ আহমেদ দুই বছর আগের আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।
রায় ঘোষণার আগে আসিফকে কারাগার থেকে কাঠগড়ায় হাজির করা হয়। জামিনে থাকা বাকি তিন আসামিও আদালতে হাজির হন।
রায়ের আগে বিচারক বলেন, “এটি একটি চাঞ্চল্যকর মামলা। বেশি গুরুত্ব দিয়েই পড়েছি। আমার কাছে যতটুকু মনে হয়েছে, যে মেধা আছে, সে অনুযায়ী এ রায় তৈরি করেছি।”
রায়ের আলোচনায় মৌখিকভাবে বিচারক বলেন, “পুলিশ এ ঘটনার প্রকৃত রহস্য উন্মোচন করতে ব্যর্থ হয়েছে। বিষয়টি হত্যা না আত্মহত্যা সেটা নিয়ে পুলিশ নিজেই দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিল। প্রশ্নের সুরাহা না করেই পুলিশ আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে। যৌতুকের কারণে মারধরের ঘটনা এখানে প্রমাণিত হয়নি।”
রায়ে সিফাতের স্বামী আসিফকে ১০ বছরের সাজার পাশাপাশি ১০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরো ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে সিফাতের শ্বশুর অ্যাডভোকেট হোসেন মোহাম্মদ রমজান, শাশুড়ি নাজমুন নাহার নজলী এবং প্রথম ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান জোবাইদুর রহমানকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়েছে।
ওই ঘটনায় সিফাতের শ্বশুর-শ্বাশুড়ি ও ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকের জড়িত থাকার অভিযোগ 'প্রমাণিত হয়নি' বলে রায়ে জানানো হয়েছে।
রায় শুনে আদালতে উপস্থিত সিফাতের মা ফারজানা বানু কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। মামলার বাদী সিফাতের চাচা সাবেক ব্যাংকার মিজানুর রহমান এ রায়ে হতাশা প্রকাশ করে বলেন, এ রায়ের বিরুদ্ধে তারা হাই কোর্টে আপিল করবেন। সেখানে সর্বোচ্চ সাজার আবেদন করা হবে।
উল্লেখ্য, মামলার নথিপত্র থেকে জানা যায়, ২০১৫ সালের ২৯ মার্চ সন্ধ্যায় রাজশাহী মহানগরীর মহিষবাথান এলাকায় আইনজীবী মোহাম্মদ হোসেন রমজানের বাড়িতে ওয়াহিদা সিফাতের মৃত্যু হয়। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন ছিল। সিফাত আত্মহত্যা করেছে বলে প্রথমে তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন দাবি করলেও আদালতের নির্দেশে রংপুর মেডিকেল কলেজের তিন সদস্যের বোর্ড দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে আঘাতজনিত কারণে সিফাতের মৃত্যুর কথা উল্লেখ করে।
এ ঘটনায় মহানগরীর রাজপাড়া থানায় হত্যা মামলা করেন সিফাতের চাচা মিজানুর রহমান খন্দকার। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে করা এ মামলায় যৌতুকের দাবিতে হত্যার অভিযোগ আনা হয়। বাদিপক্ষের আবেদনে গত বছরের ১২ জুলাই মামলাটি রাজশাহী থেকে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল ৩-এ স্থানান্তর করা হয়।
এর আগে গত বছরের ২৩ মার্চ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সাবেক জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার আহমেদ আলী চারজনের বিরুদ্ধে রাজশাহী মুখ্য মহানগর হাকিমের (সিএমএম) আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।