'বাবুল আক্তারের পরিকল্পনায় এসআই আকরাম হত্যা’
প্রকাশ | ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ২১:৩৩ | আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ২২:০৯
দুই বছর আগে ‘দুর্ঘটনায়’ নিহত হলেও মূলতঃ এসআই আকরাম হোসেন লিটনকে ‘পরকীয়ার’ জন্য সাবেক এসপি বাবুল আক্তারের পরিকল্পনায় হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ করেছেন আকরামের স্বজনরা।
শুক্রবার ঝিনাইদহ প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এসআই আকরামের পাঁচ বোন এই অভিযোগ করেন।
আকরামের সেজো বোন জান্নাত আরা পারভীন রিনি বলেন, "আকরামের স্ত্রী ঝিনাইদহের মেয়ে বনানী বিনতে বসির বর্ণির সঙ্গে বাবুলের ‘সম্পর্ক’ ছিল। খুলনায় বাবুলের বাবা পুলিশে ও বর্ণির বাবা বিআরডিবিতে চাকরি করতেন। পাশাপাশি বাসায় থাকার সুবাদে বাবুল-বর্ণির মধ্যে সম্পর্ক তৈরি হয়"।
২০০৫ সালের ১৩ জানুয়ারি একই জেলার আকরামের সঙ্গে বিয়ে হয় বর্ণির। অন্যদিকে পারিবারিকভাবে সাবেক পুলিশ পরিদর্শক মোশাররফ হোসেনের মেয়ে মাহমুদা আক্তার মিতুর সঙ্গে বিয়ে হয় বাবুল আক্তারের।
রিনি অভিযোগ করেন, "বিয়ের পরও বাবুলের সঙ্গে বর্ণির যোগাযোগ ছিল। আকরাম জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে থাকার সময় তাদের প্রায়ই কথা হত। ২০১৪ সালের ২৮ ডিসেম্বর আকরামকে হত্যার পরিকল্পনা করে বাবুল আক্তার ও বর্ণি। এ কারণে আকরামকে যমুনা সেতু হয়ে ঝিনাইদহ আসার পরামর্শ দেয় বর্ণি। পথে সন্ত্রাসীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে তার মাথায় আঘাত করে। পরে ঝিনাইদহের শৈলকূপা উপজেলার বড়দাহ থেকে তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। আকরামের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ফরিদপুর ও পরে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়। ঢাকায় চিকিৎসা নিয়ে আকরামের অবস্থার উন্নতি হচ্ছিল, কিন্তু বর্ণি স্যুপে বিষ মিশিয়ে খাওয়ালে ২০১৫ সালের ১৩ জানুয়ারি আকরাম মারা যান"।
আকরামের ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকরা তার মাথায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতের জখমের কথা বলেছিলেন দাবি করে তিনি বলেন, “তখনই সন্দেহ হয় এটি হত্যা। ওই ঘটনায় পুলিশ মামলা নেয়নি। এছাড়া তৎকালীন ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার আলতাফ হোসেনের নিকট অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাইনি”।
সংবাদ সম্মেলনে রিনি ছাড়াও আকরামের বোন রেহানা আলম গিনি, ফেরদৌস আরা চিনি, শাহনাজ পারভীন রিপা ও শামীমা নাসরীন মুক্তি উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে তারা সবাই ভাইয়ের মৃত্যুর তদন্ত এবং ‘দোষীদের’ বিচারের দাবি জানান।
এদিকে গত ৭ ফেব্রুয়ারি মাগুরা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এসআই আকরামের স্ত্রী বনানী বিনতে বশির বর্ণি বলেন, তার শ্বশুরবাড়ির সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করা এবং ঢাকার মগবাজারে তার মেয়ের নামে কেনা তার স্বামীর ফ্ল্যাট দখল করতেই ননদরা এই মিথ্যা অভিযোগ তুলেছেন। ২০১৫ সালে ১৩ জানুয়ারি তার স্বামী ‘সড়ক দুর্ঘটনায়’ নিহত হওয়ার পর ননদ জান্নাত আরা রিমি প্রথম এক ফুপাতো ভাইকে জড়িয়ে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন। ওই সময়ও মাগুরা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে প্রতিবাদ করেছিলেন বলে জানান তিনি। ননদ জান্নাত আরা রিমি এখন বাবুল আক্তারকে জড়িয়ে একই ধরনের অভিযোগ আনছেন এবং এটা সম্পূর্ণ 'মিথ্যা, বানোয়াট ও কাল্পনিক' বলে দাবি করেন বর্ণি।
বর্ণির মা শিরিনা বশির বলেন, “সড়ক দুর্ঘটনায় আমার মেয়েজামাই পুলিশ কর্মকর্তা আকরাম হোসেনের মৃত্যুর পর তার বোন জান্নাত নানাভাবে আমার মেয়েকে হয়রানি করছে। ফুপাতো ভাই সাদিমুল ইসলাম মুনের সঙ্গে সম্পর্কের অপবাদ দিয়েছে। এমনকি জামাই সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হলেও পরকীয়ার কারণে বর্ণি তাকে হত্যা করিয়েছে বলে মিথ্যা অভিযোগ এনেছে। যে কারণে পুলিশ বিভাগে স্বামীর প্রাপ্য টাকা সে পায়নি"।
বাবুল আক্তারের পরিবারের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেন শিরিনা। বাবুল আক্তারকে তারা কোনোদিন দেখেননি বলেও দাবি করেন তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাগুরা শহরের বসবাসকারী এসপি বাবুল আক্তারের ছোট ভাই অ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমান লাবু বলেন, "বর্ণি নামে কোনো মেয়ে কখনও আমাদের বাড়িতে থাকেনি। আমার পরিবারের কেউ তার চেনাজানাও নয়"।
তবে বর্ণি ও বাবুলের দুই স্বজন দুই পরিবারকে না চেনার কথা বললেও ২০১৫ সালে মাগুরা প্রেস ক্লাবে বর্ণি যে সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন সেখানে বাবুল আক্তারের বাবা আব্দুল ওয়াদুদ উপস্থিত ছিলেন।
ওই সংবাদ সম্মেলনের একটি ছবি সাংবাদিকদের কাছে থাকার কথা জানালে বর্ণি বলেন, মাগুরার মহম্মদপুরে তার বাবা চাকরি করতেন। ওই সময় বাবুল আক্তারের বাবার সঙ্গে তার বাবার পরিচয় হয়। দুই পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক না থাকার কথা ভুলে বলা হয়েছে।
তবে বাবুলের শ্বশুর মোশাররফ হোসেন বলেছেন, তার মেয়ে হত্যার সঙ্গে এসআই আকরামের ঘটনার যোগসূত্র থাকতে পারে। ওই ঘটনারও তদন্ত চান তিনি।
উল্লেখ্য, গত বছরের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রামের ও আর নিজাম রোডে সন্তানের সামনে গুলি চালিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয় বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতুকে।
পুলিশ প্রথমে এ হত্যাকাণ্ডের জন্য জঙ্গিদের সন্দেহ করলেও কয়েকজনকে গ্রেপ্তারের পর ‘সব বিষয়’ বিবেচনায় নিয়ে তদন্তের কথা জানায়।
এর মধ্যে এক রাতে ঢাকায় শ্বশুরের বাসা থেকে বাবুল আক্তারকে তুলে নিয়ে ডিবি কার্যালয়ে টানা ১৪ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর ছাড়া হয়। জিজ্ঞাসাবাদে বাবুল পুলিশের চাকরি থেকে অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেছিলেন বলে খবর ছড়ালেও পুলিশের পক্ষ থেকে তা নিশ্চিত করা হয়নি। এর কয়েক মাস পরে বাবুল আক্তারের অব্যাহতিপত্র গ্রহণের কথা জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।