আইনের বেড়াজালে বাঁধা পড়েছে মায়ের লাশ
প্রকাশ | ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৯:৪৮
মাকে বাঁচানো যায়নি। কিন্তু সেই শোক কাটার আগেই মায়ের লাশের সঠিক সৎকার করতে পারবেন কিনা এ নিয়েই এখন সন্তানদের দুশ্চিন্তা। একটি ভুল ঠিকানার জের ধরে নিজের মায়ের লাশ নিয়ে দেশে ফিরতে পারছেন না বাংলাদেশের এক তরুণ।
দীর্ঘদিন ধরে ফুসফুসের রোগে ভুগছিলেন বাংলাদেশের দিনাজপুর সদর উপজেলার বরাইপুর গ্রামের বিমলচন্দ্র সরকারের স্ত্রী কনিকা রানী (৪৩)। গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর জমি বেচে দেড় লাখ টাকাসহ ছোট ছেলে টোকন মাকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য বৈধভাবে ভারতের বেঙ্গালুরু যান। কদিন আগে চিকিৎসার জন্য আরও টাকার প্রয়োজনে পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বালুরঘাটে এক দূর সম্পর্কের আত্মীয়ের বাসায় মাকে রেখে দেশে আসেন টোকন।
বিমলচন্দ্র জানান, দেশে ফিরে ধারদেনা করে আরও দেড় লাখ টাকা নিয়ে ১২ ফেব্রুয়ারি টোকন ভারতে ফিরে গিয়ে দেখেন মায়ের মুমূর্ষু অবস্থা। তড়িঘড়ি করে তাকে নেওয়া হয় মালদহ হাসপাতালে। কিন্তু তখনই বাধে বিপত্তি। অ্যাম্বুলেন্স চালক ভুল করে কনিকার ঠিকানা লেখেন বালুরঘাটের। ভারতে ছয় দিন আগে মারা যান কনিকা রানী। কিন্তু ঠিকানা বালুরঘাট লেখার কারণে হিলি স্থলবন্দরের ভারতীয় ইমিগ্রেশন পুলিশ লাশ বাংলাদেশে আনতে দেয়নি।
এরপর মায়ের লাশ নিয়ে টোকন ভারতের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার ডিসি সঞ্জয় বসুর কাছে যান। এরপরের আর কিছু জানেন না বিমলচন্দ্র কিংবা তার পরিবারের কেউ।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে বিমলচন্দ্র বলেন, “একদিকে স্বজন হারানোর বেদনা, অন্যদিকে লাশ আদৌ পাব কি না জানি না। প্রিয়জনের লাশের সৎকার হবে কিনা এ নিয়ে আমরা এখন নির্ঘুম এক দুঃসহ জীবন যাপন করছি।”
নিহত কনিকার বড় ছেলে খোকন বলেন, “মায়ের লাশ দেশে ফেরত আনার জন্য ভারতে ছোট ভাই বিভিন্ন অফিসে ছুটোছুটি করছে। এখন কোথায় কী করছে জানি না। আমরা এখন কী করব তাও জানি না।”
কনিকা রানীর লাশ দ্রুত দেশে আনার জন্য শোকাহত পরিবারের স্বজন ও প্রতিবেশীরা দুই দেশের সরকারের প্রতিই কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।