সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড

৫ বছরেও উদঘাটন হয়নি রহস্য

প্রকাশ | ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১২:২৪

অনলাইন ডেস্ক

এক-দুই করে দেখতে দেখতে পেরিয়ে গেছে পাঁচটি বছর। তারপরও শেষ হয়নি সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার তদন্ত। সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়ার পরও তদন্ত কাজে তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। পাঁচ বছর পরেও অজানা রয়ে গেছে হত্যার কারণ।

এদিকে আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের তদন্ত অগ্রগতি সম্পর্কে জানা নেই বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য এ পর্যন্ত আদালতের ১৫৭টি ধার্য তারিখ পার হয়েছে। সর্বশেষ গত ৮ ফেব্রুয়ারি এ মামলার প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য ছিল। কিন্তু ওইদিন র‌্যাব তা দাখিল করতে পারেনি। আদালত আগামি ২১ মার্চ তদন্তকারী কর্মকর্তাকে ‘তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন’ দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।

সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের তদন্তের বিষয়ে জানতে চাইলে র‌্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেন, ‘তদন্তের কোনও সীমারেখা নেই। কেউ কোনও দিন বলতে পারে না যে তদন্ত কবে নাগাদ শেষ হবে। তদন্ত কার্যক্রম আন্তরিকতার সঙ্গে এবং আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী চলছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এটি একটি স্পর্শকাতর মামলা। তদন্তকারী কর্মকর্তা যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েই মামলাটি তদন্ত করছেন এবং আদালতে অগ্রগতি প্রতিবেদন পেশ করছেন।’

২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর ফার্মগেটে পশ্চিম রাজাবাজারে নিজ ভাড়া বাসায় খুন হন সাগর সরওয়ার ও তার স্ত্রী মেহেরুন রুনি। হত্যাকাণ্ডের পর রুনির ভাই নওশের আলম রোমান বাদী হয়ে শেরেবাংলা নগর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় সারা দেশের সাংবাদিক থেকে শুরু করে পেশাজীবী সকলেই এর প্রতিবাদ গ্রেপ্তারের দাবি করে আসছেন।

তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আসামিদের গ্রেপ্তার করা হবে বলে ঘোষণাও দিলেও বাস্তবে এর কোনো প্রতিফলন ঘটেনি।

সাংবাদিক দম্পতি হত্যার মামলার তদন্ত প্রথমে শেরেবাংলা নগর থানার এসআই জহুরুল ইসলাম ও পরে গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক রবিউল আলম করেন। হাইকোর্টের নির্দেশে ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল মামলাটি র‌্যাবের কাছে স্থানান্তর করা হয়। র‌্যাবের সিনিয়র এএসপি জাফর উল্লাহ প্রথমে মামলাটি তদন্ত করেন। পরে তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন করা হয়। 

হত্যাকাণ্ডের আট মাস পর ২০১২ সালের ১০ অক্টোবর রাজধানীর বনানী থানায় হত্যা ও ডাকাতি মামলায় আটক পাঁচ আসামিকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তারা হচ্ছেন নিহত দম্পতির পারিবারিক বন্ধু তানভীর রহমান এবং তাদের বাসার দারোয়ান পলাশ রুদ্র পালকে। পরে আরেক দারোয়ান এনাম আহমেদ ওরফে হুমায়ুন কবিরকে গ্রেপ্তার করা হয়। মামলার অগ্রগতি বলতে এটুকুই। আসামিদের মধ্যে তানভীর রহমান এবং পলাশ রুদ্র পাল জামিনে রয়েছেন।

র‌্যাব সন্দেহভাজন মোট ১৬ জনের ডিএনএ নমুনা পরীক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাঠায়। আলামত হিসেবে জব্দ করে ছুরি ও পোশাকের নমুনা। চাঞ্চল্যকর এই হত্যারহস্য উন্মোচনে চেষ্টার কোনো ত্রুটি নেই বলে র‌্যাবের পক্ষ থেকে দাবি জানানো হয়।

জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা র‌্যাব সদর দপ্তরের সহকারী পুলিশ সুপার মহিউদ্দিন আহম্মদ বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র থেকে ডিএনএ পরীক্ষার সব রিপোর্ট পাওয়া গেছে। এসব ব্যাপারে কিছু নির্দেশনা আছে। সে অনুযায়ী তদন্ত চলছে। বিভিন্ন গ্রিলকাটা চোরদের তথ্য সংগ্রহ ও তা পর্যালোচনাও করা হচ্ছে। এ ছাড়া খোয়া যাওয়া ল্যাপটপ ও মোবাইল যদি কখনো চালু করা হয় তাহলে আমরা তার লোকেশন জানতে পারব এবং খুনিদের ধরতে সক্ষম হব। এ জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা এরই মধ্যে নেওয়া হয়েছে।’

কর্মসূচী
শনিবার আজিমপুর কবরস্থানে সাগর-রুনির কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন সাংবাদিকরা। সাগর-রুনি দম্পতির একমাত্র সন্তান মাহির সরওয়ার মেঘ ও তাদের স্বজনরাও কবরস্থানে যাবেন জিয়ারত ও ফুল দিয়ে স্মরণ করতে। 

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিচার ও খুনিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে প্রতিবাদ সমাবেশ করবে। সেগুনবাগিচায় ডিআরইউ কার্যালয়ের সামনে এ সমাবেশে যোগ দিতে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন সংগঠনটির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশা ও সাধারণ সম্পাদক মুরসালিন নোমানী।