‘যুদ্ধাপরাধের বিচার করে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করেছি’

প্রকাশ | ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৩:০২

অনলাইন ডেস্ক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাঙালির কোনো অর্জনই রক্তবিহীন হয়নি, মায়ের ভাষাও আমাদের রক্ত দিয়ে অর্জন করতে হয়েছে। রক্ত দিয়েই বাঙালির স্বাধীনতা অর্জন। 

তিনি বলেন, ভাষার মাসের প্রত্যয় হচ্ছে, কোনো সন্ত্রাস বা জঙ্গিবাদের ঠাঁই বাংলাদেশে হবে না। বাংলাদেশ হবে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ দেশ। 

১ ফেব্রুয়ারি অমর একুশে গ্রন্থমেলা ও আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলনের উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, রক্তের বিনিময়েই সব অর্জন। মহান স্বাধীনতা লাখো শহীদের রক্ত দিয়ে অর্জন করতে হয়েছে। আবার এই বাঙালিই বঙ্গবন্ধুর রক্ত নিয়ে খুনির কালিমা পেয়েছে। আমরা বঙ্গবন্ধুর খুনি এবং যুদ্ধাপরাধের বিচার করে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করেছি। এর মধ্য দিয়ে বাঙালির আত্মমর্যাদা বিশ্বে বহুগুণ বেড়েছে।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই বাংলাভাষা বিশ্বে অধিক মর্যাদা লাভ করে। ১৯৯৯ সালে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা করে বিশ্ববাসী আমাদের ভাষা শহীদদের বিশেষ মর্যাদা দিয়েছে। এর পেছনে কানাডা প্রবাসী সালাম এবং রফিক নামে দুই বাঙালির অবদানের কথাও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন তো ডিজিটাল সময়। একসময় ছেলে যখন ছুটিতে বাড়ি আসতো তখন স্যুটকেসের কাপড়ের পাশে বেশিরভাগ অংশ জুড়ে থাকতো বই। ছুটি কাটিয়ে যাওয়ার সময় বইগুলো রেখে যেতো। সেগুলো অন্যদের পড়ার জন্য দেওয়া হতো। এখন সবাই আসে হাতে ডিজটাল যন্ত্র নিয়ে। এখন এই যন্ত্রটার মধ্যেই পুরো একটা লাইব্রেরি। ছাপানো বই পড়ার মাঝে আনন্দ আছে, সেটা ডিজটাল যন্ত্রের মধ্যে নেই। তাই আমি চাই, নতুন নতুন বই ছাপা হোক।’

সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। বক্তব্য রাখেন- চীনের প্রখ্যাত গবেষক ও রবীন্দ্র-অনুবাদক ডং ইউ চেন, অস্ট্রিয়ার মেনফ্রেড কোবো, পুয়ের্তোরিকোর লুস মারিয়া লোপেজ, ভারতের চিন্ময় গুহ। প্রকাশকদের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন মফিদুল হক, শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন সংস্কৃতি মন্ত্রনালয়ের সচিব বেগম আকতারী মমতাজ।

গ্রন্থমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার দেওয়া হয়। এবারের বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন- কবিতায় আবু হাসান শাহরিয়ার, কথাসাহিত্যে- শাহাদুজ্জামান, প্রবন্ধ ও গবেষণায়- মোরশেদ শফিউল হাসান, অনুবাদ সাহিত্যে- ড. নিয়াজ জামান, মুক্তিযুদ্ধ সাহিত্যে- এমএ হাসান, আত্মজীবনী/স্মৃতিকথা/ভ্রমণকাহিনীতে- নূরজাহান বোস এবং শিশুসাহিত্যে- রাশেদ রউফ। অনুষ্ঠানে পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখকদের হাতে এক লাখ টাকার চেক, ক্রেস্ট ও সম্মাননাপত্র তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার এবং বাংলা একাডেমির পরিচালক শাহিদা খাতুন।

উল্লেখ্য, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করার কথা ছিলো বাংলা একাডেমির সভাপতি ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের। তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর প্রধানমন্ত্রী মেলা পরিদর্শনে করেন।

১৯৫৫ সালে যাত্রা শুরু করে বাংলা একাডেমি। এরপরে ১৯৭২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি চিত্ত রঞ্জন সাহা সর্বপ্রথম গ্রন্থমেলা শুরু করেন। যা ১৯৮৪ সালে ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’ নামে প্রকাশ পায়। এরপর থেকেই বাঙালির প্রাণের মেলা হিসেবে এটি স্বীকৃতি লাভ করে।