'অসহায়, বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়ান'
প্রকাশ | ২৩ জানুয়ারি ২০১৭, ১৮:৫৯ | আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০১৭, ১৯:১২
পুলিশ বাহিনীকে দেশের অসহায় ও বিপন্ন মানুষের সেবা করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার জাতীয় পুলিশ সপ্তাহের উদ্বোধন করে এই আহ্বান জানান তিনি।
সোমবার রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে পুলিশ সপ্তাহের উদ্বোধন করে ১৩২ জনকে বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম) এবং রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম) পরিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী। এর মধ্যে সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ কাজের জন্য ২৬ জনকে ২০১৬ সালের বিপিএম এবং ৪১ জনকে পিপিএম দেওয়া হয়। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ মামলার রহস্য উদঘাটন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, দক্ষতা, কর্তব্যনিষ্ঠা, সততা ও শৃঙ্খলামূলক আচরণের জন্য ২৪ জন বিপিএম (সেবা) এবং ৪১ জন পিপিএম (সেবা) পেয়েছেন এবার।
পদকপ্রাপ্ত সবাইকে অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এত বিপুল সংখ্যক পদক অতীতে কখনো বিতরণ করা হয়নি। আপনরা এটা পেয়েছেন আপনাদের কাজের দক্ষতা ও যোগত্যা প্রমাণ করতে পেরেছেন এবং জনগণকে নিরাপত্তা দিতে পেরেছেন বলে।”
এবারের পুলিশ সপ্তাহের প্রতিপাদ্য ‘জঙ্গি মাদকের প্রতিকার, বাংলাদেশ পুলিশের অঙ্গীকার’। প্রধানমন্ত্রী সকালে রাজারবাগে পৌঁছালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল ও পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক তাকে স্বাগত জানান। প্রধানমন্ত্রীকে রাষ্ট্রীয় সালাম জানানোর পর তিনি একটি খোলা গাড়িতে প্যারেড পরিদর্শন করেন।পুলিশের মহাপরিদর্শক এবং প্যারেড কমান্ডার চাঁদপুরের পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন।
প্যারেড পরিদর্শনের পর প্রধানমন্ত্রী সালাম গ্রহণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যের শুরুতেই দৃষ্টিনন্দন ও সুশৃঙ্খল প্যারেডের জন্য পুলিশ সদস্যদের অভিনন্দন জানান।
পুলিশ বাহিনীর উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা বলেন, “ঔপনিবেশিক আমলের ধ্যান-ধারণার পরিবর্তে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সাথে একাত্ম হয়ে পুলিশের সেবা আরও জনবান্ধব করতে হবে।”
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বক্তৃতা থেকে উদ্ধৃত করে শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের মহান নেতা জাতির পিতা তার ভাষণে যে কথা বলেছিলেন, ‘এই দেশ স্বাধীন দেশ। আমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক। আমাদের পুলিশ বাহিনী স্বাধীন দেশের পুলিশ বাহিনী। কাজেই, তাদের প্রতিটি ক্ষেত্রে দায়িত্ববান থাকতে হবে, জনসেবা করার মানসিকতা নিয়ে’।”
বাংলাদেশ পুলিশকে দেশের শান্তি, নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলার প্রতীক হিসবে বর্ণনা করে তিনি বলেন, "অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা প্রদান, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও মানবাধিকার রক্ষার দায়িত্বে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিটি সদস্য। জঙ্গিবাদের মূলোৎপাটনে ২০১৬ সালে পুলিশের কার্যকর পদক্ষেপ দেশকে বড় ধরনের নাশকতা ও অস্থিতিশীলতার হাত থেকে রক্ষা করেছে।”
পুলিশ সদস্যরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাহসিকতা, দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের মোকাবিলা করে জনমনে ‘আস্থা ও নিরাপত্তাবোধ সৃষ্টিতে’ সক্ষম হয়েছে এবং বহির্বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
গুলশানের হলি আর্টিজান ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া জঙ্গি হামলা মোকাবিলায় চার পুলিশ সদস্যের নিহত হওয়ার কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “নির্ভীক এই চার পুলিশ সদস্যের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অসংখ্য প্রাণ রক্ষা পেয়েছে।”
আশুলিয়ার আশকোনায় এবং মিরপুরের কল্যাণপুরে জঙ্গিবিরোধী বিশেষ অভিযান সফলভাবে পরিচালিত হয়েছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, পুলিশ জঙ্গি হামলার ‘মাস্টারমাইন্ড, অস্ত্রদাতা, প্রশিক্ষক এবং আশ্রয়দাতাদের’ বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে।
২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন পরিস্থিতি মোকাবেলায় পুলিশের ২১ জন সদস্য জীবন দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী তাদের আত্মত্যাগ শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশ একটি আত্মমর্যাদাশীল এবং আত্মনির্ভরশীল দেশ হিসাবে বিশ্বের বুকে যখন প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। তখন দেশি-বিদেশি একটি চক্র বাংলাদেশের এ অগ্রযাত্রাকে বানচালের অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। গণতান্ত্রিক পথে মানুষের মন জয় করতে ব্যর্থ হয়ে এরা সন্ত্রাসের পথ বেছে নিয়েছে।”
যুবক-কিশোরদের ‘ধর্মের নামে বিভ্রান্ত করে’ জঙ্গিবাদের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “ধর্মের অপব্যাখ্যা করে তাদের হাতে অস্ত্র তুলে দিচ্ছে। সহিংস আক্রমণের মাধ্যমে মানুষ হত্যার মত বর্বরোচিত কর্মকাণ্ডে প্ররোচিত করছে। আত্মঘাতি করছে।”
তিনি বলেন, “২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে গণতন্ত্রবিরোধী, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী, জনবিচ্ছিন্ন সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী বিএনপি-জামাত শিবির চক্র দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টির চেষ্টা চালায়। তাদের সহিংসতা, নাশকতা, জ্বালাও-পোড়াও, নিরীহ মানুষ হত্যা ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংসের চেষ্টা পুলিশ রুখে দিয়েছে।”
শান্তিময় ও নিরাপদ সমাজ গঠনে কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রমকে আরও জোরদার করার ওপর জোর দেন প্রধানমন্ত্রী।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ বিভিন্ন নির্বাচন ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে’ সম্পন্ন করতে পুলিশ সদস্যরা ‘অত্যন্ত দক্ষতা, পেশাদারিত্ব ও নিষ্ঠার সঙ্গে’ দায়িত্ব পালন করেছেন বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “জনগণের ভোটের অধিকার রক্ষা করেছেন। এজন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।”
প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য দেওয়ার পর প্যারেড কমান্ডারসহ কুচকাওয়াজে অংশ নেওয়া শিল্পাঞ্চল, আর্মড পুলিশ ব্যাটিলিয়ন, মেট্রোপিলিটন পুলিশ, র্যাব, এসপিবিএন, যৌথ রেঞ্জ, বিশেষায়িত পুলিশ, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী, নারী সদস্য, ট্রাফিক পুলিশ কন্টিনজেন্টের অধিনায়কদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। পরে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে পুলিশ দিবসের কেক কাটেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী এ অনুষ্ঠানে পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, সিআইডির ফরেনসিক ডিএনএ ল্যাবরেটরি, সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেন্টার, সাইবার ট্রেইনিং সেন্টার এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও পুলিশ মুক্তিযোদ্ধাদের ভাস্কর্য ‘রাজারবাগ-৭১’ এর উদ্বোধন করেন। পরে তিনি পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতির (পুনাক) স্টল ঘুরে দেখেন।