বাল্য বিবাহ নিরোধ আইন

বিশেষ বিধান বাতিলের দাবিতে সমাবেশ অনুষ্ঠিত

প্রকাশ | ২০ জানুয়ারি ২০১৭, ২২:২৭

অনলাইন ডেস্ক

গত ৮ ডিসেম্বর ২০১৬, “বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ২০১৬’’ শীর্ষক বিলটি জাতীয় সংসদে উত্থাপন করা হয়। প্রায় ৯০ বছরের পুরনো আইনটি যুগোপযোগী করার উদ্যোগকে সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির পক্ষ থেকে স্বাগত জানানো হয়। তবে এই আইনের ১৯ ধারার বিশেষ বিধান আইনে বিশেষ প্রেক্ষাপটে ‘সর্বোত্তম স্বার্থে’ আদালতের নির্দেশে এবং মা-বাবার সম্মতিতে যে কোন অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েশিশুর বিয়ের বিধানকে প্রগতিশীল বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ বলে দাবি করে সংগঠনটি। ‘‘বাল্য বিবাহ নিরোধ আইনে বিশেষ বিধান বাতিলের দাবিতে’’ ১৮ জানুয়ারি ২০১৭ বিকাল ৩ টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বলা হয়, এই বিশেষ বিধান রেখে আইনটি জাতীয় সংসদে পাস করা হলে তা শিশু অধিকার আই্ন ও আন্তর্জাতিক সনদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে। কারণ জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক শিশু অধিকার সনদ (সিআরসি) ও বাংলাদেশের প্রচলিত শিশু আইনে বয়স ১৮ বছরের কম হলে তাকে শিশু বলা হয়েছে। আর তাই । 

উক্ত সমাবেশে সভপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আয়শা খানম। সভায় প্রস্তাবিত বাল্যবিয়ে নিরোধ আইন ২০১৬-এর বিশেষ বিধান বাতিলের দাবিতে প্রস্তাব পাঠ করেন 'উই ক্যান' ক্যাম্পেইনের ন্যাশনাল কো অর্ডিনেটর জিনাত আরা হক। সভাটি সঞ্চালনা করেন ব্র্যাকের ম্যানেজার কমিউনিকেশন চিররঞ্জন সরকার। সভায় ৬৯টি নারী, মানবাধিকার ও উন্নয়ন সংগঠনের প্লাটফরম এর বাইরেও চাইল্ড রাইটস অ্যাডভোকিসি কোয়ালিশন, গার্লস নট ব্রাইডস বাংলাদেশ, সিটিজেন ইনিসিয়েটিভস অন ডমেস্টিক ভায়োলেন্স এবং উই ক্যাম্পেইন এই অ্যালায়েন্স সমূহ অংশগ্রহণ করে।
 
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়শা খানম বলেন, "নারী আজ রাষ্ট্রে চালকের ভূমিকা থেকে শুরু করে গোটা দেশকে অগ্রসর করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখেছে। যার স্বীকৃতি গোটা বিশ্বে বাংলাদেশ আজ পাচ্ছে। কাজেই রাষ্ট্র্র, সরকার বিশেষ বিধান রেখে নারীর বিয়ের বয়স ১৮ রাখার কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। নারী আন্দোলন মনে করে আন্তর্জাতিক যে নীতিগুলো আইনগুলো আছে সেখানে কোন ধরণের শর্ত, কোন ধরনের বিধান নেই। কাজেই নারী আন্দোলনের শক্তির বিষয় আজ আমরা এখানে এক সুরে কথা বলবো ১৮ এর আগে কোন বিয়ে নয়। মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দানকারী একটি শক্তি আজ দেশ পরিচালনা করছেন। কাজেই তাদের কাছে আমাদের প্রত্যাশা তারা কখনোই এমন সিদ্ধান্ত নিবেন না যা নারীর জন্য হুমকি স্বরূপ"।

বক্তারা বলেন, বাল্য বিবাহ নারীর জীবনে অন্ধকার বয়ে আনবে। বাল্য বিবাহের ফলে শিশুরা যৌন নির্যাতনসহ নানা ধরনের নির্যাতনে সম্মুখিন হয়। 

তারা আরো বলেন, আইনের পরিবর্তন প্রয়োজন চাহিদার ভিত্তিতে। আজকের এই জমায়েত প্রমাণ করে বাল্য বিবাহ আইনের বিশেষ বিধান রাখার কোন অর্থ নেই। ১৮ বছরের নিচে একটি মেয়েকে বিয়ে দিলে তার কর্ম জীবনকে গড়ে তোলার কোন সুযোগ সে পাবে না। বাল্য বিবাহ হলে আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক প্রভাব পড়বে। এই সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা অনেক বেশি। কাজেই নারী উন্নয়ন এবং বাল্য বিবাহ একসাথে চলতে পারে না। 

সভায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক এ্যাড. সালমা আলী, বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবীর, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, উইমেন ফর উইমেন এবং নির্বাহী পরিচালক দীপ্ত-এ ফাউন্ডেশন ফর জেন্ডার এন্ড ডেভেলপমেন্টের সভাপতি জাকিয়া কে হাসান, হাঙ্গার প্রজেক্টোর কান্ট্রি ডিরেক্টার বদিউল আলম মজুমদার, এ্যাকশন এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবীর, গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী, 'নিজেরা করি'র সমন্বয়ক খুশি কবির, স্টেপস টুয়ার্ডস ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক রঞ্জন কর্মকার, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সিনিয়র ডেপুটি ডিরেক্টর এ্যাড. রওশন জাহান পারভীন, কন্যাশিশু এডভোকেসি ফোরাম নাছিমা আক্তার জলি, জাতীয় নারী জোটের আহ্বায়ক আফরোজা হক রীনা এসিড সারভাইভার্স ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সেলিনা আহমেদ, কর্মজীবী নারীর সানজিদা সুলতানা, অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের ফারাহ কবির, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি চঞ্চনা চাকমা, আওয়াজ ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদিকা নাজমা আক্তার, এডাবের  পরিচালক এ.কে.এম জসীমউদ্দীন, নারী মুক্তি সংসদের সভাপতি হাজেরা সুলতানা এম.পি, জাতীয় প্রতিবন্ধী ফোরামর মর্জিনা আহমেদ, দলিত নারী ফোরামের সভাপতি মনি রানী দাশ, নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি নাসিমুন আরা হক। এছাড়া সভায় কেয়ার, ব্র্যাক, ব্লাষ্ট এবং সেভ দ্য চিলড্রেনের পক্ষ থেকে বক্তারা বক্তব্য রাখেন।