৭ মাসের ব্যবধানে এক মায়ের ২ শিশুই ধর্ষণ

প্রকাশ | ১৮ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৫:০০ | আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৬:৩৭

অনলাইন ডেস্ক

সাত মাস আগে ধর্ষণের শিকার হয়েছিল চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার লিপি বেগমের (ছদ্মনাম) ৯ বছরের শিশুকন্যা। এবার তাঁরই ৭ বছর বয়সের আরেক শিশুকন্যা ধর্ষণের শিকারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। 

উপজেলার দারশাতুলপাই গ্রামে বুধবার (১৪ ডিসেম্বর) বিকেলে এ ঘটনা ঘটে।

বৃহস্পতিবার (১৫ ডিসেম্বর) চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য শিশুটিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে সাবেক এক ইউপি মেম্বারকে আটক করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (১৫ ডিসেম্বর) বিকেলে পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়েছেন। 

কচুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম এস ইকবাল  শুক্রবার (১৬ ডিসেম্বর) জানান, মেয়ের বাবা মাসহ পরিবারের সবাই  ঢাকায় আছেন। চিকিৎসার পর তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অ্যাকশনে যাবে পুলিশ। আটক প্রাক্তন মেম্বারকে জেল হাজতে পাঠানো হয়। 
অল্প ক’দিন আগের ঘটনায় কান্না না থামতেই আবারও ঘটল একই ঘটনা। বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে আলাপকালে লিপি বেগম প্রশ্ন ছুড়ে দেন, হেরা কেমন পুরুষ? হেগো হাত থেকে সাত বছরের মেয়ে রক্ষা পায় না? এহন পুরুষ মানুষ দেখলেই আমার ঘেন্না আসে। হেরা এত লোভী, আমার নিষ্পাপ মেয়েদের জীবন ধ্বংস কইরা দিছে। এলাকায় মানুষ আমারে মন্দ কয়। যারা আমার ক্ষতি করলো হেগো বিচার কে করব?
চাঁদপুর সদর হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ডের ১৮ নং বেডে বসে ধর্ষণের শিকার মেয়েটির মা বিলাপ করছেন আর এসব কথা বলছেন। মায়ের পাশেই শুয়ে আছে ধর্ষণের শিকার মেয়ে শিশুটি। কিছু জিজ্ঞাসা করলেই ভয়ে জড়সড় হয়ে পড়ে। লোকজন দেখলেই ভয়ে মুখ লুকায়।

শিশুটির বাবা  জানান, বুধবার স্কুলে থেকে বাড়ি আসার পর অন্য শিশুদের সঙ্গে পাশের বাড়িতে খেলতে যায় তার মেয়ে। ফিরতে দেরি দেখে তারা মেয়েটিকে বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করতে থাকে। সন্ধ্যার আগে রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে বাড়ির কাছেই মুমূর্ষু অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন তারা। সেখান থেকে এনে তাকে কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসক মাইনুল কুদ্দুস শিশুটিকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। হতদরিদ্র পিতা আর্থিক অনটনের কারণে তাকে চাঁদপুর নিতে পারেন না, বাড়িতে নিয়ে আসেন।

রাতে বিষয়টি পুলিশ সুপার শামসুন্নাহারকে জানালে তাৎক্ষণিকভাবে তিনি শিশুটিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য কচুয়া থানা পুলিশকে নির্দেশ দেন। রাত সাড়ে ১১টায় কচুয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বাড়ি থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে এনে ভর্তি করান।

চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের গাইনি চিকিৎসক তাবন্দা আক্তার বলেন, ‘শিশুটিকে অ্যানেসথেসিয়া করে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তাঁর অনেক ক্ষত হয়েছে ও রক্তক্ষরণ হচ্ছে।

এর প্রায় ৮ মাস আগে এই শিশুর বড় বোন চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী  একইভাবে ধর্ষণের শিকার হয়। ওই ঘটনায় মামলা দায়ের করা হলে পুলিশ ধর্ষণকারী একই গ্রামের বাচ্চু ঢালীর ছেলে সুমন ঢালীকে আটক করে। বর্তমানে ধর্ষক সুমন জেলহাজতে রয়েছে। ওই মামলা তুলে নেওয়ার জন্য ওই চক্রটি ধর্ষিতা দুই বোনের পরিবারকে নানাভাবে হুমকি দিয়ে আসছে বলে দুই শিশুর বাবা-মা জানান।

চাঁদপুরের পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার মেয়েটিকে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে ধর্ষককের গ্রেপ্তারের বিষয়ে আশ্বস্ত করে বলেন, ভিকটিম আসামিকে চিহ্নিত করতে না পারলেও আমরা তার খোঁজ অবশ্যই পেয়ে যাব। ঘটনাটি জানার পরই আমাদের গোয়েন্দা দল কাজ শুরু করেছে। এছাড়া আমি নিজেও ওই গ্রামে ঘটনাস্থলে গিয়েছি এবং খোঁজখবর নিচ্ছি।

শামসুন্নাহার আরও জানান, যাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তিনি একজন সাবেক ইউপি সদস্য। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে এ ঘটনায় জড়িত থাকতে পারেন। মূল আসামিকে ধরতে প্রয়োজনে ওই গ্রামের সব পুরুষের ডিএনএ টেস্ট করানো হবে।

কচুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ কে এম এস ইকবাল বলেন, মেয়ের বাবা বাদী হয়ে কয়েকজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। এ মামলার এজাহারভুক্ত আসামি হিসেবে স্থানীয় তাজুল ইসলাম নামে পঞ্চাষোর্ধ একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।