চিকিৎসার টাকা নেই বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা খঞ্জনীর
প্রকাশ | ১৭ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৯:৫০
এই বছরেই মুক্তিযোদ্ধা খেতাব পেয়েছেন কুমিল্লার বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা আফিয়া খাতুন খঞ্জনী। এতে খুশি কুমিল্লার মুক্তিযোদ্ধারা। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের পর থেকেই বিভিন্ন কারণে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলা খঞ্জনী আর্থিক অনটনে নিজের উন্নত চিকিৎসারও ব্যবস্থা করতে পারছেন না।
আফিয়া খাতুন খঞ্জনীর জন্মস্থান কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার সোনাপুর গ্রামে। মুক্তিযুদ্ধের সময় চৌদ্দগ্রাম সোনাপুরের দুই সন্তানের জননী বিধবা খঞ্জনীকে তার শ্বশুর বাড়ি থেকে জগন্নাথপুর পাকিস্তানি বাহিনীর ক্যাম্পে তুলে নিয়ে যায় রাজাকাররা। সেখানে দীর্ঘদিন তার ওপর নির্যাতন চালানো হয়। স্বাধীনতার পর সেখান থেকে ফিরলেও ঠাঁই হয়নি স্বামীর বাড়িতে। ফিরে পাননি ছেলে ও মেয়েকে। মায়ের শোকে মারা যায় ছেলেটি, আর মেয়েকে নিয়ে যায় তার শাশুড়ি।
যুদ্ধের পর স্বামীর বাড়িতে জায়গা না পেয়ে ৩০ বছর রাস্তায় রাস্তায় দিন কাটিয়েছেন খঞ্জনী। পরে অসুস্থ অবস্থায় তার আশ্রয় হয় ফেনী জেলায় তার ভাইয়ের বাড়িতে। পরে সেখান থেকে মানসিক ভারসাম্যহীন খঞ্জনীর শেষ আশ্রয় হয় কুমিল্লা নগরীতে তার মেয়ের বাড়িতে।
কুমিল্লা নগরীর রিকশা চালক ফুল মিয়ার স্ত্রী ও মুক্তিযোদ্ধা খঞ্জনীর মেয়ে রোখসানা বলেন, "আমি ছোট ছিলাম, তেমন কিছুই মনে নাই। তবে, মা’রে রাজাকাররা তুইল্লা নেওয়ার পর আমরা দাদীর কাছে ছিলাম। যুদ্ধ শেষ হওনের পর মা’রে আর দেখি নাই। হেই সময় আমার ভাই মইরা যায়। না খাইয়া মইরা যায় হে। পরে মা’রে আমি অনেক খুঁজছি। আমার বিয়া হওনের পরে জানছি যে, আমার মা আমার মামুর বাড়ি ফেনীতে আছে। পরে ওইখান থাইক্কা মা’রে আমার বাগিচাঁগাও এর বাসায় নিয়া আসি"।
তিনি বলেন, "মা এখন কথা বলতে পারে না। চোখেও তেমন দেখে না। সব সময় অসুখে বিসুখে থাকে। তার উন্নত চিকিৎসার দরকার। আমরা যা পারি, তাই করি। দু’য়েকটা এনজিও মাঝে মধ্যে টাকা পয়সা দেয়, তা দিয়া কিছু চিকিৎসা করাই। কিন্তু উন্নত চিকিৎসা করাতে পারছি না"।
তবে, তার সাহসিকতা ও ত্যাগ নিয়ে এখনও গর্ব করেন চৌদ্দগ্রামের সোনাপুর এলাকার মুক্তিযোদ্ধারা।
যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও খঞ্জনীর দূর সম্পর্কের আত্মীয় আবুল কাশেম মজুমদার বলেন, খঞ্জনী শুধু যে যুদ্ধে সম্ভ্রম হারিয়েছে তাই নয়। যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীর ক্যাম্প থেকে খাবার চুরি করে এলাকার অনাহারী বাচ্চাদের খাওয়াতেন তিনি। তার কারণে সোনাপুর গ্রামে আর কোনো মেয়েকে পাকিস্তানি বাহিনী নিয়ে যায়নি বলেও শুনেছি। এতদিন পর সে মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি পেয়েছে, তাতে আমরা অনেক খুশি।
জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শফিউল আহমেদ বাবুল বলেন, তালিকাভুক্তদের মধ্য থেকে খঞ্জনীসহ দুইজনকে মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি দেওয়ায় সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি । এভাবে এক এক করে আমরা বীরাঙ্গনা নারীদের সম্মানে আসীন করার চেষ্টা করছি। এই সরকারের আমলেই মুক্তিযোদ্ধারা সর্বোচ্চ স্বীকৃতি পাচ্ছে।