স্কুলছাত্রী নির্যাতন, টাকায় মীমাংসার চেষ্টা

প্রকাশ | ১১ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৩:১০ | আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৪:৪৯

অনলাইন ডেস্ক

বরিশালে স্কুলছাত্রীকে (১৩) টানা আটদিন আটকে রেখে নির্যাতনের ঘটনা ৩০ হাজার টাকায় ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর পুলিশ ওই ছাত্রীকে ভিক্টিম সাপোর্ট সেন্টারে নিয়ে যায়।

ছাত্রীর পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ, মহসিন নামে এক গাড়িচালক গত ২ ডিসেম্বর (শুক্রবার) সন্ধ্যায় ওই ছাত্রীকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। আর মহসিনের গাড়ির হেলপার মাসুদের স্ত্রী মালিয়া ওই কাজে মহসিনকে সহযোগিতা করে। 

মহসিন বাড়ি মাদারীপুরের নতুন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এবং বরিশাল শহরের কাজীপাড়া মুন্সিবাড়ি এলাকায় ভাড়া থাকতো। বরিশালের ২২নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিল আ ন ম সাইফুল আহসান আজিমের টোটাল গ্যাসের দোকানেরই গাড়ি চালানোর কাজ করতো। 

ছাত্রীর পরিবার ও স্থানীয় সূত্র জানায়, গাড়ির হেলপার মাসুদের স্ত্রী মালিয়া ও ওই ছাত্রী একসঙ্গে আরবি পড়ত। গত ২ ডিসেম্বর আরবি পড়া শেষে বাড়ি ফেরার পথে মালিয়া ওই ছাত্রীকে আচার খাওয়ায়। আচার খেয়ে আচেতন হয়ে পড়ে সে। পরে আচেতন অবস্থায় মহসিন বাসে করে ওই ছাত্রীকে তুলে নিয়ে যায়। পরদিন ৩ ডিসেম্বর ১২টার ছাত্রীটির জ্ঞান ফেরার পর সে জানতে পারে যে, সে এখন মাদারীপুরে মহসিনের বোনের বাড়িতে আছে।আটদিন আটকে রেখে নির্যাতনের পর মহসিনের স্ত্রী ছালমা ৯ ডিসেম্বর (শুক্রবার) ওই ছাত্রীকে বাসায় পৌঁছে দেয়। 

ওই ছাত্রীর মা বলেন, নিখোঁজ হওয়ার পর বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করে মেয়েকে কোথাও না পেয়ে দুইদিন পর কোতোয়ালি থানায় জিডি করি। সন্দেহ করে মহসিনের নম্বরে ফোন দিলে সে ঢাকায় আছে জানায়। মহসিনের দেওয়া ঢাকার ঠিকানায় স্বামীকে পাঠিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে মহসিনের বড় স্ত্রী ছালমাকে চাপ দিলে শুক্রবার রাত ১০টায় মাদারীপুর থেকে আমাদের মেয়েকে এনে বাসায় দিয়ে যায়। এরপর আমরা ছালমাকে আটকে রাখি।

তিনি আরও বলেন, পরদিন (১০ ডিসেম্বর)শনিবার সকালে স্থানীয় সাবেক কাউন্সিলর ও অন্যান্য লোকেরা এসে সালিশ করার কথা বলে ছালমাকে নিয়ে যায়। আর আমাদের বলে, যা হওয়ার হয়েছে, ইজ্জতের বিষয়, ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে, ওই নিয়ে চুপচাপ থাকো। 

সালিশিদের একজন স্থানীয় মুদি দোকানি মিজানুর রহমান বলেন, মহসিন ৩টি বিয়ে করেছে। এজন্য ওর সঙ্গে মেয়েটির (ভুক্তভোগী স্কুলছাত্রীর) বিয়ে দেওয়া ঠিক হবে না ভেবে বিচার করে আর্থিক জরিমানা করেছি। মেয়ের বাবা বিয়ের জন্য পঞ্চাশ হাজার টাকা চাইলে মহসিন বলেছে, মামা টাকাতো খরচ হয়ে গেছে, ৩০ হাজার টাকা দিতে পারব। সেই অনুযায়ী ত্রিশ হাজার টাকায় রফা হয়েছে।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী স্কুলছাত্রীর বাবা বলেন, আমি এমনিতেই অসহায়। চায়ের দোকানদারি করি। অপরদিকে সাবেক কাউন্সিলর আজিম ভাই ও আরও লোকেরা সালিশি করায় ওই সময় কিছু বলতে পারিনি। তবে আমি এ ঘটনায় বিচার চাই।

নগর পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) গোলাম রউফ খান বলেন, অপহরণের পর আটকে রেখে নির্যাতনের মতো এই ঘটনা সালিশের মাধ্যমে মীমাংসা হওয়ার নয়। এর আগে জিডি হওয়ার পর আমরা বিভিন্ন থানায় সংবাদ পাঠিয়েছি। এখন শিশুটিকে উদ্ধার করে ভিক্টিম সার্পোট সেন্টারে রাখা হয়েছে। এরপর তার অভিভাবকদের মাধ্যমে মামলা নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ঘটনায় ন্যায়বিচারের জন্য যা করা প্রয়োজন তার সব করা হবে।