পরিবারের সাথে ঈদ করার কথা ছিল মিতুর
প্রকাশ | ০৫ জুন ২০১৬, ১৮:৩৬
চট্টগ্রামের পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতু হত্যার ঘটনায় শোকে বিহ্বল হয়ে পড়েছেন তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন।
দুপুরে মাগুরা শহরের কাউন্সিল পাড়ায় মিতুর শ্বশুরবাড়ি গিয়ে দেখা যায়, বাবুলের বাবা আব্দুল ওয়াদুদ ও মা শাহিদা বেগম বিলাপ করতে করতে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন। তাদের সমবেদনা জানাতে প্রতিবেশী ও পুলিশ কর্মকর্তাদের উপস্থিতি দেখা যায়। মাগুরার পুলিশ সুপার এ কে এম এহসান উল্লাহ ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম সস্ত্রীক এসে বাবুলের মা-বাবার প্রতি সমবেদনা জানান।
অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা ওয়াদুদ পুত্রবধূর নানা স্মৃতি তুলে ধরে বলেন, “মিতু পুত্রবধূ হলেও সে ছিল আমার মেয়ে। সে আমাকে বাবার মতো ইজ্জত করত। তার বাসায় গেলে আসতে দিতে চাইত না।”
তিনি জানান, গত মাসে সর্বশেষ চট্টগ্রামে গিয়েছিলেন তিনি; মিতুর জোরাজুরিতে সপ্তাহখানেক ছিলেন। এবার তাদের সবার একসঙ্গে ঈদ করার কথা ছিল।
ছেলের সততার কথা তুল ধরে তিনি বলেন, “বাবুল নির্লোভ মানুষ। আল্লাহ কেন তাকে এমন শাস্তি দিলেন? এখন তার দুইটা বাচ্চা এতিম হয়ে গেল। ছোট বাচ্চা দুইটা মা ছাড়া কীভাবে থাকবে।”
পুত্রবধূর শোকে অঝোরে কাঁদছিলেন এসপি বাবুলের মা শাহিদাও। মিতুর স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, “গতকালই মিতু সবার জন্য কাপড়, চিনি, সেমাই, তেল পাঠিয়েছে। ঈদের আগে বাড়ি আসার কথা ছিল। সবাই তার অপেক্ষায় ছিল। পরিবারের সব সদস্যকে সে আপন করে নিয়েছিল। শুধু পরিবার নয়, সাধারণ মানুষকেও ভালবাসত।”
বাবুলের ভাই আইনজীবী হাবিবুর রহমান লাবলু জানান, মিতু অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ পরিদর্শক মোশারফ হোসেনের মেয়ে। তার বাবা এখন থাকেন ঢাকার বনশ্রী এলাকায়। মিতু ঢাকার হোম ইকোনোমিক্স কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর করলেও গৃহিনী ছিলেন। বাবুলের চাকরির সুবাদে দুই সন্তানসহ তারা চট্টগ্রামেই থাকতেন।
উল্লেখ্য, দুই মাস আগে পদোন্নতি পেয়ে পুলিশ সুপার হয়ে ঢাকায় আসার আগে চট্টগ্রামে গোয়েন্দা পুলিশে দায়িত্ব পালন করেন বাবুল আক্তার। সে সময় তার নেতৃত্বে জেএমবির আস্তানা থেকে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরকসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়, যাদের মধ্যে নেতা পর্যায়ের একজন পুলিশের সঙ্গে এক অভিযানে থাকা অবস্থায় গ্রেনেড বিস্ফোরণে নিহত হন।
জঙ্গি দমনে ভূমিকার জন্য প্রশংসিত বাবুল ঢাকায় পুলিশ সদরদপ্তরে যোগ দিলেও তার পরিবার ছিল চট্টগ্রাম শহরে।
রবিবার সকালে নগরীর জিইসি মোড়ের কাছে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দেওয়ার সময় মোটরসাইকেলে করে হামলাকারীরা তার স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুর মাথায় ছুরি দিয়ে আঘাত ও গুলি করে। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।