২২ নভেম্বর তেরশ্রী গণহত্যা দিবস
প্রকাশ | ২২ নভেম্বর ২০১৬, ১৩:৫৬
আজ ২২ নভেম্বর, মানিকগঞ্জের ঘিওরের তেরশ্রী গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকারদের সহায়তায় তেরশ্রী এস্টেটের তত্কালীন জমিদার সিদ্ধেশ্বর রায় প্রসাদ চৌধুরী, কলেজের অধ্যক্ষ আতিয়ার রহমানসহ ৪৩ জন স্বাধীনতাকামী মানুষকে আগুনে পুড়িয়ে, বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে। ওই সময় তারা পুরো গ্রামের ঘরবাড়ি আগুনে জালিয়ে দেয়। সেই ভয়াল দিনের কথা মনে করে আজও আঁতকে ওঠেন অনেকেই।
সেইদিন শীতের কাকডাকা ভোরে পুরো গ্রাম ঘিরে হানাদার বাহিনী এদেশীয় দোসর রাজাকার, আলবদর, আল-শামস বাহিনীর সহায়তায় ঘুমন্ত গ্রামবাসীর ওপর নারকীয় হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। প্রথমে তেরশ্রী কলেজের অধ্যক্ষ আতিয়ার রহমানকে গুলি করে ও বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে তারা। এরপর তেরশ্রী এস্টেটের জমিদার সিদ্ধেশ্বর রায় প্রসাদ চৌধুরীর শরীরে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। পর্যায়ক্রমে অন্যদেরও একই কায়দায় হত্যার পর পুরো গ্রামে আগুন জ্বালিয়ে দেয়।
হানাদাররা চলে যাওয়ার পর আশপাশের গ্রামের লোকজন এসে মৃত দেহগুলো নিয়ে স্থানীয় শ্মশানে ও কবরস্থানে মাটিচাপা দেয়। এলাকাবাসীর দাবির মুখে ৪১ বছর পর ২০১১ সালে শহীদদের স্মরণে তেরশ্রী গ্রামে নির্মিত হয় সরকারিভাবে একটি স্মৃতিস্তম্ভ। সেই স্তম্ভে ৩৬ জন শহীদের নাম লিপিবদ্ধ হলেও বাকিদের নাম অজানাই রয়ে গেছে। প্রতিবছর এই দিনে এলাকাবাসী ও মুক্তিযোদ্ধারা শহীদদের স্মরণে নানা কর্মসূচি পালন করে। তরুণ সমাজ স্মৃতিস্তম্ভের পাশে একটি জাদুঘর ও একটি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক লাইব্রেরি তৈরির দাবি করছে।
২২ নভেম্বর তেরশ্রীতে জমিদার সিদ্ধেশ্বর রায় প্রসাদ চৌধুরীকে হত্যার পর জমিদার পত্নী গায়েত্রী দেবী রায় চৌধুরানী মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয়সহ নানা সহযোগিতা করেছিলেন।
দিবসটি উপলক্ষে সকাল ৮টার দিকে স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে শহীদদের শ্রদ্ধা জানানো হয়। এ সময় জেলা প্রশাসক রাশিদা ফেরদৌস, জেলা পরিষদ প্রশাসক গোলাম মহীউদ্দীন, প্রাক্তন সংসদ সদস্য আনোয়ারুল হক, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার তোবারক হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
পরে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে একটি শোক র্যালি বের হয়। র্যালিতে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও সংগঠনের নেতারা অংশ নেন।