কর্মক্ষেত্রে নারী শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন ছুটি নিশ্চিত করতে হবে
প্রকাশ | ২১ নভেম্বর ২০১৬, ১৯:২৭
শিল্প কারখানাসহ সকল কর্মক্ষেত্রে নারী শ্রমিকদের সমমজুরী ও মাতৃত্বকালীন ছুটি নিশ্চিত করতে হবে। সোমবার (২১ নভেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘নারী শ্রমিক কণ্ঠ’ নামে নতুন একটি সংগঠনের আত্মপ্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নারী নেতৃবৃন্দ একথা বলেন।
নেতৃবৃন্দ বলেন, বাংলাদেশে নারী শ্রমিক প্রধান প্রাতিষ্ঠানিক খাত তৈরি পোশাকশিল্প। এখানে নিয়োজিত রয়েছে প্রায় ৪ মিলিয়ন বা ৪০ লাখ শ্রমিক, যার ৮৫ ভাগই নারী শ্রমিক। বর্তমানে দেশের রফতানী আয়ের শতকরা প্রায় ৮২ ভাগ আসে এই খাত থেকে এবং এই রফতানী আয় জিডিপি’র প্রায় ১০ ভাগ। অথচ পোশাকশিল্পের নারী শ্রমিকরা তাদের প্রাপ্য ছুটি ও মর্যাদা সঠিকভাবে পায় না।
‘নারী শ্রমিক কন্ঠ’ সংগঠন সম্পর্কে তারা জানান, এই সংগঠন নারী-পুরুষ শ্রমিকের মাঝে বিভেদ সৃষ্টির জন্য নয়, বরং বিদ্যমান বিভেদের প্রাচীর ভেঙে সমতাভিত্তিক বাংলাদেশ গড়ে তোলার ঐক্যবদ্ধ প্লাটফরম, যার মূল লক্ষ্য নারীর অধ:স্তনতা দূর করার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের বৈষম্যহীন বাংলাদেশ বিনির্মাণ করাই এর উদ্দেশ্য হবে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের কো-কনভেনর রোকেয়া রফিক বেবী।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি প্রাতিষ্ঠানিক খাত নির্বিশেষে কৃষি, শিল্প ও সেবাখাত নির্ভর শ্রমবাজারের প্রায় সর্বত্রই নারীশ্রমিক প্রাণ সঞ্চার করে চলেছে। এ পরিস্থিতিতে নারী শ্রমিকদের সমঅধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একটি মঞ্চের প্রয়োজন।
সংবাদ সম্মেলন গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী লীগ সভানেত্রী লীমা ফেরদৌস, বাংলাদেশ জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক শামীম আরা, জাতীয় নারী শ্রমিক জোট সভানেত্রী উম্মে হাসান ঝলমল, বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন সভানেত্রী জাহানারা বেগম, সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন সভানেত্রী মমতাজ বেগমসহ দেশের ১৫ টি ট্রেড ইউনিয়ন ও সংগঠন নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বাংলাদেশ শ্রমশক্তি জরিপ ২০১৩ অনুযায়ী দেশে শ্রমে নিয়োজিত মোট জনশক্তির সংখ্যা ৬ কোটি ৭০ লাখ। এর মধ্যে নারী শ্রমশক্তি হল ১ কোটি ৮২ লাখ। ২০০২ সাল থেকে ২০০৩ অর্থবছর থেকে শ্রমশক্তিতে পুরুষের অংশগ্রহণ একই থাকলেও নারীর অংশগ্রহল ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০০২ -২০০৩ এ নারী শ্রমিকের অংশগ্রহণ ছিল ২৬ দশমিক ১ শতাংশ এবং ২০১৩ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৩ দশমিক ৫ শতাংশ।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) এক প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, কৃষিতে নারীর অংশগ্রহন এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে। কৃষি নির্ভর বাংলাদেশের কৃষিখাতের বড় একটা অংশ নারী। কৃষিতে পুরুষ শ্রমশক্তির অংশগ্রহণ দিন দিন কমে যাচ্ছে। যেখানে ২০০২ -২০০৩ অর্থবছরে পুরুষ শ্রমশক্তি ছিল ৫১ দশমিক ৭ শতাংশ তা ২০১৩ সালে কমে এসেছে ৪৫ দশমিক ১ ভাগে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ এ বাংলাদেশে নারীর এ অবদানের পরও নারী কৃষি শ্রমিকরা বরাবরই উপেক্ষিত।
‘নারী শ্রমিক কন্ঠ’ আগামী ২৩ নভেম্বর সকাল ১০ টায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনিস্টিটিউশনে নারীশ্রমিক সম্মেলনের আয়োজন করবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।