ধান ঘরে তুলতে চান উচ্ছেদ সাঁওতালরা
প্রকাশ | ১৭ নভেম্বর ২০১৬, ১৫:৩৫
জমি থেকে উচ্ছেদ হওয়া সাঁওতালরা সেখানে তাদের চাষ করা ধান কেটে আনতে চান। উচ্ছেদ অভিযানের সময় সেখানকার প্রায় আটশ একর জমিতে তাদের ফলানো মাস কালাই, সরিষা ও পাট লুট হয়েছে।
এখন কাঁটাতার দিয়ে ঘেরা ওই জমিতে ঢুকতে পারছেন না সাঁওতালরা। পাক ধরা ধান ১০ থেকে ১২ দিনের মধ্যে কাটতে না পারলে তা নষ্ট হওয়ার ভয়ে আছেন তারা।
গোবিন্দগঞ্জের মাদারপুর গ্রামের ইলিমা টুডু জানান, সাঁওতালরা একশ একর জমিতে ধান এবং প্রায় আটশ একর জমিতে মাস কালাই, সরিষা ও পাট চাষ করেছিলেন। সেই জমি থেকে যখন উচ্ছেদ করা হয় তখন ধান ছাড়া সব ফসল লুট হয়ে গেছে।
গত ৬ নভেম্বর রংপুর চিনিকলের সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামারে মিলের শ্রমিক-কর্মচারী ও পুলিশের সঙ্গে সাঁওতালদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে তিন সাঁওতাল নিহত ও অনেকে আহত হন। কয়েকশ ঘরে ভাংচুর-অগ্নিসংযোগ হয়। সাঁওতালদের দেড় শতাধিক পরিবার এখন ওই এলাকার একটি চার্চের খোলা প্রাঙ্গণ ও পরিত্যক্ত স্কুল ভবনে দিন কাটাচ্ছে।
উচ্ছেদের পর চিনিকল কর্তৃপক্ষ সাঁওতালদের বাড়ির জমিতে ট্রাক্টর চালালেও ফসলি জমি অক্ষত আছে।
সাঁওতাল ও বাঙালিদের ১৮টি গ্রামের ১ হাজার ৮৪০ দশমিক ৩০ একর জমি ১৯৬২ সালে অধিগ্রহণ করে চিনিকল কর্তৃপক্ষ আখ চাষের জন্য সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামার গড়ে তুলেছিল। সেই জমি ইজারা দিয়ে ধান ও তামাক চাষ করে অধিগ্রহণের চুক্তিভঙ্গের অভিযোগ তুলে তার দখল ফিরে পেতে আন্দোলনে নামে সাঁওতালরা।
এরপর চিনিকলের জন্য অধিগ্রহণ করা ওই জমিতে কয়েকশ ঘর তুলে সাঁওতালরা বসবাস শুরু করেন। চাষাবাদ করেন সেখানকার জমিতে।
ওই জমি থেকে তাদের উচ্ছেদের পরদিন থেকে ইক্ষু খামার এলাকা কাঁটাতার দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে, তা ভিতর রয়েছে সাঁওতালদের চাষের ধান।
সহায়-সম্বলহীন সাঁওতালদের ধান তুলে আনার সুযোগের দাবি জানান সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামার ভূমি উদ্ধার কমিটির সহ-সভাপতি ফিলিমন বাস্কে।
উচ্ছেদের কারণে সাঁওতালদের কোটি টাকার উপরে ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। আপাতত জীবন চালিয়ে নেওয়ার জন্য ধানগুলো ঘরে তোলার সুযোগ দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
বার্না মুরমু নামে পল্লীর এক নারী বলেন, ঘটনার পর থেকে পুরো পল্লী পুরুষশূন্য। শিশু -কিশোর ও নারীরা যারা গ্রামে আছে, তারা পুলিশের ভয়ে জমিতে যেতে পারছে না।