এক ঘরে মিলল ২ বান্ধবীর মরদেহ
প্রকাশ | ১৬ নভেম্বর ২০১৬, ১৪:৪১
রাজশাহীতে এক ঘরে গলায় ওড়না পেঁচানো দুই স্কুলছাত্রীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
১৫ নভেম্বর (মঙ্গলবার) বিকেল সাড়ে ৫ টার দিকে নগরীর মতিহার থানার শাহাপুর গ্রাম থেকে তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
মৃতরা হলো, শাহাপুর গ্রামের মুক্তার হোসেনের মেয়ে উম্মে মাড়িয়া সম্পা (১৩) ও নাজমুল হোসেনের মেয়ে বন্যা বেগম (১৩)। তারা দুই বান্ধবী এবং বেলঘড়িয়া উচ্চবিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী।
দুই ছাত্রীর পরিবার থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, সম্পা ও বন্যাকে বিপ্লব ও মুন্না নামের দুই যুবক উত্যক্ত করতো। তাদের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে তারা আত্মহত্যা করেছে।
সম্পার মা শরিফা বেগম জানান, মঙ্গলবার সকালে তারা দুজন এক সঙ্গে স্কুলে যায়। দুজনই বেলঘড়িয়া উচ্চবিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী। দুপুরে তারা স্কুল থেকে বাসায় ফিরে। বন্যা বাড়িতে না গিয়ে সম্পার সঙ্গে ঘরেই ছিল। দুইজনকে বাড়িতে রেখে তিনি বাইরে যান। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বাসায় ফিরে মেয়ের কোনো সাড়া না পেয়ে ডাকাডাকি করতে থাকেন। পরে দেখেন তাদের ঘরের দরজা বন্ধ। এরপর দরজা ভেঙে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে দুজনকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান। পরে চিৎকার করলে এলাকাবাসী ছুটে আসেন। খবর পেয়ে পুলিশ এসে মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়।
শরিফা বেগম অভিযোগ করে বলেন, 'সানশাইন কিন্ডার গার্ডেনের শিক্ষক বিপ্লব সম্পাকে প্রায়ই প্রেমের প্রস্তাব দিত। ষষ্ঠ শ্রেণিতে থাকতেই তাকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। এরপর নানাভাবে ফুসলিয়ে তার সঙ্গে প্রেম করে। কিছুদিন আগে বিপ্লব সম্পাকে ফাঁকি দিয়ে কলেজের আরেক ছাত্রীর সঙ্গে প্রেম করে। এনিয়ে তার মেয়ে প্রায়ই কান্নাকাটি করতো। আজ সকালে স্কুলে যাবার সময় সম্পা বলেছে- আমি যদি মরে যাই তাহলে বিপ্লবকে ছাড়বে না। তার বিচার করো।'
তিনি আরো বলেন, 'আত্মহত্যার সময় সম্পা তার হাতে কলম দিয়ে বিপ্লব মাস্টারের নাম লিখে গেছে।'
সম্পার প্রতিবেশি ছিল বন্যা। তার বড় বোন নুপুর বলেন, 'মুন্না নামের এক যুবক তার বোনকে প্রায়ই জ্বালাতো। রাস্তায় প্রেমের প্রস্তাব দিত। এমন কি বাড়িতে এসে সে প্রাইভেট পড়ার জন্য আমাকে বলেছিল। আমি না করেছি। সে এলাকার কাদের মোল্লার ছেলে।'
বন্যার বাবা নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘দুদিন আগে মুন্না আমাকে শাসিয়েছে। আমাকে সে প্রশ্ন করে তার বাবার কাছে আমি কোনো অভিযোগ করেছি কী না। এখন বুঝতে পারছি সে কেন আমাকে এসব বলেছিল। তার কারণেই আমার মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। আমি এর বিচার চাই।’
শাহাপুর গ্রামের বাসিন্দা আইনজীবী গোলাম মর্তুজা বলেন, ‘দুজনই সপ্তম শ্রেণিতে পড়তো। সবার মুখে শুনতে পাচ্ছি তাদেরকে বিপ্লব ও মুন্না উত্যক্ত করত। তারা দুই বান্ধবীকে যৌন নির্যাতন করেছে। এলাকাবাসী এর কঠোর বিচার চায়।'
মতিহার জোনের সহকারি কমিশনার সুশান্ত চন্দ্র রায় জানান, দুই স্কুলছাত্রীর লাশ ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। তাদের পরিবার অভিযোগ করলে পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা নেবে।
সূত্র: সমকাল