পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী ধর্ষণ, শিক্ষক পলাতক
প্রকাশ | ১০ নভেম্বর ২০১৬, ১৫:১১
কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলায় এক স্কুল শিক্ষকের বিরুদ্ধে পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। শহিদুল ইসলাম নামের ওই শিক্ষক নাগেশ্বরীর কচাকাটা ইউনিয়নের ভোটের হেল্লা চন্দ্রার মোড় এলাকার হাসান আলীর ছেলে।
সালিশে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানসহ এলাকাবাসীর বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টারও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
মেয়েটির পরিবারের সদস্য ও এলাকাবাসী জানান, নাগেশ্বরীর কচাকাটা থানার কচাকাটা ইউনিয়নের নায়েকেরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির কয়েকজন ছাত্রী স্কুল ছুটির পর ওই স্কুলের শিক্ষক শহিদুল ইসলামের কাছে গণিত প্রাইভেট পড়তে যেতো। মাস খানেক আগে একদিন পড়া শেষে অন্য ছাত্রীরা চলে গেলে শহিদুল ওই ছাত্রীকে শ্রেণিকক্ষ ঝাড়ু দেওয়ার কথা বলে। পরে দরজা বন্ধ করে তাকে ধর্ষণ করে শহিদুল।
সর্বশেষ গত ২ নভেম্বর একইভাবে তাকে ধর্ষণ করার পর মেয়েটি বাড়ি গিয়ে বাবা-মাকে জানায়। মেয়েটি স্বজনদের বলে, গত এক মাসে ৬-৭ দিন তাকে ধর্ষণ করেছে।
মেয়েটির মা বলেন, এর পরদিন তিনি প্রধান শিক্ষক জাহান আলীকে বিষয়টি জানান। কিন্তু প্রধান শিক্ষক কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে শিক্ষক শহিদুলকে ছুটি দেন। সামনে মেয়েটির প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা দেওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
তিনি বলেন, “হামরা গরীব। মেয়ের বাপ পাগলের মতো। কিছু পড়ায় তাকে বিয়ে দিতে চাইছিল। তা হলো না। লজ্জায় স্কুল যায় না”।
মেয়েটির নানি বলেন, “ছাওয়াটা স্কুল যায় আইসে। মাস্টার কী করিল। আসি কান্দি কান্দি কয়। চেয়ারম্যান বিচার করছে। জামাইক ৭০ হাজার ট্যাহা দিছে”।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, গত রবিবার কচাকাটা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়ালসহ স্থানীয় কয়েকজন স্থানীয় জাপা নেতা গোলাম মোস্তফার বাড়িতে সালিশ করে শিক্ষক শহিদুলকে দেড় লাখ টাকা জরিমানা করেন। এর মধ্য থেকে ছাত্রীর পরিবারকে দেওয়া হয় ৭০ হাজার টাকা।
অন্য এক ছাত্রীর অভিভাবক আজিজুল ইসলাম বলেন, “একজন শিক্ষক যদি এ অপকর্ম করে পার পেয়ে যান তাহলে আমাদের মেয়েদের এ স্কুলে পাঠাব কীভাবে?”
এলাকার প্রদীপ কুমার সরকার, আলমগীর কবির ও জাহাঙ্গীর আলম বলেন, একজন শিক্ষক একটা মেয়েকে ধর্ষণ করল। চেয়ারম্যানসহ কয়েকজন লোক দেখানো বিচার করে জরিমানা আদায় করে তা আত্মসাৎ করল। এর বিচার না হলে, ওই শিক্ষকের শাস্তি না হলে তারা স্কুলে তালা ঝুলিয়ে সন্তানদের স্কুলে পাঠানো বন্ধ করে দেবেন বলে হুমকি দেন।
কচাকাটা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল বলেন, “সালিশের মাধ্যমে বিষয়টি মীমাংসা করা হয়েছে”। তবে সালিশে টাকা নেওয়ার কথা তিনি অস্বীকার করেছেন।
এদিকে, ঘটনার পর থেকে শিক্ষক শহিদুল পলাতক। ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর ওই শিক্ষক তিন দিনের ছুটি নেয়। কিন্তু ছুটি শেষ হওয়ার পর মঙ্গলবারও স্কুলে আসেননি শহীদুল।
এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক জাহান আলী বলেন, “বিষয়টি ছাত্রীর মা মৌখিকভাবে বলেছেন। লিখিত অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ছুটি দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, "ছুটি চাওয়ায় তাকে তিন দিনের ছুটি দেওয়া হয়েছিল, যা সোমবার শেষ হয়েছে। কিন্তু মঙ্গলবার তিনি স্কুলে আসেননি"।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোসলেম উদ্দিন শাহ বলেন, "বিষয়টি প্রধান শিক্ষক জানাননি। আপনাদের অনেকের মাধ্যমে জেনে প্রধান শিক্ষককে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে"।
এ ব্যাপারে নাগেশ্বরী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হায়াত মো. রহমতুল্লাহ বলেন, “বিষয়টি মৌখিকভাবে জেনেছি। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”