সিপিবি’র একাদশ কংগ্রেস শুরু
‘বাম বিকল্প শক্তি নিয়ে গণতান্ত্রিক দেশ গড়ার প্রত্যয়’
প্রকাশ | ২৯ অক্টোবর ২০১৬, ০১:০৩ | আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০১৬, ১৬:১২
শুরু হয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) একাদশ কংগ্রেস। ‘সাম্প্রদায়িকতা, সাম্রাজ্যবাদ, লুটপাটতন্ত্র, গণতন্ত্রহীনতা নিপাত যাক’ স্লোগান নিয়ে শুক্রবার (২৮ অক্টোবর) বিকালে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় সংগীত গেয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে কংগ্রেসের সূচনা হয়।
গুলিস্তানের কাজী বশির মিলনায়তনে (মহানগর নাট্যমঞ্চ) চলবে চার দিনের রুদ্ধদ্বার কাউন্সিল। শেষ দিন অর্থাৎ ৩১ অক্টোবর অধিবেশনে চূড়ান্ত হবে দলের ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা; গঠন করা হবে পার্টির নতুন নেতৃত্ব।
বেলা ১২টার মধ্যেই কংগ্রেসের উদ্বোধনী মঞ্চ সেজে উঠেছে লাল রঙে। এর মধ্যেই ধীরে ধীরে মিছিল নিয়ে কংগ্রেসস্থলে (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) দলে দলে আসতে থাকে সারাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত পার্টির কমরেডরা। মাথায় লাল ক্যাপ, গায়ে লাল পোশাক, আর লাল ঝাণ্ডা অর্থাৎ পার্টির সাংগঠনিক পতাকা হাতে।
বেলা গড়িয়ে দুপুর গড়াতেই কংগ্রেসস্থলে ‘দুনিয়ার মজদুর, এক হও’ ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে। কংগ্রেসকে কেন্দ্র করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পুরো এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পুলিশি তল্লাশি ছাড়াও ছিল আর্চওয়ে।
বেলা ২টায় বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর গীতিআলেখ্য ‘দিন বদলের পালা’ পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। সোয়া ৩টা পর্যন্ত চলে এই পরিবেশনা।
এরপরই জাতীয় সংগীতে পরিবেশন ও পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে উদ্বোধন হয় একাদশ জাতীয় কংগ্রেসের। সিপিবি সভাপতি কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম জাতীয় পতাকা এবং সাধারণ সম্পাদক কমরেড সৈয়দ আবু জাফর আহমদ পার্টির পতাকা উত্তোলন করেন। এরপর সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যরা বিদেশি প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে সম্মেলন মঞ্চের পাশে নির্মিত অস্থায়ী শহীদ বেদীতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন।
এবারের কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন ভারত, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনাম, চীন, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, উত্তর কোরিয়া, রাশিয়াসহ ১২টি দেশের কমিউনিস্ট পার্টি থেকে ২৬ জন প্রতিনিধি কমরেডরা।
‘মুক্তিযুদ্ধ আমাদের ইতিহাসের টার্নিং পয়েন্ট। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সমস্ত প্রগতিশীল শক্তির ঐক্যের ভিত্তিতে একটি শক্তিশালী বাম বিকল্প শক্তি গড়ে তোলা- এটাই এবার আমাদের কংগ্রেসের মূল আহ্বান’ এসব বলছিলেন সিপিবির সভাপতি কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম।
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা মনে করি, বাংলাদেশের প্রধান বিপদ চারটি- সাম্রাজ্যবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, লুটপাটতন্ত্র ও গণতন্ত্রহীনতা। চার দশক ধরে আমরা এই বিপদের মধ্যে বসবাস করছি। বর্তমানে দেশে বৈষম্য বাড়ছে, ঘুষ-দুর্নীতি বাড়ছে, সাধারণ মানুষের সংকট তাদের জীবনযাত্রাকে অসহনীয় করে তুলছে। গণতান্ত্রিক অধিকার খর্ব করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে- উন্নয়ন আগে, গণতন্ত্র পরে।’
কংগ্রেসের উদ্বোধন শেষে কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনাল গানটি পরিবেশন করা হয়। এরপর একটি শোভাযাত্রা শাহবাগ হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে সকল কমরেডরা শক্তিশালী বাম বিকল্প শক্তি নিয়ে সাম্রাজ্যবাদ ও সাম্প্রদায়িকতামুক্ত গণতান্ত্রিক দেশ গড়ার শপথ নেয়।
কংগ্রেস উপলক্ষে শনিবার (২৯ অক্টোবর) বিকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের (২য় তলা) কনফারেন্স কক্ষে ‘সাম্রাজ্যবাদ, নয়া উদারনীতিবাদ ও ধর্মীয় মৌলবাদ’ বিষয়ক এক আন্তর্জাতিক সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। কংগ্রেসে যোগ দিতে আসা বিদেশি প্রতিনিধিরা সেখানে আলোচনায় অংশ নেবেন।
উল্লেখ্য, সিপিবির দশম কংগ্রেস হয়েছিল ২০১২ সালের ১১-১৩ অক্টোবর। চার বছর পর এবারের কংগ্রেস হচ্ছে।