‘নারী কৃষি শ্রমিকরা বৈষম্যের শিকার’

প্রকাশ | ১৮ অক্টোবর ২০১৬, ১৭:৫২ | আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০১৬, ১৭:৫৫

অনলাইন ডেস্ক

দেশে নারী কৃষকরা মারাত্মকভাবে বঞ্চনা ও বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। মূলতঃ রাষ্ট্রীয় নীতিতে স্বীকৃতি ও মূল্যায়নের অভাব এবং সামাজিক বৈষম্যের কারণে দেশের নারী কৃষকদের এমন অবস্থা। কৃষক, উন্নয়নকর্মী, রাজনীতিবিদ ও গবেষকরা তাই বলেছেন, নারী কৃষকদের বাদ দিয়ে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও খাদ্য নিরাপত্তা কোনোভাবেই দীর্ঘস্থায়ী করা সম্ভব হবে না। ঘুচবে না বৈষম্য।

১৮ অক্টোবর মঙ্গলবার ঢাকার সিরডাপ মিলনায়তনে ‘কৃষিতে নারীঃ অবদান ও অধিকার’ বিষয়ে ‘দ্বিতীয় নারী কৃষক সম্মেলন’- এ এসব তথ্য উঠে আসে। ঢাকাসহ দেশের ৪০ জেলা থেকে ৫০০’র বেশি কৃষক ও ১০০ সংগঠন নিয়ে দিনব্যাপী এই সম্মেলনের আয়োজন করে একশনএইড বাংলাদেশ।

অনুষ্ঠানে ‘কৃষিতে নারী: অবদান ও অধিকার’ বিষয়ে তথ্য ও পরিস্থিতি তুলে ধরেন ফুড সিকিউরিটি নেটওয়ার্কের যুগ্ম-সম্পাদক মেরিনা যুথী। প্রবন্ধ উপস্থাপনায় তিনি বলেন, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী কৃষি কাজের সাথে যুক্ত আছেন প্রায় ৬৯ শতাংশ নারী। গৃহাস্থলীর সকল কাজের পাশাপাশি কৃষিকাজে নিয়োজিত নারী কৃষকদের ৭৪ শতাংশ গবাদিপশু পালন, ৬৩ শতাংশ স্থানীয় জাতের বীজ সংরক্ষণ, ৪০ শতাংশ শাক-সবজি ও ফলমূল উৎপাদন, শস্য মাড়াই ও মাড়াই পরবর্তী কার্যক্রম, খাদ্যশস্য প্রক্রিয়াজাতকরণসহ কৃষিপণ্য উৎপাদনে যুক্ত থাকেন। কিন্তু এসব কাজের উপার্জন তারা পান না। আবার পরিবার থেকে রাষ্ট্র পর্যন্ত কোথাও নারীর কাজের কোনো স্বীকৃতি নেই।

এ প্রসঙ্গে একশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির বলেন, ‘কৃষক হিসেবে নারীরা আজও স্বীকৃত নয়। রাষ্ট্রীয় নানা উদ্যোগ-আয়োজনে এখনো নারী কৃষকদের যথাযথ মূল্যায়ন নেই। সরকার বা নীতি-নির্ধারকরা জাতীয় অর্থনীতির সমৃদ্ধিতে বিভিন্ন পরিকল্পনা প্রণয়ন করলেও সেখানে নারী কৃষকের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়সমূহ উপেক্ষিত থাকছে। যার ফলে স্বীকৃতি ও সাম্যের প্রশ্নে বিভিন্ন স্তরে নারী কৃষকের প্রতি বৈষম্য দৃশ্যমান’।

তিনি আরও বলেন, ‘পিতৃতান্ত্রিক চিন্তা আর সমাজ কাঠামোর বাস্তবতার কারণে নারীরা আজও কৃষক হিসেবে স্বীকৃতি পায়নি। সিদ্ধান্ত গ্রহণে পুরুষ কৃষকের আধিপত্য বিদ্যমান। জমি, কৃষিভিত্তিক ও অবকাঠামোগত সুবিধা, কারিগরি ও প্রযুক্তিগত সেবার  ক্ষেত্রে নারীদের সুযোগ-সুবিধা বলতে গেলে খুবই নগণ্য। এখনও নারীবান্ধব কোনো প্রযুক্তি নারী কৃষকের কাছে পৌঁছায়নি।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, জাতীয় কৃষি নীতি ১৯৯৯, জাতীয় ভূমি ব্যবহার নীতিমালা ২০০১, নতুন কৃষি সম্প্রসারণ নীতিমালা-১৯৯৬ এবং জাতীয় কৃষি নীতিমালা-২০১০ (খসড়া)তে নারী কৃষকের সুনির্দিষ্ট  সংখা, ব্যাখ্যা ও সেবার পরিধি নির্ধারিত নাই। নতুন কৃষি সম্প্রসারণ নীতিমালায় ক্ষুদ্র, মাঝারি কৃষক, বর্গচাষী, ভূমিহীন কৃষক এবং অন্যান্য শ্রমশক্তি যারা মৎস্য, বন ও গবাদি পশু খাতে সংযুক্ত তাদের ভূমিকা বিশেষায়িত হয়নি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে পুরুষ কৃষকের জন্য সুনির্দিষ্ট ‘ডাটাবেজ’ তৈরি থাকলেও নারী কৃষকের জন্য সেটা নেই। ফলে যথাযথভাবে ঋণ ও সুযোগ সুবিধা প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয়।

অনুষ্ঠানে কথা বলেন পটুয়াখালী থেকে আসা মরজিনা বেগম। তিনি বলেন, ‘আমরা পণ্য উৎপাদন করলেও বাজারজাতকরণ করতে পারি না। পুরুষ কৃষকরা যাচাই বাছাই করে বিক্রি করতে পারে। কিন্তু আমরা সেটা করতে পারি না। বাজার কমিটিতে নারী নাই। তাই আমরা পণ্য সঠিকভাবে বিক্রি করতে পারি না। যে কারণে আমরা নারী কৃষিকরা অনেক পিছিয়ে।’

অনুষ্ঠানের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কৃষক মৈত্রীর সভাপতি সাজেদা বেগম বলেন, ‘বাংলাদেশের কৃষিতে নারীর অবদান ৭০% এরও বেশি; যা মাঠ পর্যায় থেকে ফসল প্রক্রিয়াজাতকরণ পর্যন্ত। মাঠ পর্যায়ের কৃষিতে নারীর অংশগ্রহণ কিছুটা কম থাকলেও পারিবারিক কৃষিতে নারী অংশগ্রহণ শতভাগ। কিন্তু কৃষিভিত্তিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নারীর অংশগ্রহণ নেই বললেই চলে। যে কারণে সে পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সকল পর্যায়েই অবহেলার শিকার হয়। কৃষিতে নারীর ব্যাপক অংশগ্রহণ থাকলেও কৃষিজমিতে নারীর অধিকার প্রায় শূন্যের কোটায়। এটা পরিবর্তন করতে হবে।’

এসময় খাদ্য মন্ত্রণালয় বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি আব্দুল ওয়াদুদ দারা বলেন, ‘নারীবান্ধব বাজার সৃষ্টি করা গেলে খুবই ভালো হতো।

তিনি বলেন, গ্রামের মেয়েরা বেশি নিগৃহীত হয়। পুরুষ সমাজ পেশী শক্তির সুযোগ নিয়েছে। আর্থিক দুর্বলতার কারণে কিছু নারী পিছিয়ে আছে। গরীব মানুষদের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। চেতনা জাগ্রত না হলে সমাজ পরিবর্তন হবে না। আমরা প্রচার-প্রসার নিয়ে ব্যস্ত। মূল কাজ আমরা করি না। সরকারের একার পক্ষে পরিবর্তন আনা সম্ভব হবে না। আমি আপনাদের দাবি সরকারের কাছে পৌঁছে দিব। নারীদেরও চেতনার পরিবর্তন আনতে হবে। সব সমস্যা একবারে সমাধান সম্ভব নয়, তাই ধৈর্য ধরতে হবে’।

 

সূত্র: অর্থসূচক