প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান

বাংলাদেশের তরুণশক্তির সুবিধা নিন

প্রকাশ : ২৯ মে ২০১৬, ১৪:৪৯

জাগরণীয়া ডেস্ক

জাপানি ব্যবসায়ীদের সামনে বাংলাদেশে শিল্প উৎপাদন খাতে বিপুল জনশক্তির কথা তুলে ধরে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রবিবার টোকিওতে জাপানের ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে এক প্রাতঃরাশ বৈঠকে এই আহ্বান জানান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।

সেই সঙ্গে বাংলাদেশে বিদেশি নাগরিক ও বিনিয়োগকারীদের সব ধরনের নিরাপত্তা দেওয়ারও আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। 

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, “আমাদের দরজা আপনাদের জন্য খোলা। আমি চাই আমাদের জাপানি বন্ধুরা বাংলাদেশে আসবেন, তরুণ কর্মীবাহিনী এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাগুলো কাজে লাগাবেন।”  

বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বাংলাদেশের ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই এবং জাপানের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংস্থা জেইটিআরও এর মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।

প্রাতঃরাশ বৈঠকে শেখ হাসিনা জাপানি ব্যবসায়ীদের বলেন, “আমাদের সরকার বাংলাদেশে ১০০ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও আইটি পার্ক গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছে; এর মধ্যে ৩৩টির কাজ এগিয়ে চলেছে। আমরা আশা করছি, আগামী চার বছরে বাংলাদেশের শিল্প উৎপাদন খাতে যুক্ত হবে আরও ১ কোটি মানুষ”।

জাপানকে বাংলাদেশের সবচেয়ে ‘পরীক্ষিত বন্ধু’ অভিহিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কর্মনিষ্ঠার কারণে জাপানের বিনিয়োগকারীদের প্রতি বাংলাদেশের মানুষের গভীর আস্থা রয়েছে। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুটি পাবলিক-প্রাইভেট অর্থনৈতিক সংলাপের মধ্য দিয়ে দুই দেশের বোঝাপড়া আরও দৃঢ় হয়েছে বলে তিনি জেনেছেন। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য বাংলাদেশের প্রশাসনিক কার্যক্রম আরও সহজ করতে তার সরকার কাজ করে যাচ্ছে। 

আর এসব বিষয়ে জাপানি ব্যবসায়ীদের মতামত ও পরামর্শ জানার আগ্রহের কথাও তিনি অনুষ্ঠানে জানান।

প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের সঙ্গে বৈঠকে জাপানের ‘রিভাইটালাইজেশন স্ট্র্যাটেজি’ এবং অবকাঠামো খাতে অংশীদারিত্বের বিষয়ে আলোচনার কথাও শেখ হাসিনা ব্যবসায়ীদের সামনে তুলে ধরেন।   

তিনি বলেন, “আমি বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের তরুণ জনগোষ্ঠী, তাদের দক্ষতা ও সৃজনশীলতা, বাংলাদেশের কৌশলগত অবস্থান, উন্নয়ন আকাঙ্ক্ষা এবং শিল্পায়ন পরিকল্পনা জাপানের রিভাইটালাইজেশন পরিকল্পনার সঙ্গে মিলে যাবে।”

বিনিয়োগকারীদের চাহিদা অনুযায়ী প্রণোদনা দেওয়া, জ্বালানি সরবরাহ ও অন্যান্য সংযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা এবং কিছু ক্ষেত্রে কর কাঠামো শিথিল করারও প্রতিশ্রুতি দেন প্রধানমন্ত্রী।  

বাংলাদেশে নিরাপত্তার বিষয়ে আশ্বস্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, “বাংলাদেশে সাম্প্রতিক কিছু ঘটনার প্রেক্ষিতে বিদেশি নাগরিক ও বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিয়ে আপনারা হয়তো উদ্বিগ্ন। আমি আপনাদের নিশ্চয়তা দিচ্ছি, বাংলাদেশ সরকার যে কোনো ধরনের সন্ত্রাস ও উগ্রপন্থার বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি নিয়ে কাজ করছে।”

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় ওষুধ ও জাহাজ নির্মাণ শিল্প হয়তো জাপানি ব্যবসায়ীদের আগ্রহী করবে। বাংলাদেশের সমুদ্রভিত্তিক ব্লু ইকোনমিও তাদের সামনে নতুন অনেক সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে। জাপান যেভাবে থাইল্যান্ডের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পখাতে সাফল্য পেয়েছে, সেই সুযোগ বাংলাদেশেও রয়েছে।

তথ্যপ্রযুক্তি, তৈরি পোশাক ও হালকা প্রকৌশল খাতে জাপানি ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগ সম্ভাবনার কথা এবং পাট, মৎস্য আহরণ ও টেক্সটাইল ম্যানুফেকচারিং খাতের উন্নয়নে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানান প্রধানমন্ত্রী।

বাংলাদেশ সরকারি বন্ড ছাড়ার উদ্যোগ নিয়েছে তাতে জাপানি ব্যাংকগুলো হয়তো আগ্রহী হবে বলে আশা করেন প্রধানমন্ত্রী।

এই প্রাতরাশ বৈঠকে জাপান এক্সটার্নাল ট্রেড অরগানাইজেশনের চেয়ারম্যান হিরোইয়ুকি ইশিগে, জাপান-বাংলাদেশ কমিটি ফর কমার্শিয়াল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশনের (জেবিসিসিইসি) চেয়ারম্যান তেরু আসাবা, তোশিবা করপোরেশনের প্রেসিডেন্ট মাশাশি মুরোমাচি, হোন্ডা মটরসের অপারেটিং অফিসার শিনজি অয়ামা, সিমিজু করপোরেশনের প্রেসিডেন্ট কাজুইয়ুকি ইনু, ওয়াইকেকে করপোরেশনের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট হিরায়োকি ওতানি, মারুহিশা লিমিটেডের প্রেসিডেন্ট মাশাহিরো হিরাইশি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অংশ নেন।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত