বঙ্গবন্ধুর খুনি ও যুদ্ধাপরাধীদের সম্পদ বাজেয়াপ্তের আইন পাশ
প্রকাশ | ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ১২:৪৮
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকারী এবং দণ্ডপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধীদের স্থাবর, অস্থাবর সকল সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার সিদ্ধান্ত প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে জাতীয় সংসদে গৃহীত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সংরক্ষিত নারী আসনের সাংসদ ফজিলাতুন নেসা বাপ্পি বঙ্গবন্ধুর খুনি ও দণ্ডিত যুদ্ধাপরাধীদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার এই প্রস্তাব জাতীয় সংসদে তোলেন। এর ওপর সংশোধনী প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার পর ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়ার সভাপতিত্বে সর্বসম্মতিক্রমে প্রস্তাবটি সংসদে গৃহীত হয়।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সাংসদ বাপ্পি তার প্রস্তাব সংসদে তোলার আগে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, “এটা অত্যন্ত সময়োপযোগী প্রস্তাব। মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের বিষয়ে পদক্ষেপ নিয়েছে।
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামিদের ফিরিয়ে আনতে গঠিত টাস্কফোর্সের সভার সিদ্ধান্ত তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, “দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের নামে-বেনামে থাকা সম্পত্তি খুঁজে বের করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু অতীতে দেখা গেছে, বাজেয়াপ্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হলেই কাগজপত্র বদলে যেতে পারে। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের কোনো সম্পত্তি এ দেশে রাখার অধিকার নেই। তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হবে।”
তারপরও কিছু জটিলতা থাকার কথা জানিয়ে আনিসুল হক বলেন, "যাদের ফাঁসি হয়েছে, তাদের সম্পত্তি ওয়ারিশের হাতে চলে গেছে। ফলে আইনের মাধ্যমে তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে সময় লাগবে। তবে যারা পলাতক রয়েছে, তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে কোনো অসুবিধা নেই। তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে সময় লাগবে না। পলাতকদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে”।
পরে ফজিলাতুন নেসা বাপ্পি ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকারীদের সব স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হউক’ সিদ্ধান্ত প্রস্তাবটি সংসদে উত্থাপন করেন। এ সময় বঙ্গবন্ধু হত্যার পূর্বাপর ঘটনাবলী তিনি সংসদে তুলে ধরেন।
এর ওপর সংশোধনী প্রস্তাব দেন নূরজাহান বেগম, অ্যাডভোকেট নাভানা আক্তার, আব্দুল মতিন, মনিরুল ইসলাম, সানজিদা খানম, মোহাম্মদ শামসুল হকসহ দশজন সাংসদ। তাদের প্রস্তাবে বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের পাশাপাশি ‘মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের’ এবং মূল প্রস্তাবের আগে ‘অবিলম্বে’ যুক্ত করার কথা বলা হয়।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বঙ্গবন্ধুর খুনি ও যুদ্ধাপরাধীদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের প্রস্তাবে সম্মতি দেন। এ প্রক্রিয়া চলমান থাকায় ‘অবিলম্বে’ শব্দটি যুক্ত করার কোনো প্রয়োজন নেই বলে মত দেন।
এরপর সিদ্ধান্ত প্রস্তাবের বিষয়টি স্পিকার ভোটে দিলে ‘অবিলম্ব’ শব্দটি বাদ দিয়ে তা গৃহীত হয়।
আইনমন্ত্রী জানান, প্রথমে বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হবে। তারপরে দণ্ডপ্রাপ্ত খুনিদের মধ্যে যাদের ফাঁসি হয়েছে, তাদের সম্পত্তি আইনের মাধ্যমে বাজেয়াপ্ত করা হবে। যারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে তাদের যেমন সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হবে, তেমনি যারা একাত্তরে ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা করেছে, সেই যুদ্ধাপরাধীদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তিও বাজেয়াপ্ত করা হবে।”
যুদ্ধাপরাধীদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে আইন করার কাজ শুরু হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, অবিলম্বে তা সংসদে উপস্থাপন করা হবে।
আইনমন্ত্রী বলেন, “বঙ্গবন্ধুর খুনীদের যতই ফাঁসি দেওয়া হোক, তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হোক না কেন, তারপরও রক্তক্ষরণ বন্ধ হবে না। যতদিন দেশ থাকবে, ততদিন তা বন্ধ হবে না।
উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন ধরেই বঙ্গবন্ধুর খুনী তথা যুদ্ধাপরাধীদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের জন্য দাবি জানিয়ে আসছিলেন একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের সর্বোচ্চ সাজার দাবিতে আন্দোলন করে আসা একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, গণজাগরণ মঞ্চসহ বিভিন্ন সংগঠন। কিন্তু প্রয়োজনীয় আইনি কাঠামো না থাকায় তা সম্ভব হয়নি। অবশেষে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় কার্যকর শুরু এবং বহু প্রতীক্ষিত একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরুর জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের ছয় বছর পর বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে এই সিদ্ধান্ত এল।
আপিল বিভাগে চূড়ান্ত নিষ্পত্তির পর এ পর্যন্ত ছয় যুদ্ধাপরাধীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। এরা হলেন- জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লা ও মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী এবং জামায়াতের শূরা সদস্য মীর কাসেম আলী।
এর বাইরে যুদ্ধাপরাধ মামলার আসামিদের মধ্যে কেবল জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রায় এসেছে আপিল বিভাগে। ট্রাইব্যুনালে তাকে দেওয়া সর্বোচ্চ সাজার রায় কমিয়ে আপিল বিভাগ আমৃত্যু কারাদণ্ডের যে রায় দিয়েছে, তার রিভিউ চেয়েছে দুই পক্ষই।
এছাড়া শুনানি চলার মধ্যেই মুক্তিযুদ্ধকালীন জামায়াত আমির গোলাম আযম ও বিএনপির সাবেক মন্ত্রী আবদুল আলীমের মৃত্যু হওয়ায় তাদের আপিলের নিষ্পত্তি হয়ে গেছে।