আজিমপুরের ৩ নারী জঙ্গিই শীর্ষ জঙ্গিদের স্ত্রী
প্রকাশ | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ১৪:০৪ | আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ১৪:২০
রাজধানীর আজিমপুরের জঙ্গি আস্তানা থেকে গ্রেপ্তার হওয়া তিন নারী জঙ্গিই তিন শীর্ষ জঙ্গির স্ত্রী। ঢাকার কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের সদস্যরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাদের বিস্তারিত পরিচয় উদ্ধার করেছে।
কর্মকর্তারা বলছেন, তিন নারী জঙ্গি একে অপরের পূর্ব-পরিচিত। একজন বাদে বাকিরা উচ্চশিক্ষিত। তিনজনই স্বামীর হাত ধরে জঙ্গি কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত হয়েছে। এছাড়া নিহত মেজর (অব.) জাহিদুল ইসলামের স্ত্রী পলাতক জেবুন্নাহার শীলাও উচ্চশিক্ষিত।স্বামীর মাধ্যমেই জঙ্গিবাদে আসে। কাউন্টার টেরোরিজম (সিটি) ইউনিট সূত্র এসব তথ্য জানায়।
কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার ছানোয়ার হোসেন বলেন, আজিমপুরের জঙ্গি আস্তানা থেকে আটককৃত জঙ্গিরা বর্তমানে পুলিশ প্রহরায় চিকিৎসাধীন রয়েছে। চিকিৎসা শেষে তাদের আদালতে সোপর্দ করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এরপর তাদের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানা যাবে।
কাউন্টার টেরোজিম ইউনিট সূত্র জানায়, আজিমপুরের আস্তানা থেকে তিন নারী জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলো নব্য ধারা জেএমবির শীর্ষ নেতা নূরুল ইসলাম মারজানের স্ত্রী আফরিন প্রিয়তী (২৫), নিহত জঙ্গি তানভীর কাদেরী বা আব্দুল করিমের স্ত্রী আবেদাতুল ফাতেমা খাদিজা (৩৫) এবং আরেক জঙ্গি নেতা জামান বাসারুজ্জামানের স্ত্রী শায়লা আফরিন (২৩)। জঙ্গি আস্তানায় অভিযানের ঘটনায় লালবাগ থানায় দায়ের করা মামলায় ওই তিন নারী জঙ্গির নাম স্বামীর নামের পাশাপাশি উল্লেখ করা হলেও তাদের স্থায়ী ঠিকানা নেই।
সূত্র জানায়, আফরিন প্রিয়তীর গ্রামের বাড়ি পাবনার ঈশ্বরদী এলাকায়। তার বাবা আব্দুল জলিল। মারজান তার খালাতো ভাই। চলতি বছরের জানুয়ারি মারজানের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। এরপর মারজানের সঙ্গে সে বাড়ি ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যায়।
সূত্র আরো জানায়, প্রিয়তী স্থানীয় একটি মাদ্রাসা থেকে আলিম পাস করেছে। এরপর আর পড়াশুনা করেনি। অপরদিকে, জঙ্গি বাশারুজ্জামানের স্ত্রী স্নাতকে পড়া অবস্থায় বছর দুয়েক আগে বাসা থেকে নিখোঁজ হয়। তার বাবার নাম আবুল হাসেম। এ ঘটনায় শায়লার পরিবারের পক্ষ থেকে রাজধানীর কলাবাগান থানায় একটি জিডিও করা হয়েছিলো। জামান বাশারুজ্জামান চকলেটের সঙ্গে বিয়ে হওয়ার পর জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ে সে। আস্তানা থেকে উদ্ধার করা রুহী নামে এক বছর বয়সী শিশুটি তার। ওই শিশুকে আস্তানায় রেখেই সে অভিযানে থাকা পুলিশ সদস্যদের ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল।
সিটি সূত্র জানান, তানভীর কাদেরী আব্দুল করিমের স্ত্রী আবেদাতুল আফরিন খাদিজা। পরিবারের সদস্যরা তাকে আশা নামে ডাকতো। তার বাবা কাউসার আহম্মেদ। আবেদাতুল আফরিন উচ্চশিক্ষিত। স্বামীর পাশাপাশি সেও একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতো। স্বামী তানভীর জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ার পর তার হাত ধরে সেও জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ে। এরপর দু’জনই একসঙ্গে চাকরি ছেড়ে দেয়। তার গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধা সদর উপজেলার বোয়ালি ইউনিয়নের পশ্চিম বাটকামারি এলাকায়।
সিটির কর্মকর্তারা জানান, তানভীর কাদেরীর পুরো পরিবারই জঙ্গিবাদে সম্পৃক্ত। তাদের যে দুই যমজ ছেলে রয়েছে বাবা-মায়ের হাত ধরে তারাও জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়েছে। এক ছেলে তাহরীম কাদেরী রাসেলকে জঙ্গি আস্তানা থেকে আটকের পর ওই মামলায় তাকে ৫ নম্বর আসামি করা হয়। আরেক ছেলেকে কথিত ‘জিহাদের পথে’ পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানা যায়।
এদিকে আজিমপুরের আস্তানা থেকে পালিয়ে যাওয়া নব্য ধারা জেএমবির সামরিক প্রশিক্ষক নিহত মেজর (অব.) জাহিদুল ইসলামের স্ত্রী জেবুন্নাহারকে হন্যে হয়ে খুঁজছে পুলিশ।
কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের কর্মকর্তারা জানান, জেবুন্নাহারকে খুঁজতে গিয়েই তারা আজিমপুরের জঙ্গি আস্তানাটির সন্ধান পান। কিন্তু অভিযানের আগেই সে ছোট মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে বাসা থেকে পালিয়ে যায়। তাকে ধরার জন্য নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে।
কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের এক কর্মকর্তা জানান, তাদের ধারণা জেবুন্নাহার অপর কোনও জঙ্গি সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে কোনও একটি আস্তানায় আত্মগোপন করে আছে।
জেবুন্নাহারের পরিবারের সদস্যরা জানান, জেবুন্নাহার আগে আধুনিক জীবন-যাপন করতো। জাহিদ জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ার পর তার মাধ্যমেই সেও জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ে। জাহিদের চাপাচাপিতে সে একপর্যায়ে বোরকা ও হিজাব পরতে শুরু করে।
পরিবারের সদস্যরা জানান, মেজর (অব.) জাহিদ আগে থেকেই নামাজ-কালাম পড়তো। কিন্তু বছর খানেক ধরে সে অতিমাত্রায় ধর্মকর্ম শুরু করে। একই সঙ্গে পরিবারের সদস্যদেরও প্রভাবিত করার চেষ্টা করে।
উল্লেখ্য, গত শনিবার রাতে লালবাগ থানাধীন আজিমপুরের ২০৯/৫ নম্বর পিলখানা রোডের একটি ছয় তলা ভবনের দ্বিতীয় তলায় অভিযান চালায় ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। পরে ওই বাসা থেকে তানভীর কাদরী জামসেদ হোসেন বা শমসের উদ্দিন বা আব্দুল করিম (৪০) নামে এক জঙ্গির মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। এসময় আহত অবস্থায় তিন নারী জঙ্গি ও নিহত করিমের ১৪ বছর বয়সী ছেলে তাহরীম কাদেরীকে আটক করা হয়।