মায়ের যোগ সাজোশে সৎ বাবা কর্তৃক মেয়ে ধর্ষণ!
প্রকাশ | ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ০১:১৩
জন্মের পরপরই বাবা বিদেশে চলে যান। এদিকে গ্রামে মায়ের সাথে থাকতো মেয়ে। এরই মধ্যে ঢাকাস্থ এক লোকের সাথে পরকীয়ার সম্পর্ক গড়ে উঠে মায়ের। মেয়ের বয়স ৮-৯ বছর হবার সময় থেকেই মায়ের সেই প্রেমিক মামা পরিচয়ে বাসায় আসা শুরু করে। ১০ বছর বয়সে মা জোর করে তাকে রাতে পাঠিয়ে দেন ঐ প্রেমিকের ঘরে। শুরু হয় সেই কথিত মামার নানা বিকৃত যৌন আচরণ। ২০১১ সালে মা সেই প্রেমিককে বিয়ে করার পর মাত্র ১৩ বছর বয়সে নিজের সৎ বাবার কাছে ধর্ষিত হয় মেয়েটি। এরকমই এক মর্মান্তিক ঘটনা উঠে এসেছে আজ ঐ নির্যাতিতার জবানবন্দিতে।
হেল্পএইড ফাউন্ডেশন এর সভাপতি ইফরীত জাহিন কুঞ্জ জানান, শনিবার বিকাল ৫ টার দিকে ডিএসইউ এর দুইজন সদস্য আমাকে ইনবক্সে নক করে আমার ফোন নাম্বার নেয়। নেয়ার পর এই ঘটনার বাদি আমাকে ফোন করে পুরো ঘটনা খুলে বলে। নির্যাতিতা মেয়েটি আমাকে জানায়, সৎ বাবার কাছে ধর্ষণের কথা সে মাকে জানালেও তাতে সে কোনো ভালো ফলাফল পায় নি। তখন তাকে জোর করে এবরশন করানো হয় মালিবাগ এর মেডিনোভা থেকে যেখানে তার বয়স জানানো হয় ১৭, অথচ তার বয়স তখন ছিলো ১৩ মাত্র তাও আবার ৬ মাসের অন্তঃসত্তা থাকাকালীন।
এদিকে বাদীর আসল বাবা দেশে এসে মায়ের পরকীয়া এর সব জেনে শুনে নির্যাতিতার মাকে তালাক দেয়। মেয়েটির বাবা তাকে নিজের কাছে রাখতে পারে নি, কারন মা রাখতে দেয় নি। মেয়ের মা তার লম্পট প্রেমিককে বিয়ে করে ২০১১ সালে। আর সেই সময় থেকেই এই ২য় বাবা মেয়েটিকে তার ইচ্ছে মতন যখন যেমন খুশি ব্যবহার করেছে। অগনিত বার ধর্ষণ করেছে। সর্বশেষ ২ সপ্তাহ আগেও তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে। তাকে পড়ালেখাও করতে দেয়া হতো না। এছাড়াও তার বড় বোনের স্বামীও তাকে কয়েকবার ধর্ষণ করেছে। মোট কথা সে যে বিচার চাইবে এমন কেউ ছিলো না তার পাশে। সবাই তাকে ব্যবহার করতে চাইতো। মা-বোন কেউই সাহায্য করতো না।
কুঞ্জ বলেন, মেয়েটির ঘটনা শোনার পরপরই আমি ডিবির দুইজন কমিশনার ইফতেখারুল ইসলাম ও কমিশনার নাজমুল সুমনকে অবহিত করি। ডিবি থেকে ফোন পেয়ে মুগদা থানা এর ওসি ঘটনাস্থল মদীনাবাগ এ তাৎক্ষণিকভাবে এস আই নিয়োগ করে প্রেরণ করেন এবং তালাবদ্ধ অবস্থা থেকে বাদীকে উদ্ধার করেন। সেখানে প্রেরণ করা হয় হেল্পএইড ফাউন্ডেশন এর সদস্য মাহাবুবুর রহমানকে যাতে সে নিজে উপস্থিত থেকে ভিক্টিমকে তার আইনি লড়াই লড়তে সাহায্য করেন।
মামলাকরণ ব্যাপারে জাস্টিস ফর উইমেন বাংলাদেশ এর প্রুতিষ্ঠাতা কুঞ্জ বলেন, আইনি জটিলতা আর মামলার ধরনের কারণে মামলা রুজু করতে সময় লেগে যায়। গতকাল রাত ২ টা পর্যন্ত থানায় অবস্থান করেন মাহবুবুর রহমান। কিন্তু রাতে মামলা গ্রহণ না হওয়াতে রবিবার সকাল ৮ টায় আবার থানায় গিয়ে উপস্থিত হয়ে বেলা ১২ টার মধ্যে মামলা এর কার্যক্রম সম্পন্ন করি। নির্যাতিতার সৎ বাবা মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান( ৫৫)কে আসামী করে (পিতা - মৃত আব্দুল লতিফ। আসামী পাওয়ার সম্ভাব্য ঠিকানা- গ্রাম- নাহারা, উপজেলা- কচুয়া, জেলা - চাঁদপুর) ৯(১) ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধনী ২০০৩, তৎসহ ৩১২ পেনাল কোড-১৮৬০, ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর পূর্বক ধর্ষণ, সাথে অবৈধ গর্ভপাত ঘটানোর অপরাধে মামলা করা হয়েছে।
কুঞ্জ জানান, পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়েই মেয়েটির মা ও সৎ বাবা ঘরে ১০ বছর ও ২ বছর বয়সী দুই শিশু সন্তানকে রেখে পালিয়ে যায়। এখনো তারা পলাতক।
এদিকে মামলার বাদীকে মেডিক্যাল চেকাপ করানোর জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু ঢাকা মেডিক্যাল আজকে বন্ধ থাকায় তা সম্ভব হয়নি। অতঃপর কোর্ট থেকে ম্যাজিস্ট্রেট এর নিকট আবেদন করে তাকে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার এ পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। কোর্ট নিজস্ব তত্ত্বাবধানে বাদীকে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার এ পৌঁছে দেবে বলে আশ্বাস প্রদান করে। বর্তমানে সে সুস্থ আছে।