ভোলার ‘শিশু’ জলিলকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশ

প্রকাশ : ২৫ মে ২০১৬, ১৭:২৩

জাগরণীয়া ডেস্ক

ধর্ষণ মামলায় ভোলার শিশু আব্দুল জলিলকে বিশেষ আইনে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ বাতিল করেছে হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ওই আসামিকে মুক্তি দিয়ে তাকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে রাষ্ট্রকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

এ সংক্রান্ত জেল আপিল নিষ্পত্তি করে হাইকোর্টের জ্যেষ্ঠ বিচারক এ এফ এম আবদুর রহমান এ রায় ঘোষণা করেন। বুধবার (২৫ মে) পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ পেয়েছে।

আদালত বলেছে, রাষ্ট্র পক্ষ কর্তৃক আসামি আবদুল জলিলকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ করাই যুক্তিযুক্ত। ২০০১ সালে ১৩ নভেম্বর থেকে আজ অবধি আবদুল জলিলকে ১৪ বছর যাবৎ জেলহাজতে আটক রেখে তার জীবনের যে ক্ষতি করা হয়েছে, তা অপূরণীয়। আসামি অপরাধী সাব্যস্ত না হওয়া পর্যন্ত আসামি পক্ষ আইনের দৃষ্টিতে সমান অধিকারপ্রাপ্তির অধিকারী। এই মামলায় নাবালক শিশু আবদুল জলিলকে সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।

তাই কিছুটা হলেও অর্থনৈতিকভাবে আসামি জলিলকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়ে তার জীবনের দুঃখ ঘোচাতে রাষ্ট্র পক্ষ বাধ্য।

রায়ের বিবরণীতে জানা যায়, ১৫ বছরের একটি শিশুর বিরুদ্ধে ধর্ষণের ঘটনায় ২০০১ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর ভোলার চরফ্যাশন থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ৯-এর ১ ধারায় আবদুল জলিলকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দেয় ভোলার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইবুনাল। ২০০৪ সালের ৩০ আগস্ট এ রায় দেওয়া হয়।

ওই রায়ের বিরুদ্ধে দণ্ডপ্রাপ্ত আবদুল জলিল জেল আপিল দায়ের করেন। কিন্তু হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ ওই জেল আপিল নিষ্পত্তি করতে গিয়ে দেখা যায়, ঘটনা ঘটার সময় আবদুল জলিলের বয়স ছিল ১৫ বছর। মামলার চার্জশিটেও তা উল্লেখ করা হয়েছিল। ফলে একজন নাবালক হিসেবে তার বিচার পুনরায় শিশু আদালতে করার জন্য ভোলার জেলা দায়রা জজকে নির্দেশ দেয়। একই সঙ্গে ওই সাজা বাতিল করে দেয় হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ।

এরপর ২০১০ সালে ৮ মার্চ ভোলার অতিরিক্ত দায়রা জজ জলিলকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের একই ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে আবারও যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। এই দণ্ডের বিরুদ্ধে জেল আপিল করেন জলিল। জেল আপিল নিষ্পত্তি করে বিচাপতি আবদুর রহমান যাবজ্জীবনের সাজা বাতিল করে কারা মুক্তির নির্দেশ দেন।

হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়, ভোলা জেলা দায়রা জজ আদালত কর্তৃক জুবেনাইল কোর্ট গঠন করা সত্ত্বেও চিলড্রেন অ্যাক্ট ৭৪ এর বিধান প্রতিপালন করা হয়নি। ফলে জলিলকে শিশু নির্যাতন দমন আইনে বিচার করে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। এতে জলিল বিচারের বদলে অবিচারের শিকার হয়েছেন। তাই জলিলের দণ্ডাদেশ বাতিল করা হয়।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত