বিয়ের ১০ মাস না পেরোতেই বাবার বাড়িতে ফিরলো গৃহবধূর মৃতদেহ
প্রকাশ | ১০ এপ্রিল ২০২৩, ১৫:৫৩
বিয়ের ১০ মাস না পেরোতেই বাবার বাড়িতে ফিরলো গৃহবধূ ইসরাত জাহান রিমা'র (১৯) মৃতদেহ। রিমা'র পরিবারের অভিযোগ, যৌতুকের জন্য মেয়েকে হত্যা করে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।
শুক্রবার (৭ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকার আগারগাঁও তালতলায় অবস্থিত সংসদ ভবনের কর্মচারী কোয়াটারের এগারোতলায় ফ্যানের সঙ্গে গলায় ওড়না পেঁচানো অবস্থায় রিমা'র মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। রিমা বরগুনা জেলার আমতলী পৌর শহরের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের নিবাসী মো. মান্নান হাওলাদারের কন্যা।
জানা গেছে, ২০২২ সালের ১৩ জুলাই কলেজ পড়ুয়া মেয়ে ইসরাত জাহান রিমার সঙ্গে কুকুয়া ইউনিয়নের মৃত হানিফ মোল্লার ছেলে সাদ্দাম হোসেনের বিয়ে হয়। সাদ্দাম হোসেন জাতীয় সংসদ ভবনের পরিবহন শাখার কম্পিউটার অপারেটরের চাকুরি করেন। বিয়ের সময় কনের বাবা মান্নান হাওলাদার মেয়ের সুখের কথা ভেবে সকল আসবাবপত্র ও প্রায় ৫ লাখ টাকা মূল্যের স্বর্ণ দিয়ে দেন। রিমা'র পরিবার সুত্রে জানা যায়, বিয়ের পর থেকেই শ্বাশুরী সাহিদা বেগম, ননদ আসমা বেগম ও ভগ্নিপতি মাসুদ রানা রিমাকে কারণে অকারণে নির্যাতন করতেন।
বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল) বিকেলে রিমার বাবার বাড়ি থেকে ঢাকায় বাসা করার জন্য যৌতুক হিসেবে টাকা এনে দিতে বললে অপারগতা প্রকাশ করেন রিমা। ফলে ওই দিন বিকেলে রিমাকে ব্যাপক নির্যাতন করা হয়। নির্যাতনের পর মানষিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন ওই গৃহবধূ। পরের দিন শুক্রবার (৭ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০টার সময় রিমা ফ্যানের সঙ্গে গলায় ওড়না পেচিয়ে আত্মহত্যা করেছে এমন মর্মে মৃতদেহ উদ্ধার করে স্বামী সাদ্দাম মোল্লার পরিবারের লোকজন। নিয়ে যাওয়া হয় শহীদ সোহরাওয়ার্দী হসপাতালে এবং রিমার বাবাকে আত্মহত্যার কথা জানায়।
রিমার বাবা মন্নান হাওলাদার অভিযোগ করে বলেন, ‘মেয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে শুক্রবার বিকেলে ঢাকায় পৌঁছে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখি আমার মেয়ের কপালে কাটা দাগ এবং থুতনি এবং গলায় আঘাতে চিহ্ন রয়েছে। আমার মেয়েকে ওরা যৌতুকের জন্য হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে রেখেছে।’
রিমার ভাই রাব্বি হাওলাদার বলেন,‘আমার বোন আত্মহত্যা করে নাই। আমার বোনের অর্ধেক হাটু খাটের উপর আর গলায় ফ্যানের সঙ্গে ওড়না ঝুলছে। এটা কিভাবে আত্মহত্যা হয়।’
প্রতিবেশী আলফি আক্তার জানান, ‘রিমা অত্যান্ত হাসি খুশি আর মিষ্টি স্বভাবের ছিল। এরকম একটি ছোট এবং সুন্দর মেয়েকে নরপশু না হলে মারতে পারে না।’
অভিযুক্ত স্বামী সাদ্দাম হোসেন মোল্লা স্ত্রীকে হত্যার কথা অস্বীকার করে বলেন, ‘সে নিজে অভিমান করে আত্মহত্যা করেছে। তার নিকট কোনো যৌতুক চাওয়া হয়নি। এবং নির্যাতনও করা হয়নি।’
ঢাকার শের-ই-বাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উৎপল বড়ুয়া বলেন, ‘রিমার মরদেহ ময়না তদন্ত করা হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘শুক্রবার বিকেলে রিমার বাবা মন্নান হাওলাদার বাদী হয়ে স্বামী সাদ্দাম হোসেন মোল্লা, শ্বাশুরী সাহিদা বেগম, ননদ আসমা বেগম ও তার স্বামী মাসুদ রানাকে আসামি করে একটি হত্যা প্ররোচনা মামলা দায়ের করেছেন।’
জাগরণীয়া.কম/ডিএ