‘আমি ঘুরছি, আমার পেছনে আমার মেয়ে ঘুরছে’

প্রকাশ : ২৫ আগস্ট ২০২০, ১৬:০৩

জাগরণীয়া ডেস্ক

কক্সবাজারের চকরিয়ায় গরু চুরির অভিযোগে চেয়ারম্যান কর্তৃক মা-মেয়ের কোমরে রশি বেঁধে রাস্তায় ঘোরানোর ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জেসমিন সুলতানা বলেন, ‘এটি একটি নারকীয় ঘটনা। কক্সবাজার পেকুয়া এলাকার চেয়ারম্যানের দ্বারা এমন নারকীয় ঘটনা ঘটানো প্রতিটি নারীর জন্য অবমাননাকর। চেয়ারম্যানের এমন কোনো ক্ষমতা নেই সে রশি দিয়ে বেঁধে মা ও মেয়েকে রাস্তায় ঘোরাতে পারে। এ ঘোরানো আমার কাছে মনে হচ্ছে আমি ঘুরছি, আমার পেছনে আমার মেয়ে ঘুরছে।’

নির্যাতনের ঘটনাটি উচ্চ আদালতের নজরে আনার পর এমন প্রতিক্রিয়া করেন আইনজীবী জেসমিন সুলতানা। এর আগে ২৪ আগস্ট (সোমবার) বিষয়টি হাইকোর্টের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের বেঞ্চের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জেসমিন সুলতানা ও এ এম জামিউল হক ফয়সাল।

জেসমিন সুলতানা বলেন, ‘আমরা কোর্টের কাছে তুলে ধরেছি, এটা সম্পূর্ণ মানবাধিকারের লঙ্ঘন। আমরা পত্রিকাগুলোর খবর আদালতের নোটিশে নিয়েছি। আদালত দেখেছেন। দেখার পরে আদালতকে ইনফর্ম করা হয়, প্রশাসন একটা ব্যবস্থা নিয়েছে ইনকোয়ারির জন্য। আদালত বললেন, যেহেতু একটা নির্দেশনা (ইনকোয়ারি) এসেছে এটার বাস্তবায়ন হয় কি না- এটা কী হচ্ছে আমরাও দেখি আপনারাও দেখেন।’

তিনি বলেন, ‘আপাতত আমরা মনে করি, সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টেও এ বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কোর্ট এবং জেলা প্রশাসন দুই পক্ষই ইনকোয়ারির ব্যবস্থা করেছে। আমরা এটার রিপোর্ট দেখি, আমরা মনে করি, এটাও ইতিবাচক দিক। আমরা এটার সুবিচার পাব।’

এদিকে ২৪ আগস্ট (সোমবার) চকরিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাজীব কুমার দেবের আদালত ওই মা ও মেয়ের জামিন মঞ্জুর করেন।

প্রসঙ্গত, গত ২২ আগস্ট (শনিবার) রাতে কক্সবাজারের চকরিয়ার হারবাংয়ে গরু চুরির অভিযোগে মা ও যুবতী মেয়েকে কোমরে রশি বেঁধে মারতে মারতে এলাকায় ঘুরিয়েছে স্থানীয় লোকজন। পরে সেখান থেকে তাদের হারবাং ইউনিয়ন পরিষদে এনে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়। এছাড়া গরুর মালিক চকরিয়ার হারবাং ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মো. মাহবুবুল হক চকরিয়া থানায় মামলা করেছেন। মামলায় এ দুই নারী এবং অজ্ঞাত সিনএজি চালকসহ ছয়জনকে আসামি করা হয়েছে। বর্তমানে পাঁচজনকেই কারাগারে পাঠানো হয়। ওই মামলার আসামিরা হলেন, কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার বারবাকিয়া ইউনিয়নের তিন নম্বর ওয়ার্ডের মোহাম্মদ ছুট্টু (২৭), চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার কুসুমপুর ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ডের শান্তিরহাট এলাকার শহীদের কলোনির পারভীন আক্তার (৪০), ছেলে মো. এমরান (২১), মেয়ে সেলিনা আক্তার শেলি (২৮) ও রোজি আক্তার (২৩)। প্রথমজন ছাড়া তিন নারী ও দুই পুরুষ একই পরিবারের সদস্য। এছাড়া মা-মেয়ের কোমরে রশি বেঁধে প্রকাশ্যে এলাকায় ঘোরানোর ঘটনায় জেলা প্রশাসকের নির্দেশে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে। এতে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শ্রাবস্তী রায়কে প্রধান করা হয়েছে। এই কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন- চকরিয়ার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও একজন হারবাং ইউনিয়নের ট্যাগ অফিসারকে দেয়া হয়েছে। এছাড়া চকরিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাজীব কুমার দেবের আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে একটি অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্ত করে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত