‘করোনা অব্যাহত থাকলে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে’
প্রকাশ | ২৭ এপ্রিল ২০২০, ১৫:০৪
প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের বর্তমান পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ ২৭ এপ্রিল (সোমবার) গণভবন থেকে রাজশাহী বিভাগের আট জেলার মাঠ প্রশাসনের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মতবিনিময়কালে একথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এখন স্কুল–কলেজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলব না। অন্তত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্কুল–কলেজ সবই বন্ধ থাকবে, যদি করোনা ভাইরাস অব্যাহত থাকে। যখন এটা থাকবে না, তখনই খুলব।’
তিনি বলেন, ‘কিছু কিছু জীবনযাপন আমাদের আস্তে আস্তে উন্মুক্ত করতে হবে। সেখানেও সবাই নিজেকে সুরক্ষিত রেখেই কাজ করবে।’
তিনি বলেন, ‘যেসব জায়গায় করোনাভাইরাস বেশি দেখা দেয়নি, ধীরে ধীরে সেই জায়গাগুলো শিথিল করে দিচ্ছি। যাতে মানুষের স্বাভাবিক জীবন অব্যাহত থাকে।’
মসজিদে সীমিত আকারে নামাজ পড়ার জন্য ইমাম-মুয়াজ্জিনসহ মুসল্লিদের ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবাইকে বলবো ঘরে বসে আল্লাহর কাছে দোয়া করেন। রমজানে আল্লাহর কাছে দোয়া করেন। যাতে বাংলাদেশ যেন এ দুর্যোগ থেকে মুক্তি পায়। সারা বিশ্বের মানুষ যেন মুক্তি পায়।
যারা হাত পেতে চাইতে পারে না, তাদের আলাদা করে তালিকা করতে হবে বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাঁদের জন্যও কার্ড করে দেওয়া হবে। এ ছাড়া সামনে ঈদ রেখে আরও এক দফা ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হবে।’
শেরপুর জেলার ভিক্ষুক নাজিমুদ্দিন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন এবং তাঁর কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একজন ভিক্ষুক ভিক্ষা করে ১০ হাজার টাকা জমা করেছিল নিজের ঘর ঠিক করার জন্য। ছেঁড়া একটি পাঞ্জাবি গায়ে। ঘরে খাবারও ঠিকমতো নেই। কিন্তু তারপরেও সেই মানুষ ওই ১০ হাজার টাকা তুলে দিয়েছে করোনা ভাইরাসে যাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত, তাঁদের সাহায্যের জন্য। আমি মনে করি, সারা বিশ্বে এটা মহৎ দৃষ্টান্ত তিনি সৃষ্টি করেছেন। এত বড় মানবিক গুণ আমাদের অনেক বিত্তশালীর মাঝেও দেখা যায় না। কিন্তু একজন নিঃস্ব মানুষ, যাঁর কাছে এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ওই টাকা দিয়ে সে অনেক কিছু করতে পারত। কোনো চিন্তা সে করেনি। সেটা তিনি দান করেছেন। এই যে একটা মহৎ উদারতা দেখালেন, বাংলাদেশের মানুষের মাঝে এখনো এই মানবিক বোধটা আছে। কিন্তু সেটা আমরা পাই, যারা নিঃস্ব তাঁদের কাছে। অনেক সময় দেখি, অনেক বিত্তশালী অনেক হা-হুতাশ করেই বেড়ান। কিন্তু তাঁদের নাই নাই অভ্যাসটা যায় না। তাঁদের চাই চাই ভাবটা সব সময় থেকে যায়।’
কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের ফসল ফলাতে হবে। আরও উৎপাদন বাড়াতে হবে। কারণ এ কৃষিটাই এখন আমাদের একমাত্র সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ফসল উৎপাদন হলে আমরা নিজেরা যেমন খেতে পারবো তেমনি অন্য কোনো দেশে যদি অভুক্ত মানুষ থাকে তাদেরও সাহায্য করতে পারবো। সেই মানসিকতা নিয়ে কাজ করবেন।’
আস্তে আস্তে বিধিনিষেধ শিথিল করার আভাস দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এরপর ফসল লাগাতে হবে বা কিছু কিছু জীবনযাপন আমাদের আস্তে আস্তে আমাদের উন্মুক্ত করতে হবে। সেখানেও সবাই নিজেকে সুরক্ষিত রেখেই কাজ করবেন।’
প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন খাতে প্রণোদনার কথা তুলে ধরে বলেন, ‘যাঁরা ঋণ নিয়ে ব্যবসা করেছেন, কিন্তু এই ভাইরাসের কারণে এই সময়ে ঋণের সুদ বেড়ে গেছে বলে চিন্তা করবেন না।’ তিনি এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করবেন, যাতে সুদ স্থগিত থাকে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেবে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বলছে, দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে কৃষির ওপর গুরুত্ব দিন। ধান কাটার পর সেই জমিও কাজে লাগান।’ দুধসহ পোলট্রি ফেলে না দিয়ে তা অল্প টাকায় বিক্রি ও মানুষের মাঝে বিলিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে সারা বিশ্ব স্তব্ধ। এই ভাইরাস মোকাবিলায় বাংলাদেশ যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর রোগ নিয়ন্ত্রণে কাজ করে যাচ্ছে। এটা অত্যন্ত সংক্রামক একটা ব্যাধি। কার যে কখন হবে, বোঝা যায় না। এই দুর্যোগ মোকাবিলায় দেশের সবাইকে এক হয়ে কাজ করতে হবে। যারা ভাইরাস মোকাবিলায় কাজ করছে, তাদের সহযোগিতা করতে হবে।’