সন্তানের জন্য দুধ কিনতে মাথার চুল বিক্রি করলেন মা

প্রকাশ | ২২ এপ্রিল ২০২০, ০২:০৩ | আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০২০, ০২:২৪

অনলাইন ডেস্ক

প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) কারণে লকডাউন চলায় দিনমজুর স্বামী পুরোপুরিভাবে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। মহামারির ভেতর দু’দিন সন্তানের মুখে খাবার তুলে দিতে না পেরে শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে নিজের মাথার চুল বিক্রি করে সন্তানের জন্য দুধ কিনলেন এক অসহায় মা সাথী বেগম।

অভাবের সংসারে একটু স্বচ্ছলতার আশায় গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ থেকে চার মাস আগে স্ত্রী সাথী বেগম ও দুই সন্তান নিয়ে রাজধানীর মিরপুরে আসেন দিনমজুর মানিক। পরে সেখান থেকে এক মাস আগে সাভারের ব্যাংক কলোনি এলাকায় নান্নু মিয়ার একটি টিনশেড ঘর ভাড়া নেন তারা।

করোনার কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে কর্মহীন হয়ে পড়ায় গত দু’দিন ধরে ঘরে তাদের আঠারো মাস বয়সের সন্তানের দুধসহ কোনো খাবারই নেই। তাই ত্রাণের সন্ধানে অনেকের কাছে গেলেও কোথাও পাননি সহায়তা। অবশেষে সোমবার (২০ এপ্রিল) বিকেলে রাস্তায় সাথী বেগমের সঙ্গে পরিচয় হয় ঝরে পড়া চুল ক্রেতা এক হকারের। হকারকে নিজের মাথার চুল দেখিয়ে বিক্রি করলে কত টাকা পাবেন জানতে চান তিনি অসহায় মা। হকার জানান- ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা দেবেন। কিন্তু মাথার চুল কেটে দেওয়ার পর তার হাতে মাত্র ১৮০ টাকা ধরিয়ে দিয়ে চলে যান হকার।


দুই সন্তানের জননী সাথী বলেন, আমরা সাভারে নতুন আসছি। আমি বাড়ি বাড়ি কাজ করি ও আমার স্বামী মাঝে মধ্যে রিকশা চালায় আবার মাটিও কাটে। করোনার কারণে আমাদের দুই জনেরই কাজ বন্ধ হয়ে গেছে কয়েদিন ধরে। ঘরে যে টাকা ছিল তা দিয়ে কয়দিন চলছি। কিন্তু দুইদিন ধরে তাও শেষ হয়ে যাওয়া না খেয়ে ছিলাম পোলাপান নিয়া। পরে ত্রাণের জন্য অনেকের কাছে গেলেও কেউ সহায়তা করে নাই। তাই উপায় না পাইয়া  হকারের কাছে ১৮০ টাকার চুল বিক্রি করে ছেলেটার জন্য দুধ আর আমাদের জন্য দুই কেজি চাল কিনছি।

কেন চুল বিক্রি করলেন? খাবারে জন্য কি কাউকে বলেছিলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, এখানে নতুন আসার কারণে তেমন কারও সঙ্গে তাদের পরিচয় নেই। কয়েক জায়গায় গেছেন কিন্তু কোথাও সাহায্য পাননি।

বিষয়টি সাভার উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভুমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল্লাহ আল মাহফুজকে জানানো হলে তিনি তড়িৎ ব্যবস্থা গ্রহণ করে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তাকে নগদ ছয় হাজার টাকা আর্থিক সাহায্য এবং ১৫ দিনের খাদ্যসামগ্রী উপহার দেন।

তিনি বলেন, গণমাধ্যমকর্মীদের মাধ্যমে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে খাবারসহ আর্থিক সহয়তা দেওয়া হয়ে।