গ্রেপ্তার হলেন ওসি মোয়াজ্জেম

প্রকাশ : ১৬ জুন ২০১৯, ১৭:৫৯

জাগরণীয়া ডেস্ক

গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির ২০ দিন পর ১৬ জুন (রবিবার) ফেনীর সোনাগাজী থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। নিহত মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির সঙ্গে কথোপকথনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত ওসি মোয়াজ্জেমকে রাজধানীর শাহবাগ থানাধীন কদম ফোয়ারার সামনে থেকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে।

গত ২৭ মে ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করেন যা ৩১ মে ফেনীর পুলিশ সুপার কার্যালয়ে পৌঁছায়। বারবার অস্বীকার করার পর ৩ জুন পুলিশ সুপার কাজী মনির-উজ-জামান পরোয়ানা হাতে পাওয়ার কথা স্বীকার করেন। এর দুই দিন পর বিশেষ বার্তাবাহকের মাধ্যমে পরোয়ানা রংপুর রেঞ্জে পাঠানো হলেও রংপুর রেঞ্জ জানায়, কাজটি বিধি মোতাবেক হয়নি।

গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নিয়ে এমন টালবাহানার মধ্যে সরকার ও পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয় ফেনীর সোনাগাজী থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেন পালিয়ে গেছেন। তবে ওসি মোয়াজ্জেমকে গ্রেপ্তার করার ব্যাপারে আশাবাদী ছিলেন পুলিশ ও সরকারের ঊর্ধ্বতনরা।

রবিবার পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) সোহেল রানা জানান, ওসি মোয়াজ্জেমকে গ্রেপ্তারের পর তাকে শাহবাগ থানায় রাখা হয়েছে।

পুলিশের রমনা জোনের ডিসি মারুফ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, সোনাগাজী থানায় তার (ওসি মোয়াজ্জেম) নামে অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট আছে। কিন্তু আমাদের এই থানায় তার নামে কোনো মামলা নেই। তাই আমাদের জিজ্ঞাসাবাদ করার কোনো কারণ নেই। গ্রেপ্তারের পরপরই আমরা সোনাগাজী থানায় যোগাযোগ করেছি। সেই থানার প্রতিনিধি এলে তাদের কাছে মোয়াজ্জেমকে হস্তান্তর করা হবে। যতক্ষণ হস্তান্তর না করা হবে ততক্ষণ তাকে শাহবাগ থানায় রাখা হবে। আদালতে কখন তুলবে এটা সোনাগাজী থানা পুলিশের সিদ্ধান্ত।

উল্লেখ্য, গত ৬ এপ্রিল মাদ্রাসা অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের মামলা তুলে না নেয়ায় পাঁচজন মিলে ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। যৌন নিপীড়নের মামলায় কারাগারে গেলেও জেলে বসেই নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যার পরিকল্পনা করেন ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসা অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা। মৃত্যুর সাথে লড়াই করে শেষ পর্যন্ত ১০ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করে যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের প্রতীক নুসরাত। শরীরের ৮০ শতাংশের বেশি পুড়ে যাওয়া নুসরাতকে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে এবং ঢামেকের বার্ন ইউনিটের আইসিউতে চিকিৎসা দেয়া হয়। তার চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিতে কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ঐ ছাত্রীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর নেয়ার কথা থাকলেও মেয়েটির শারিরীক অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় শেষ মুহুর্তে তা সম্ভব হয়নি।

এ ঘটনায় মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে প্রধান আসামি এবং আটজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত পরিচয় আরও ৪/৫ জনকে আসামি করে নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান ৮ এপ্রিল সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন।

আলোচিত এ মামলায় এ পর্যন্ত ২০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ও পিবিআই।

এই ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার কারণে গত ১০ এপ্রিল সোনাগাজী থেকে ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে প্রত্যাহার করা হয়। এরপর গত ৮ মে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করার পর রংপুর রেঞ্জে সংযুক্ত করা হলে মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহে তিনি রংপুর রেঞ্জ অফিসে যোগ দেন।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত