আদালতে হট্টগোল, নুসরাতের পরিবারকে হত্যার হুমকি
প্রকাশ | ৩১ মে ২০১৯, ১০:৫২ | আপডেট: ৩১ মে ২০১৯, ২২:৪২
যৌন নিপীড়নের প্রতিবাদ করায় ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে আগুন দিয়ে হত্যার ঘটনায় অভিযোগপত্রভুক্ত ১৬ আসামি আদালতে গিয়েও হট্টগোল আর মামলার বাদীসহ নুসরাতের পরিবারকে হত্যার হুমকি দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বাদী নুসরাতের ভাই আবদুল্লাহ আল নোমান।
৩০ মে (বৃহস্পতিবার) মামলার শুনানির জন্য চার্জশিটের ১৬ আসামিসহ এ মামলায় মোট গ্রেপ্তার ২১ জনকে আদালতে হাজির করা হলে আদালতে প্রাঙ্গণে ব্যাপক সোরগোল আর বাদীকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়। এসময় মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবি রফিকুল ইসলাম খোকনকেও হত্যার হুমকি দেয়া হয়।
বাদী নুসরাতের ভাই আবদুল্লাহ আল নোমান অভিযোগ করেন, “আসামিদের মধ্যে কয়েকজন আদালতে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে। আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।”
বাদীর আইনজীবী রফিকুল ইসলাম খোকনও একই অভিযোগ করে বলেন, “আসামিদের হাজতখানা থেকে এজলাসে আনা হলে কয়েকজন তেড়ে এসে মামলার বাদী ও আইনজীবীদের হত্যার হুমকি দেয়। আইনজীবীরা বিষয়টি আদালতকে জানালে বিচারক আদালতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের নির্দেশ দেন পুলিশকে। পরে পিবিআই আদালতে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।”
জেলার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মো. মনিরুজ্জামান বলেন, “আদালতে আসামিরা হট্টগোল করলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তবে নিরাপত্তা নিয়ে নুসরাতের পরিবারের কোনো ধরনের শঙ্কা নেই। নুসরাতের পরিবারকে ঘটনার দিন থেকে পুলিশি নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে।”
উল্লেখ্য, ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে আগুন দিয়ে হত্যার ঘটনায় মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা ও ফেনী আওয়ামী লীগের দুই নেতাসহ মোট ১৬ জনের মৃত্যুদণ্ড চেয়ে চার্জশিট জমা দিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
এর আগে গত ২৮ মে সকালে ধানমন্ডিতে পিবিআই সদর দফতরে নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলার তদন্তের সর্বশেষ অগ্রগতি জানাতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) প্রধান বনজ কুমার মজুমদার।
চার্জশিটে যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তারা হলেন- এস এম সিরাজউদ্দোলা (৫৭), নুর উদ্দিন (২০), শাহাদাত হোসেন শামীম(২০), মাকসুদ আলম ওরফে মোকসুদ কাউন্সিলর (৫০), সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের(২১), জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন (১৯), হাফেজ আব্দুল কাদের (২৫), আবছার উদ্দিন (৩৩), কামরুন নাহার মনি (১৯), উম্মে সুলতানা ওরফে পপি ওরফে তুহিন ওরফে চম্পা/শম্পা (১৯), আব্দুর রহিম শরীফ (২০), ইফতেখার উদ্দিন রানা (২২), ইমরান হোসেন ওরফে মামুন (২২), মোহাম্মদ শামীম (২০), রুহুল আমিন (৫৫), মহিউদ্দিন শাকিল (২০)।
চার্জশিটে ১৬ জনের প্রত্যেকের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড চেয়েছে পিবিআই।
গত ৬ এপ্রিল মাদ্রাসা অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের মামলা তুলে না নেয়ায় পাঁচজন মিলে ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। যৌন নিপীড়নের মামলায় কারাগারে গেলেও জেলে বসেই নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যার পরিকল্পনা করেন ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসা অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা। মৃত্যুর সাথে লড়াই করে শেষ পর্যন্ত ১০ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করে যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের প্রতীক নুসরাত। শরীরের ৮০ শতাংশের বেশি পুড়ে যাওয়া নুসরাতকে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে এবং ঢামেকের বার্ন ইউনিটের আইসিউতে চিকিৎসা দেয়া হয়। তার চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিতে কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ঐ ছাত্রীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর নেয়ার কথা থাকলেও মেয়েটির শারিরীক অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় শেষ মুহুর্তে তা সম্ভব হয়নি।
এ ঘটনায় মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে প্রধান আসামি এবং আটজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত পরিচয় আরও ৪/৫ জনকে আসামি করে নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান ৮ এপ্রিল সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন।