চলন্ত বাসে ধর্ষণ ও হত্যা: রাজধানীতে সহকর্মীদের বিক্ষোভ
প্রকাশ | ০৯ মে ২০১৯, ১৮:২৬ | আপডেট: ০৯ মে ২০১৯, ১৮:৩৭
কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরে চলন্ত বাসে নার্স শাহিনুর আক্তার তানিয়াকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবীতে মানববন্ধন করেছেন তার সহকর্মী চিকিৎসক, নার্স ও ছাত্রছাত্রীরা।
০৭ মে (বুধবার) দুপুর ১২টায় রাজধানীর কল্যাণপুরের ইবনে সিনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, নারীরা আজ সমাজে নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েছে। ফলে নারীর অগ্রযাত্রায় নিরাপত্তাহীনতা আজ প্রধান অন্তরায়। বক্তারা তানিয়ার ধর্ষক ও হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন- ইবনে সিনা মেডিক্যাল কলেজের সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা: মো: মহিবুল আজিজ, এনাটমি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা: মো: হাবিবুর রহমান, মানসিক রোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা: ফাহমিদা আহমেদ, মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ডিজিএম (অ্যাডমিন) মো: আশরাফুল ইসলাম, ইবনে সিনা নার্সিং ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ আছিয়া বেগম ও এজিএম (অ্যাডমিন) এ কে এম খোরশেদ আলম, ইবনে সিনা মেডিক্যাল কলেজের ম্যানেজার (অ্যাডমিন) মো: আমিনুর ইসলাম, ভাইস প্রিন্সিপাল শিরিন সুলতানা, মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কাস্টমার কেয়ার ইনচার্জ মো: বেলাল হোসাইন।
সংহতি প্রকাশ করে মানববন্ধনে অংশ নেন- ইবনে সিনা মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকবৃন্দ, ইবনে সিনা নার্সিং ইনস্টিটিউটের ছাত্রছাত্রী, স্বাধীনতা নার্সেস পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব মো: ইকবাল হোসাইন প্রমুখ।
উল্লেখ্য, ৬ মে (সোমবার) বিকালে ঢাকার মহাখালী থেকে স্বর্ণলতা পরিবহনের একটি বাসে করে বাজিতপুর উপজেলার পিরিজপুর যাচ্ছিলেন তানিয়া। বাসটি রাত সাড়ে ৯টার দিকে কটিয়াদি আসার পর তানিয়া ও অন্য দুই যাত্রী ছাড়া সবাই নেমে যায়। উজানচর এলাকায় ওই দুই যাত্রীও নেমে যায়। বাসটি গজারিয়া এলাকায় পৌছালে চালক ও সহকারীরা তাকে চলন্ত বাসে ধর্ষণ ও হত্যা করে রাস্তায় ফেলে দেয়। সেখান থেকে এলাকাবাসী তাকে কটিয়াদি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
তানিয়ার বড় ভাই বাদল মিয়ার অভিযোগ, ধর্ষণের পর গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে তার বোনকে হত্যা করা হয়েছে।
এ ঘটনায় বাসের চালক নুরুল ইসলাম ও সহযোগি লালনসহ আরও পাঁচ জনকে আটক করে পুলিশ। তবে থানা হেফাজতে চালক নুরুল ইসলাম শুরু থেকেই ধর্ষণের অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি দাবি করেন, মেয়েটি হঠাৎ করে জানালা দিয়ে লাফ দেন। কিন্তু বাসা থেকে মাত্র ১০ মিনিট দূরত্বে থাকা বাস থেকে মেয়েটি কেন হঠাৎ লাফিয়ে পড়লেন- সে প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেনি চালক।
৭ মে (মঙ্গলবার) দিনগত রাতে নিহত তানিয়ার বাবা গিয়াস উদ্দিন বাদী হয়ে চার জনের নামোল্লেখসহ অজ্ঞাত বেশ কয়েকজনকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন বাজিতপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় বাসটির চালক ও চালকের সহকারীসহ পাঁচ জনকে গ্রেপ্তার করে রিমাণ্ডে নিয়েছে পুলিশ।
মঙ্গলবার বিকেলে ঐ তরুণীর ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি মেডিকেল বোর্ড তানিয়ার ময়না-তদন্ত সম্পন্ন করে। পরে রাতেই তার মরদেহ পরিবারকে হস্তান্তর করা হয়। পরিবারের পক্ষ থেকে তানিয়ার বড় ভাই মরদেহ বুঝে নেন।
কিশোরগঞ্জ জেলা হাসপাতালের ডা. রমজান মাহমুদ বলেন, ময়নাতদন্তে ধর্ষণ ও আঘাতজনিত কারণে ওই তরুণীর মৃত্যুর আলামত মিলেছে। এছাড়া ডিএনএ ও প্যাথলজিক্যাল টেস্টের জন্য আলামত সংগ্রহ করে রাখা হয়েছে।
নিহত শাহিনুর আক্তার তানিয়া (২৩) কটিয়াদি উপজেলার লোহাজুড়ি ইউনিয়নের বাহেরচর গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের মেয়ে। তিনি রাজধানী ঢাকায় ইবনে সিনা হাসপাতালে নার্স হিসাবে কর্মরত ছিলেন বলে পরিবার জানিয়েছে।