ছাত্রীকে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টা: অধ্যক্ষসহ তিন আসামি রিমাণ্ডে

প্রকাশ : ১০ এপ্রিল ২০১৯, ১৭:১৮

জাগরণীয়া ডেস্ক

ফেনীর সোনাগাজীতে আগুনে পুড়িয়ে মাদ্রাসাছাত্রীকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় দায়ের করা মামলার প্রধান আসামি সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।

১০ এপ্রিল (বুধবার) গ্রেপ্তার তিন আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করলে শুনানি শেষে আদালত মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলার সাত দিনের এবং অপর দুই আসামি ওই মাদ্রাসার প্রভাষক আফসার উদ্দিন ও আরিফুল ইসলামকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে পাঠায়। ফেনীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম শরীফ উদ্দিন আহমেদ এ আদেশ দেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সোনাগাজী মডেল থানার পরিদর্শক কামাল হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 

তিনি আরও জানান, এ মামলার এজাহরভুক্ত আসামি জোবায়ের আহমেদ এবং সন্দেহভাজন হিসেবে আটক সিরাজ উদ-দৌলার ভাগ্নি উম্মে সুলতানা পপিকেও সাত দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করা হয়েছে। সেই আবেদনের শুনানি এখনো হয়নি।

গত ৬ এপ্রিল (শনিবার) সকালে পৌরশহরের সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে আলিম পরীক্ষা দিতে এসে অগ্নিদগ্ধ হন ঐ ছাত্রী।

ছাত্রীর ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বলেন, ওই ছাত্রীকে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা তার নিজের কক্ষে ডেকে নিয়ে রাফিকে শ্লীলতাহানি করেন অভিযোগে গত ২৭ মার্চ একটি মামলা করা হয়েছে। ওই মামলায় এখনো কারাগারে আছেন ঐ অধ্যক্ষ। ঘটনার পর থেকে অধ্যক্ষের মুক্তির দাবিতে ও অধ্যক্ষের শাস্তির দাবিতে শিক্ষার্থীদের দু'টি অংশ আলাদা আলাদাভাবে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন।

বোনের বরাত দিয়ে নোমান বলেন, রাফি এ বছর আলিম পরীক্ষা দিচ্ছেন। শনিবার সকালে রাফির আরবি প্রথমপত্র পরীক্ষা থাকায় বোনকে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে নিয়ে যান তিনি। সেসময় কয়েকজন ছাত্র ও অফিস সহকারী মো. মোস্তফা তাকে মাদ্রাসায় ঢুকতে বাধা দিলে তিনি বোনকে কেন্দ্রে দিয়ে চলে যান। পরে পরীক্ষাকেন্দ্রে ঢুকার পর মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার পক্ষের কয়েকজন শিক্ষার্থী নুসরাতকে মাদ্রাসার ছাদে ডেকে নিয়ে তাকে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা তুলে নিতে চাপ দেন। কিন্তু রাফি এ ব্যাপারে সম্মতি না দেয়ায় তিনজন শিক্ষার্থী মিলে তার হাত ধরে রেখে তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়। এসময় তার চিৎকারে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা ছুটে এসে দ্রুত তাকে উদ্ধার করে প্রথমে সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে ফেনী সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু তার অবস্থা বিবেচনায় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠান। শরীরের ৮০ শতাংশের বেশি পুড়ে যাওয়া ওই ছাত্রী এখন ঢামেকের বার্ন ইউনিটের আইসিউতে চিকিৎসাধীন। তার চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিতে কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ঐ ছাত্রীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর নেয়ার কথা থাকলেও বর্তমানে মেয়েটির শারিরীক অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় তা এখনই সম্ভব হচ্ছে না। 

আসামির তালিকায় নাম থাকা বাকি সাতজন হলেন- পৌর কাউন্সিলর মাকসুল আলম, প্রভাষক আবছার উদ্দিন, সাবেক ছাত্র শাহাদাত হোসেন শামীম, সাবেক ছাত্র নূর উদ্দিন, জাবেদ হোসেন, জোবায়ের আহম্মদ ও হাফেজ আবদুল কাদের। এছাড়া বোরকা পড়া অজ্ঞাত চারজনকে এই মামলার আসামি করা হয়েছে। 

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত