ধর্ষণের পর পুলিশের সহায়তায় নারীকে ইয়াবা মামলায় ফাঁসানো
প্রকাশ | ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৬:৫৫
ধর্ষণের পর নির্জন স্থানে ফেলে রেখে ইয়াবা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে এক নারীকে। এতে তিন পুলিশ সদস্য ও ঐ নারীর স্বামীর প্রথম স্ত্রীর সন্তানেরা সহ ১৩ জন জড়িত রয়েছেন। আদালতের নির্দেশে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এবং চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের তদন্তে বিষয়টি উঠে এসেছে।
২২১ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্পত্তির ভাগ না দিতে ওই নারীকে ধর্ষণের পর ইয়াবা মামলায় ফাঁসানো হয়। এই ঘটনায় তিন পুলিশ সদস্য সম্পৃক্ত থাকার সত্যতা পাওয়া গেছে।
দুটি সংস্থার প্রতিবেদনে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হলেন সীতাকুণ্ড থানার সাবেক ওসি ইফতেখার হাসান, উপপরিদর্শক (এসআই) সিরাজ মিয়া, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) জাকির হোসাইন, ওই নারীর স্বামীর মৃত প্রথম স্ত্রীর ছেলে, তার স্ত্রী, বড় মেয়ে, তার স্বামী, ছেলের শ্যালক, তাদের চার সহযোগী ও ওই নারীর প্রথম স্বামী।
গত বছরের ২৯ আগস্ট বিকেলে ওই নারীকে নিয়ে তার স্বামী হালিশহর থানায় গিয়ে অভিযোগ করেন, তার প্রথম স্ত্রীর সন্তানেরা দ্বিতীয় স্ত্রীকে নানাভাবে লাঞ্ছিত করছেন এবং ইয়াবা দিয়ে ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন। সেদিন রাতেই ঐ নারীর স্বামী বাসায় ফিরে দেখেন জিনিসপত্র এলোমেলো, স্ত্রী নেই। পরদিন দুপুরে খবর পান, তার স্ত্রী ইয়াবাসহ সীতাকুণ্ড থানায় গ্রেপ্তার হয়েছেন এবং তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। স্ত্রীকে উদ্ধার করতে তিনি মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ করে আদালতে পালটা মামলা করেন। প্রথম স্ত্রী ও তাদের সন্তানদের ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর কথা উল্লেখ করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন তিনি। তার স্ত্রীও ধর্ষণ, অপহরণ ও ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর বর্ণনা দিয়ে আদালতে জবানবন্দি দেন। পরে আদালতের নির্দেশে তদন্তে আসল ঘটনা বের হয়।
যা ঘটেছিল সেদিন: পিবিআই ও ডিবির তদন্ত থেকে জানা যায়, নগরের হালিশহরের বাসা থেকে ওই নারীকে অচেতন করে মাইক্রোবাসযোগে সীতাকুণ্ডের কুমিরা গেট এলাকার নির্জন স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। এর আগে তার কোমরে দুই হাজার ইয়াবা বড়ির একটি ব্যাগ গুঁজে রাখা হয়। রাত দেড়টার দিকে ওই এলাকায় দায়িত্বরত পুলিশের এসআই সিরাজ মিয়া দলবল নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে ইয়াবাগুলো জব্দ করেন। ইয়াবা উদ্ধারের সময় নারী কনস্টেবল না থাকলেও এতে নারী কনস্টেবল হালিমা আক্তারসহ চারজনকে সাক্ষী রাখা হয়। হালিমা আক্তারের কাছ থেকে জোর করে সই নেওয়া হয় জব্দ তালিকায়। উদ্ধারের সময় ঐ নারী অচেতন থাকায় তাকে সীতাকুণ্ড স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক ভর্তির পরামর্শ দেন এবং এটা ‘পুলিশ কেইস’ বলেও জানান। কিন্তু তা না শুনেই পরদিন সীতাকুণ্ড থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে করা মামলায় ওই নারীকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।