‘গাড়িতে তুলে মেয়েটিকে ধর্ষণ করে শাহাবউদ্দিন ও তার সহযোগী’
প্রকাশ | ৩০ জানুয়ারি ২০১৯, ১৪:৫১ | আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০১৯, ১৫:০৯
পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত শাহাব উদ্দিনের পরিকল্পনায় চট্টগ্রামে মাদ্রাসা ছাত্রীকে ধর্ষণ করা হয়েছিল আর এতে সহযোগী ছিল শ্যামল দে - এমনটাই জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) এস এম মেহেদী হাসান।
নিহত শাহাব উদ্দিন কক্সবাজার জেলার কুতুবদিয়া মধ্যম কয়ারবিল এলাকার মফজল মিয়ার ছেলে। তিনি নগরের চেরাগী পাহাড় এলাকার এক চিকিৎসকের প্রাইভেট কার চালক বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ ঘটনায় গ্রেফতার শ্যামল দে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পদুয়া কালিপাহাড় এলাকার হরি কুমার দে’র ছেলে। তিনি জামালখান আইডিয়াল স্কুল সংলগ্ন এলাকার এক ব্যাংক কর্মকর্তার প্রাইভেট কার চালক।
সোমবার গভীর রাতে ফিরিঙ্গিবাজার মেরিনার্স রোডে গুলিতে শাহাবউদ্দিন (২৩) নিহত হওয়ার পর ২৯ জানুয়ারি (মঙ্গলবার) কোতোয়ালী থানায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ঘটনার বিস্তারিত জানায় পুলিশ। এর আগে বিকেলে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ খাইরুল আমীনের আদালতে গ্রেপ্তার শ্যামল দে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।
পুলিশ কর্মকর্তা এস এম মেহেদী হাসান বলেন, ‘গত ২৭ জানুয়ারি (রবিবার) সকালে মাদ্রাসায় যাওয়ার পথে জামালখান মোড়ের পিডিবি আবাসিক এলাকার সামনে মেয়েটিকে দেখে একটি প্রাইভেটকার দাঁড়ায়। এসময় মেয়েটির কাছে রিমা কমিউনিটি সেন্টার কোন দিকে জানতে চান শাহাব উদ্দিন। মেয়েটি তাদেরকে রিমা কমিউনিটি সেন্টার দেখিয়ে দেওয়ার পরেও তারা না চেনার ভান করে মেয়েটি কোন দিকে যাবে জানতে চায়। মেয়েটি ওই পথে যাবে জানালে তাকে অনুরোধ করে প্রাইভেট কারের পেছনে উঠার জন্য এবং তাকে সামনে নামিয়ে দেওয়ার কথা জানায় তারা।’
তিনি বলেন, ‘মেয়েটি সরল বিশ্বাসে গাড়িতে উঠার পর তারা তা চালিয়ে চলে যায়। পরে তারা অস্ত্রের মুখে পালাক্রমে মেয়েটিকে ধর্ষণ করে। এ সময় তারা মেয়েটির মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে ও মোবাইল ফোনে ধর্ষণ চিত্র ধারণ করার অভিনয় করে তাদের সাথে যোগাযোগ রাখতে মেয়েটিকে হুমকি দেয়।’
পরেরদিন ২৮ জানুয়ারি (সোমবার) মেয়েটির সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করে দেখা করতে বলে শাহাব উদ্দিন। তা না হলে তার ভিডিও ফাঁস করার হুমকি দেয় সে। এরপর মেয়েটি থানায় এসে পুলিশকে বিষয়টি জানায়।
উপ-কমিশনার মেহেদী বলেন, গাড়িচালকদের একটি চক্র এ ধরনের অপরাধ করে আসছে বলে পুলিশের কাছে অভিযোগ ছিল। সোমবার মেয়েটি এসে একই ধরনের অভিযোগ করে।
তিনি বলেন, ‘মেয়েটিকে সেখানে দাঁড় করিয়ে আমরা ফাঁদ পাতি। এ সময় শাহাবউদ্দিন তার অপর এক সহযোগীকে নিয়ে সেখানে আসে। মেয়েটি গাড়ির সামনে গেলে তাকে টেনে তুলে চকবাজারের দিকে দ্রুত চলে যায়। গাড়িটিকে ধাওয়া করে পুলিশ গাড়ির নম্বরটি বিভিন্ন স্থানে ওয়্যারলেসে মেসেজ দেয়। পরে বিভিন্ন স্থানে পুলিশ ব্যারিকেড দেয়। গাড়িটি বিভিন্ন দিকে ঘুরে লালদিঘীর মাঠের সামনে পৌছালে শাহাবউদ্দিন মেয়েটিকে রেখে গাড়ি থেকে নেমে হকার্স মার্কেটের ভেতর দৌঁড়ে ঢুকে যায়।’
পরে লালদিঘীর মাঠের সামনে থেকে গাড়িটি আটক করে মেয়েটিকে উদ্ধার করা হয় বলে জানান তিনি। সোমবার রাতে চকবাজার ডিসি রোড থেকে শ্যামলকে গ্রেপ্তারের পর ধর্ষণের ঘটনায় ব্যবহৃত প্রাইভেটকারটি আটক করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পরে শাহাব উদ্দিনকে ধরতে ফিরিঙ্গিবাজারে অভিযানে যায় পুলিশের একটি দল। সেসময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে গুলি চালায় শাহবুদ্দিন। পুলিশও তখন পাল্টা গুলি চালায়। পরে সেখানে শাহাবুদ্দিনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়।
সোমবার সন্ধ্যায় নিহত শাহাবউদ্দিন অন্য যাকে নিয়ে মেয়েটির সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন, তার নামও শাহাবউদ্দিন বলে জানান পরিদর্শক কামরুজ্জামান।
“তার ঠিকানাও সংগ্রহ করা হয়েছে। তাকে ধরতে অভিযান চলছে,” বলেন তিনি।