তনুর ময়নাতদন্তকারী দলের প্রধানকে ‘হত্যার’ হুমকি

প্রকাশ | ২৪ মে ২০১৬, ১৮:৩৪ | আপডেট: ২৫ মে ২০১৬, ২০:২৫

অনলাইন ডেস্ক

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনু হত্যার দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত বোর্ডের প্রধান এবং কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. কামদা প্রসাদ সাহাকে (কেপি সাহা) প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। 

মঙ্গলবার (২৪ মে) দুপুর ২টা নাগাদ ডা. কামদা প্রসাদ সাহা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের কাছে এ হুমকিমূলক চিঠির কথা জানান। 

চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘আপনি তনু হত্যা মামলা নিয়ে ধুম্রজাল সৃষ্টি করছেন, যা আপনার জন্য ভয়াবহ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সহজ মামলাটিকে প্যাঁচিয়ে জটিল করার চেষ্টা করবেন না।’

চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে ‘তনুর মা তার বক্তব্যে বলেছেন সার্জেন্ট জাহিদ ও সিপাহী জাহিদ তনুকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে গেছে। এ দুইজনকে গ্রেফতার না করে তালবাহনা করে সময় নষ্ট করবেন না বা মামলাকে ভিন্ন খাতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবেন না।’

বর্তমান সরকারে বিষয় নিয়ে চিঠিতে বলা হয়, ‘সরকারের আজ্ঞাবহ হয়ে কাজ করবেন তা হতে দেওয়া যাবে না। সেনাবাহিনীর সদস্যদেরকে এই মামলায় জড়ানো হলে হাসিনার সিংহাসন নড়বড়ে হয়ে যাবে, তাই না?’ 

চিঠিতে কামদা প্রসাদের পরিবার নিয়ে বলা হয়, ‘আপনি কি চান আপনার পরিবার, ছেলে-মেয়ে ধ্বংস হয়ে যাক? এক ব্যক্তি বিশেষের পক্ষপাতিত্ব হয়ে নিজের জীবনকে কেন ধ্বংস করতে যাচ্ছেন। এই সরকার কি সারাটা জীবন আপনাদের আগলাইয়া রাখবে এটা কিভাবে চিন্তা করতে পারলেন?’

এছাড়া চিঠিতে তদন্তের সাথে সংশ্লিষ্টদের উল্লেখ করে বলা হয়, ‘আপনাকে অথবা তদন্তকারি অথবা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ কোনো রকম ধানাই পানাই করলে তাহলে খোদার কসম কেউ রেহাই পাবেন না। Mind It’

চিঠির শেষে আবারো তনুর মায়ের অভিযুক্ত নাম সার্জেন্ট জাহিদ ও সিপাহী জাহিদ উল্লেখ করে বলা হয়, ‘কেন সহজ সরল মামলাকে ঘোলাটে করছেন। উপরোক্ত দুইজনকে (সার্জেন্ট জাহিদ ও সিপাহী জাহিদ) গ্রেপ্তার করলেই সব রহস্য উন্মোচিত হবে। আপনার বোন বা মেয়ে এই রকম পরিস্থিতিতে পড়লে আপনি কি করতেন? ঈশ্বরকে যদি আপনি বিশ্বাস করেন তা হলে সত্যের সঙ্গে মিথ্যা মিশ্রীত করবেন না। জেনে শুনে সত্য গোপন করবেন না।’

ডা. কেপি সাহা জানান, মঙ্গলবার (২৪মে) সকালে তিনি অফিসে আসার পর ডাকযোগে প্রেরিত হাতে লেখা ২ পৃষ্ঠার এ চিঠিটি পান। হুমকীর বিষয়ে মঙ্গলবার বিকেলের মধ্যেই তিনি জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে কোতোয়ালী মডেল থানায় জিডি করছেন বলে জানান। 

হুমকির প্রতিক্রিয়ায় ডা.কামদা প্রসাদ সাহা জানান, হুমকিতে যে কোনো মানুষই বিচলিত হয়, আমিও তো মানুষ। আমি নিয়মের মধ্যে আছি, তবে আমি ভীত নই।
 
এদিকে মঙ্গলবার সকালে মেডিকেল বোর্ড ২য় ময়নাতদন্তের বিষয়ে সভা করেছেন বলে জানিয়েছেন ডা.কামদা প্রসাদ সাহা।  তিনি জানান, মেডিকেল কলেজ প্রিন্সিপাল ও আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করে ডিএনএ রিপোর্ট এর জন্য আদালতে আবেদন জানানো হবে। ডিএনএ রিপোর্ট পাওয়া সাপেক্ষে ২য় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হবে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক গাজী মো. ইব্রাহিম বলেন, ডা.কামদা প্রসাদ সাহাকে হুমকি দেয়ার বিষয়ে আমি কিছু জানি না, আমাকে কেউ কিছু জানায়নি।


 
উল্লেখ্য, গত ২০ মার্চ তনুর মরদেহ কুমিল্লা সেনানিবাসের অভ্যন্তরে তার বাসার পাশে একটি জঙ্গলের ভেতর থেকে উদ্ধার করা হয়। পরদিন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ফরেনসিক বিভাগের প্রভাষক ডা. শারমিন সুলতানা তনুর প্রথম ময়নাতদন্ত করেন। পরে ডিএনএ আলামত সংগ্রহের জন্য মামলার ২য় তদন্তকারী সংস্থা ডিবির আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ৩০ মার্চ কবর থেকে তনুর মরদেহ উত্তোলন করে ৩ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড ২য় দফায় ময়নাতদন্ত ও ডিএনএ আলামত সংগ্রহ করে। 

পরে ৪ এপ্রিল তনুর প্রথম ময়নতদন্ত রিপোর্ট দেয়া হয়। এতে তনুকে হত্যা কিংবা ধর্ষণের আলামত ছিল না বলে জানানো হয়। এতে চরম সমালোচনার মুখে পড়ে প্রথম ময়নাতদন্ত রিপোর্ট। কিন্তু গত ৫৫ দিনেও নানা অজুহাতে দেয়া হয়নি ২য় ময়নাতদন্ত রিপোর্ট। 

এরই মধ্যে গত ১৬ মে রাতে ডিএনএ রিপোর্টে তনুকে ধর্ষণের আলামত পাওয়ার খবর সিআইডি থেকে গণমাধ্যম কর্মীদের জানানো হয়। ওই ডিএনএ রিপোর্ট পেতে তৎপর হয়ে উঠে ফরেনসিক বিভাগ। কিন্তু ডিএনএ রিপোর্ট দিতে সিআইডি আপত্তি জানালে শেষ পর্যন্ত ৩ সদস্যের ময়নাতদন্ত বোর্ডের সভায় ডিএনএ রিপোর্টের জন্য ফরেনসিক বিভাগ আদালতে যাওয়ারই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা গেছে।