নিখোঁজ স্বামীকে অক্ষত উদ্ধারের দাবীতে সাংবাদিক সম্মেলন
প্রকাশ | ০৭ আগস্ট ২০১৬, ১৩:২৪
পুলিশ পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর নিখোঁজ স্কুল শিক্ষক মিনারুল ইসলাম (৩৫) কে অক্ষত অবস্থায় পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার আকুতি জানিয়েছেন তার স্ত্রী মোছাঃ মেহেরুন নেছা মেরী। বুধবার (৩ আগস্ট) দুপুরে ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবে এক জনাকীর্ণ সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি ঝিনাইদহ পুলিশ প্রশাসনের প্রতি এই দাবী করেন। ঝিনাইদহ লিড ইন্টারনেশনাল স্কুলের শিক্ষক মিনারুল ইসলাম ঝিনাইদহ সদর উপজেলার খামারাইল গ্রামের মৃত ইউনুস আলী খোন্দকারের ছেলে।
গত ৩০ জুলাই রাত ৩টার দিকে ঝিনাইদহ শহরের হামদহ খোন্দপাকার পাড়া থেকে পোশাক পরিহিত পুলিশ সদস্যরা তাকে উঠিয়ে নিয়ে যায়। সাংবাদিক সম্মেলনে নিখোঁজ স্কুল শিক্ষক মিনারুলের মা সুফিয়া খাতুন, শ্বাশুড়ি সেলিনা খাতুন, ভাই রোকনুদ্দীন, বড় বোন লিপি খাতুন, খামারাইল গ্রামের মাতুব্বর আক্কাচ আলীসহ অর্ধশত নারী পুরুষ উপস্থিত ছিলেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে স্ত্রী মোছাঃ মেহেরুন নেছা মেরী লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করেন তার স্বামী মোঃ মিনারুল ইসলাম হতদরিদ্র একটি পরিবারের সন্তান। ছোট বেলায় এতিমখানায় থেকে পড়ালেখা করেছেন। পরবর্তীতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে সেখানে পড়ালেখা শেষ করে ঝিনাইদহ শহরে একটি কেজি স্কুলে শিক্ষকতা করছিলেন।
স্ত্রী মোছাঃ মেহেরুন নেছা মেরী দ্ব্যর্থহীন ভাবে জানান, আমার স্বামী কোনো রাজনীতি করেন না। তিনি হতদরিদ্র পরিবারে সন্তান হওয়ায় জীবনে কঠিন যুদ্ধ করেছেন। বিসিএস পরীক্ষা দেওয়া ও নানা স্থানে চাকরীর জন্য তার স্বামী সর্বদা ব্যস্ত থাকতেন।
লিখিত বক্তব্যে জানানো হয়, গত ৩০ জুলাই রাত ৩ টার দিকে আমাদের ভাড়া বাসায় পুলিশ পরিচয়ে ১৫ থেকে ২০ জন ব্যক্তি প্রবেশ করেন। তারা ভেতরে প্রবেশ করে আমার স্বামীর হাত ধরে বাইরে আসতে বলেন। এরপর তারা ঘরে থাকা আলমিরা থেকে বিসিএস দেওয়ার জন্য সংগ্রহ করা একটি গাইড বই নিয়ে যায়। যারা এই অভিযানে অংশ নেন তাদের কোমরে পিস্তল ও ওর্য়ালেস সেট ছিল। বেশির ভাগ সাদা পোশাকে থাকলেও ৩/৪ জন পুলিশের পোশাক পরে ছিলেন। বাসার বাইরে চারটি গাড়িতে আসা ওই লোকগুলো আমার স্বামীকে জোর করে উঠিয়ে নিয়ে শহরের দিকে চলে যায়। এরপর ৩ দিন অতিবাহিত হলেও তার কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। থানায় জিডি করতে গেলেও জিডি নেওয়া হচ্ছে না।
স্ত্রী মোছাঃ মেহেরুন নেছা মেরী জানান, ওই ঘটনার পর থেকে আমরা বিভিন্নভাবে তাকে খুঁজে বেড়াচ্ছি। থানায় গেলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হচ্ছে তারা মিনারুল ইসলাম নামে কাউকে আটক করেনি। পুলিশের বড় কর্মকর্তারাও একই কথা বলছেন। পুলিশের পক্ষ থেকে আমার স্বামীর কোনো খোঁজ দেওয়া হচ্ছে না বলে তিনি অভিযোগ করেন। ফলে আমাদের আশংকা তাকে কথিত ক্রসফায়ার সাজিয়ে হত্যা করা হতে পারে। অথবা তার লাশ গুম করে ফেলা হতে পারে।
সাংবাদিক সম্মেলনে স্ত্রী মোছাঃ মেহেরুন নেছা মেরী তার স্বামীকে জীবিত অবস্থায় ফেরতের দাবী জানিয়ে বলেন, আমার সাড়ে ৪ বছরের বাচ্চা নুসরাত বাবার জন্য সারাক্ষন কান্নাকাটি করছে। এই ছোট্ট শিশুটিকে যেন এতিম করা না হয়। সাংবাদিক সম্মেলনের সময় হল ভর্তি স্বজনরা ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্নাকাটি করতে থাকেন।
এ সময় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। স্ত্রী মেহেরুন নেছা মেরী ডুকরে ডুকরে কান্নার সময় তার স্বজনরাও একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি করতে থাকেন। এ দিকে পুলিশ পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া নিখোঁজ স্কুল শিক্ষক মিনারুল ইসলামের বিষয়ে ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজবাহার আলী শেখ জানান, এই নামে পুলিশ কাউকে আটক করেনি। তারপরও আমি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি।