‘আমাদের মুখ খুলতে হবে’
প্রকাশ | ১৭ নভেম্বর ২০১৮, ২০:৫৭ | আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০১৮, ২১:০৩
ভয়-লজ্জা আর সংশয়ের দেয়াল ভেঙে ‘#মি টু’ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে যৌন নিপীড়কের মুখোশ উন্মোচনে এগিয়ে এসে আওয়াজ তোলার আহবান জানানো হয়েছে।
১৬ নভেম্বর (শুক্রবার) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ‘মি টু মুভমেন্ট বাংলাদেশ’ আয়োজিত এক সংহতি মানববন্ধন কর্মসূচি থেকে এ আহবান জানান বাংলাদেশ মি_টু আন্দোলনের প্রতিনিধিরা।
কর্মসূচিতে বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি নাসিমুন আরা হক পুরুষদের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, শুধু মেয়েরা নয়, ছোট ছোট ছেলেরাও যৌন নিপীড়নের শিকার হয়। আপনার মা একজন নারী, আপনার মেয়ে সন্তান থাকতে পারে। থাকতে পারে আপনার বোন। তাদের কথা চিন্তা করে কর্মক্ষেত্রে নারীদের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করুন। নারীর কর্মক্ষেত্র যেন সংকুচিত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন, এগিয়ে আসুন।
তিনি সংশয় না রেখে মুখ খোলার আহবান জানিয়ে বলেন, যদি চুপ থাকেন তবে অপরাধীরা পার পেয়ে যাবে। তাই আমাদের আওয়াজ তুলে যেতেই হবে। যারা মুখ খুলেছেন সেই সাথে তাদের পাশে থাকতে হবে।
স্বনামধন্য অনেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে উল্লেখ করে সাংবাদিক সভাপতি বলেন, কেউ অনেক ধনী, কেউ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কেউ গুণীজন। কিন্তু যতই সমাজে তার অবদান থাকুক, তিনি কোনভাবেই নারী নিপীড়ক হতে পারেন না।
এসময় তিনি অভিযোগ পাওয়ার পর অনেক সংগঠন ত্বরিত পদক্ষেপ নেয়ায় তাদের সাধুবাদ জানান।
নারীর হয়রানি বন্ধে হাই কোর্টের রায়কে কার্যকরের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, সকল গণমাধ্যম, কর্পোরেট অফিস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে কমিটি গঠন বিষয়ক হাইকোর্টের রায়কে আইনে পরিণত করার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান।
পশ্চাদপদ পুরুষতান্ত্রিক যে ধ্যান-ধারণা তা হাজার বছরের উল্লেখ করে সাংবাদিক সভাপতি বলেন, এ অন্ধকার একদিনে দূর হবে না। তবে চেষ্টা করে যেতে হবে আমাদের। আমাদেরই শুরু করতে হবে, নারীদের শ্রদ্ধা করতে হবে।
বাংলাদেশ উইমেন জার্নালিস্টস ফোরামের সভাপতি মমতাজ বিলকিস বলেন, ছোটরা বলে দিলেও বড় হওয়ার পর অনেকেই আর বলতে পারেন না। অনেক সময় অভিভাবকরা বিশ্বাস করেন না। আর এতে বেড়েছে নিপীড়নের মাত্রা।
‘#মি টু’ নিয়ে অনেকের স্পষ্ট ধারণা নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ বিষয়ে অনেকের স্বচ্ছ ধারণা নেই। তাই সাংবাদিকরা এ বিষয়ে এগিয়ে আসতে পারেন। সমাজকে সচেতন করার পদক্ষেপ হিসেবে আপনার সংবাদপত্রে ‘#মি টু’ বিষয়ে একটি কলাম রাখুন, যেখানে নারীরা তাদের কথাগুলো বলতে পারে।
বিবেকের তাড়নায় ‘#মি টু’ লিখেছেন জানিয়ে সাপ্তাহিক অপরাধ বিচিত্রার সাংবাদিক নাদিরা দিলরুবা বলেন, পরিবার থেকেই প্রথম যৌন নিপীড়নের শিকার হই এবং আমার ধারণা, অনেক মেয়েই হয়।
ফেসবুকে‘#মি টু’ লিখে একত্রিশ বছর আগের যৌন নিপীড়নের বিষয়ে মুখ খোলা মুশফিকা লাইজু বলেন, একজন নারী যদি তার সারা জীবনের যৌন হয়রানির কথা সাদা কাগজে লিখতে শুরু করে তাহলে সেই কাগজে পৃথিবী ঢেকে রাখা যাবে।
বাংলাভিশনের বার্তা সম্পাদক শারমিন রিনভী বলেন, লজ্জার বলে সব কিছু চাপিয়ে রাখার ফলেই আজ এই নিপীড়ন এই হারে বেড়েছে। এটা মেয়েদের নয়, মানুষের আন্দোলন। যারা নিপীড়ন করছে, তাদের পরিচয় উন্মোচন হোক। নিপীড়ক কেউ ভোটে দাঁড়ালে তাকে সেখানে বয়কট করুন।
নারী সাংবাদিক সমিতির সভাপতি নাসিমা সোমা বলেন, আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে সফল হব।
এ আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ শুক্কুর আলী শুভ, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক কবির আহমেদ খান।
আগামী ১৮ নভেম্বর (রবিবার) বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করার ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি নাসিমুন আরা হক।