স্কুলের মাঠে সহপাঠীদের সঙ্গে আর দেখা যাবে না বৃষ্টি ও হাসি-খুশিকে

প্রকাশ : ০৯ নভেম্বর ২০১৮, ২৩:৩০

জাগরণীয়া ডেস্ক

যাদের পদচারণায় মুখরিত ছিল স্কুলের মাঠ তাদের আর কোন দিনই পাবে না তাদের সহপাঠীরা। মেধাবী শিক্ষার্থীদের হারিয়ে যেন অনেকটা নির্বাক স্কুলের শিক্ষকরাও। জয়পুরহাট জেলা শহরের আরামনগর এলাকায় ৭ নভেম্বর (বুধবার) রাতের বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় একই পরিবারের নিহত হওয়া ৮ জনের মধ্যে ছিল বৃষ্টি, হাসি ও খুশি।

বৃষ্টি আকতার ছিল এবারের জেএসসি পরিক্ষার্থী। প্রথম দিনের বাংলা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলেও পরের পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ আর হলো না। জেএসসিতে জিপিএ-৫ কে কে পাবে শিক্ষকের এমন প্রশ্নের উত্তরে অন্যান্য সহপাঠীদের সঙ্গে মেধাবী শিক্ষার্থী বৃষ্টিও হাত উচুঁ করেছিল বলে জানান, সদর থানা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: আবুল বাশার। স্কুলের খেলাধুলা, স্কাউটিং, গান, আবৃত্তিসহ নানা বিষয়ে পুরস্কার লাভ করে বৃষ্টি বলেও জানান তিনি।

অপর জমজ দুই বোন হাসি ও খুশি পড়েন পাশের কালেক্টরেট বালিকা বিদ্যা নিকেতনের ৭ম শ্রেণীতে। তারাও খেলা ধুলা, নাচ গান ও স্কাউটিংয়ের সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে জানান প্রধান শিক্ষক মো মাহবুব উল আলম। বৃষ্টি, হাসি ও খুশিকে কোন দিনই দেখতে পাব না ভাবতে অবাক লাগছে বলে জানান সহপাঠী রুমা খাতুন, ফাতেমা খাতুন। মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় বৃহষ্পতিবার দু’টি স্কুলই ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল।

প্রতিবেশী মুরাদ হোসেন জানান, ২৫-৩০ বছর আগে নীলফামারীর ডোমার থেকে কাজের সন্ধানে জয়পুরহাটে আসেন দুলাল হোসেন ও মোমেনা খাতুন। দীর্ঘদিন ভাড়া বাড়িতে থাকলেও বছর তিনেক আগে জেলা শহরের আরামনগর এলাকায় তিন শতাংশ জমি কিনে একটি সেমি পাকা বাড়ি করেন। একমাত্র আব্দুল মোমিনকে বিয়ে দেন জরিনা খাতুনের সঙ্গে। মোমিন ও জরিনা খাতুনের সংসারে প্রথম সন্তান বৃষ্টি। এরপর জমজ হাসি, খুশি।

তারপর অনেক আশা- আকাঙ্খা শিশু পুত্র নূরের জন্ম যার বয়স দেড় বছর। দুলাল ও মোমেনা ধানের গুড়া কেনা বেচা করলেও মোমিন মুরগীর ব্যবসা করতেন। এখন তাদের সুখের সংসার।

৭ নভেম্বর (বুধবার) রাতে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লেগে তিন কক্ষের পুরো বাড়ি পুড়ে যায়। এ ঘটনায় পরিবারের সকলেই নিহত হন। প্রতিবেশীদের নিকট এখন যেন শুধুই স্মৃতি দুলালের পরিবার। শুক্রবারেও অনেকে আসেন পুড়ে যাওয়া বাড়িটি দেখতে ও ঘটনা শোনার জন। দূর সম্পর্কের আত্মীয়স্বজনরা আসেন। তাদের কান্নায় আকাশ বাতাস ভারি হয়ে ওঠে আরামনগর এলাকার। দূর সম্পর্কের ছোট ভাই ফারুক ও ভাতিজা লিটন এসেছেন ডোমার থেকে।

অগ্নিকান্ডের সময় ঘটনাস্থলেই নিহত হন মোমেনা খাতুন (৬৫), আব্দুল মোমিন (৩৫) ও বৃষ্টি (১৪)। গুরুতর আহত ৫ জনকে জেলা আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এখানে অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে যাওয়ার পথে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন দুলাল হোসেন (৬৫), পরিনা খাতুন (৩২), হাসি (১৩), খুশি (১৩) ও দেড় বছরের শিশু পুত্র নূর । আগুনে পুড়ে ৮ জনের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় ৯ নভেম্বর (শুক্রবার) জেলার কেন্দ্রীয় মসজিদসহ বিভিন্ন মসজিদে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।

অগ্নিকান্ড ও মর্মান্তিক ভাবে একই পরিবারের ৮ জনের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ উদঘাটন করতে গঠিত পৃথক তিনটি তদন্ত কমিটি ৮ নভেম্বর (বৃহষ্পতিবার) থেকেই কাজ শুরু করেছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এই মর্মার্ন্তিক মৃত্যুর ঘটনায় জেলা জুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে।

সূত্র: বাসস

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত