‘সমুদ্র তলদেশের সম্পদ আহরণ করতে চাই’

প্রকাশ : ২৪ অক্টোবর ২০১৮, ১৫:৩৯

জাগরণীয়া ডেস্ক

আমরা একটি নিরাপদ সমুদ্র অঞ্চল গড়ে তুলতে চাই। এ জন্য সব ধরণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। সমুদ্র তলদেশের সম্পদ আহরণ করে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখতে চাই।

২৪ অক্টোরব (বুধবার) সকালে ১৪তম হেডস অব এশিয়ান কোস্ট গার্ড এজেন্সিস মিটিং (এইচএসিজিএএম)-এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। রাজধানীর রেডিসন ব্লু হোটেলে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমুদ্রপথে আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ও ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে দেশি-বিদেশি জাহাজের নিরাপদ চলাচল অপরিহার্য। বাংলাদেশের মোট বৈদেশিক বাণিজ্যের প্রায় ৯০ শতাংশ সমুদ্রপথেই হয়। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমাদের এ সামুদ্রিক এলাকায় মাদকদ্রব্য পাচার, অবৈধ অস্ত্র পাচার, মানব পাচার, অনিয়ন্ত্রিত মৎস্য আহরণ, জলদুস্যতা, সশস্ত্র ডাকাতি এবং আরও বিভিন্ন ধরনের অবৈধ কার্যকলাপ প্রায়শই সংঘটিত হয়ে থাকে। এসব অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে শুধু দেশীয় নয়, পার্শ্ববর্তী দেশগুলির অপরাধীরা জড়িত থাকে।

শেখ হাসিনা বলেন, অপরাধীরা অনেক সময় অত্যাধুনিক প্রযুক্তি এবং যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে থাকে। কাজেই কোনো একক দেশের পক্ষে এদের দমন করা সম্ভব নয়। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা থাকলেই এ সকল কর্মকাণ্ড দমন করা সম্ভব এবং এটা অপরিহার্য।

তিনি বলেন, এইচএসিজিএএম-এর মত একটি সংগঠনই পারে আমাদের সকলের অভিজ্ঞতা ও তথ্য-উপাত্ত কাজে লাগিয়ে দলগতভাবে সহযোগিতার মাধ্যমে এসব সামুদ্রিক অপ-তৎপরতা রোধ করে একটি নিরাপদ সমুদ্রসীমা উপহার দিতে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড অপেক্ষাকৃত নতুন বাহিনী হওয়ার পরও দেশের মানুষের আস্থা অর্জনে সক্ষমতা দেখিয়েছে। বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড এশীয় অঞ্চলের অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে একযোগে কাজ করে আমাদের সমুদ্রকে নিরাপদ রাখবে- এটাই আমাদের প্রত্যাশা। এজন্য আমরা সব ধরণের উদ্যোগ গ্রহণ করব।

শেখ হাসিনা জানান, পৃথিবীর ৭০ শতাংশ মানুষ সমুদ্র উপকূলের ১০০ কিলোমিটারের মধ্যে বসবাস করেন। মানব সভ্যতায় সমুদ্রের গুরুত্ব এ থেকেই অনুধাবন করা যায়। আমরা সৌভাগ্যবান এজন্য যে আমাদের মাতৃভূমি বাংলাদেশ নামক বদ্বীপটি বঙ্গোপসাগরের মাধ্যমে ভারত মহাসাগরের সঙ্গে সংযুক্ত। বাংলাদেশের রয়েছে প্রায় ৭১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ উপকূল। তিনটি বিভাগের ১২টি জেলার অবস্থান সমুদ্রতীরে। এসব জেলার জনগণের জীবন-জীবিকা অনেকটা সমুদ্র-নির্ভর। এ কারণেই সমুদ্রে নিরাপত্তা বিধান করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, উপকূলবর্তী দেশ হিসেবে বঙ্গোপসাগরে এদেশের মানুষের নানাবিধ স্বার্থ জড়িত। বঙ্গোপসাগরের অপর দুই অংশীদার ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সীমানা নির্ধারিত না থাকায় বিগত চার দশকে আমরা সমুদ্রতলদেশের সম্পদ আহরণে বাধাগ্রস্ত হয়েছি। জেলে সম্প্র্রদায় মৎস্য আহরণে বাধার সম্মুখীন হয়েছে। আমাদের মৎস্যসম্পদ অন্য দেশের জেলেরা অবাধে শিকার করেছে। কিন্তু আমরা প্রতিকার করতে পারিনি। খনিজ ও অন্যান্য সম্পদে আমাদের অধিকার ছিল না।

২০১২ ও ২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক সমুদ্র আইন বিষয়ক ট্রাইবুনালে ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমার বিরোধ নিষ্পত্তি হয়, যার মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরের মহীসোপানে বাংলাদেশের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা দুটি বন্ধুপ্রতিম দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখেও এটা করতে সক্ষম হয়েছি। এ বিশাল জলরাশির তলদেশে খনিজ সম্পদের প্রাচুর্যতা রয়েছে। এ সম্পদ আমরা উত্তোলন করতে সক্ষম হলে আগামী কয়েক প্রজন্ম লাভবান হবে।

সম্মেলনের সফলতা কামনা করে তিনি বলেন, কোস্ট গার্ডের সদস্যগণ সমুদ্র এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দুরূহ কাজে নিয়োজিত থাকেন। এ সভার মাধ্যমে সদস্য দেশগুলি তাদের সমুদ্রসীমা আরও নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত করতে নতুন নতুন কৌশল গ্রহণ করতে পারবে বলে আমার বিশ্বাস।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত