জঙ্গি বাইক হাসানের ২য় বিয়ে নারী জঙ্গির সাথে
প্রকাশ | ০৬ আগস্ট ২০১৬, ১৪:১৪
রাজশাহীতে গত মঙ্গলবার (২ আগস্ট) পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত ১১ খুনের আসামি নজরুল ওরফে পারভেজ ওরফে বাইক হাসান তার স্ত্রীকেও জঙ্গি বানাতে চেয়েছিল। কিন্তু তার স্ত্রী রাজি না হওয়ার কারণেই রাগ করে সে বাড়ি ছাড়ে। পরে তার স্ত্রী ইসমত আরা নীলফামারী সদরের রামগঞ্জ এলাকায় দুই মেয়েকে নিয়ে বাবার বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নেন। এক বছর ধরে তিনি সেখানেই আছেন। আর নিরুদ্দেশ হওয়ার পর বাইক হাসান সাজেদা আক্তার নামে জেএমবির এক নারী সদস্যকে বিয়ে করে। বর্তমানে বাইক হাসানের এই দ্বিতীয় স্ত্রী কারাগারে রয়েছে।
রাজশাহী মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি দায়িত্বশীল সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে। সূত্র জানায়, বাইক হাসান তার স্ত্রীকে জেএমবির সদস্য পদ নেওয়ার জন্য প্রচণ্ড চাপ দেয়। ব্যর্থ হয়ে সে রাগ করে বাড়ি ছাড়ে। তারপর থেকে তার আর কোনো খবর পাননি স্ত্রী ইসমত আরা।
সূত্র আরও জানায়, বাইক হাসান বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার পর তাকে মোটরসাইকেল চালানোয় বিশেষভাবে দক্ষ করে তোলে জেএমবি সদস্যরা। বাইক হাসানের তার কাজ ছিল, জেএমবির বিভিন্ন কিলিং মিশনে মোটরসাইকেলে করে দলের সদস্যদের নিরাপদে আনা নেওয়া করা। আর এ জন্যই সে জেএমবি সদস্যদের কাছে ‘বাইক হাসান’ নামে পরিচিতি লাভ করে। এরই মাঝে গাইবান্ধার সাজেদা আক্তার (২২) নামে জেএমবির এক নারী সদস্যর সঙ্গে হাসানের বিয়েও দেওয়া হয়।
সূত্রমতে, বাইক হাসানের দ্বিতীয় স্ত্রী সাজেদা আক্তার টাঙ্গাইলের কালিহাতি উপজেলার যোকারচর রেলগেট এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকত। তবে এ বাসায় বাইক হাসানের যাতায়াত ছিল খুবই কম। ‘কিলিং মিশনের’ জন্য বেশিরভাগ সময়ই তাকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছুটে বেড়াতে হত। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড.এএফএম রেজাউল করিম সিদ্দিকী হত্যাকাণ্ডের পর বাইক হাসানকে ধরতে গত ৩ জুন কালিহাতির ওই ভাড়া বাসায় অভিযানে যায় পুলিশ।
মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে কালিহাতি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আখেরুজ্জামান জানান, ওই বাড়ি থেকে সাজেদাসহ রোজিনা বেগম (৩০), তার স্বামী মোখসেদুল ইসলাম ওরফে মোজাম্মেল ওরফে হারেজ (৩৫) এবং জান্নাতি ওরফে জেমি (১৮) নামে আরও তিন জঙ্গিকে আটক করা হয়।
ওসির ভাষ্য, তারা সবাই জেএমবির সুইসাইড স্কোয়াডের সদস্য। আটকের সময় তাদের কাছ থেকে দু’টি চাপাতি, একটি ছোরা, মোবাইল ফোন, মানুষ জবাই করার জিহাদী ভিডিওচিত্র এবং বোমা তৈরির কলাকৌশল লেখা একটি খাতা উদ্ধার করা হয়। বর্তমানে তারা জেলহাজতেই রয়েছে।
এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কালিহাতি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নজরুল ইসলাম জানান, হারেজের বাড়ি গাইবান্ধার সাঘাঁটা উপজেলার পশ্চিম রাখবপুর ভূতমারা গ্রামে। আর জান্নাতি ওরফে জেমি বগুড়ার শেরপুর উপজেলার বাগরা কুসুমদী গ্রামের আবু সাইদ ওরফে সবুজের স্ত্রী। ওই সময় থানায় যে মামলা দায়ের হয়, তাতে সাজেদার স্বামী বাইক হাসান ও জেমির স্বামী সবুজকেও আসামি করা হয়।
বাইক হাসান রাজশাহীর আশরাফের মোড় এলাকায় গত মঙ্গলবার ডিবি পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। পরদিন বৃহস্পতিবার রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) কমিশনার শফিকুল ইসলাম জানান, বন্দুকযুদ্ধে নিহত ব্যক্তি জেএমবির সেই বাইক হাসান। তার বাবার নাম আব্দুল্লাহ মিয়া ওরফে মুন্না। বাড়ি পঞ্চগড়ের দেবিগঞ্জ উপজেলার সোনারহার গ্রামে। এই বাইক হাসানকেই ধরিয়ে দিতে এক লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে আরএমপির পক্ষ থেকে গত ২৯ জুলাই পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি ছাপানো হয়েছিল।
ওই দিন বিকেলে আরএমপির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাইক হাসান রাবির ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. এএফএম রেজাউল করিম সিদ্দিকী, পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জের মঠের অধ্যক্ষ যজ্ঞেশ্বর রায়, রংপুরে জাপানী নাগরিক হোশি কোনিও এবং কাউনিয়া মাজারের খাদেম রহমত আলী হত্যাকাণ্ডসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মোট ১১টি হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল। এসব হত্যাকাণ্ডে সে মোটরসাইকেল চালকের ভূমিকা পালন করে।
এদিকে বৃহস্পতিবার রাজশাহী মেডিকেল কলেজের (রামেক) মর্গে ছেলের লাশ নিতে এসে বাইক হাসানের বাবা আব্দুল্লাহ মিয়া জানিয়েছিলেন, তার ১১ ছেলে-মেয়ের মধ্যে হাসান সবার বড়। নীলফামারী সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ নূরানি মাদ্রাসায় সে দুই বছর পড়াশোনা করেছে। এরপর আর পড়াশোনা করেনি। পরবর্তীতে সে হাটে-বাজারে মসলা ও সবজি বিক্রি করত। দেড় বছর আগে ঢাকায় কাজের কথা বলে সে বাড়ি ছাড়ে। তারপর থেকে তার সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ হয়নি। আব্দুল্লাহ মিয়া ছেলের প্রথম বিয়ের কথা স্বীকার করলেও এ দিন তিনি তার দ্বিতীয় বিয়ের বিষয়ে কিছু জানাননি।