স্ত্রী-কন্যা নিয়ে নিখোঁজ ব্যারিস্টার সিরিয়া বা তুরস্কে!
প্রকাশ | ০৫ আগস্ট ২০১৬, ২১:২৮
দেড় বছর আগে স্ত্রী ও কন্যাকে নিয়ে ওমরা পালন করতে সৌদি আরবে যাওয়ার পর নিখোঁজ হওয়া ব্যারিস্টার এ কে এম তাকিউর রহমান শিফাত সিরিয়া বা তুরস্কে আছেন বলে সন্দেহ করছে তার পরিবার। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে সম্প্রতি নিখোঁজ যে ছয়জনের কথা জানানো হয়েছে, তার মধ্যে শিফাত একজন।
ঢাকার কলাবাগানে লেক সার্কাসের একটি বাসায় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে থাকতেন বগুড়া শহরের কালিতলার বাসিন্দা ব্যবসায়ী আব্দুল খালেকের ছেলে শিফাত। তার বাবা খালেক জানিয়েছেন, আইন ব্যবসার পাশাপাশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতেন তিনি।
বৃহস্পতিবার শিফাতের বাবা খালেক বলেন, "স্ত্রী রিজিতা রাইলা ইকবাল ও ১৮ মাসের মেয়ে রোমাইশা বিনতে তাকিকে নিয়ে গত বছর ৪ এপ্রিল ওমরার কথা বলে সৌদি আরব যায় শিফাত। এরপর ১৩ ও ১৪ এপ্রিল ফোনে কথা হলে জানায় ২২ এপ্রিল দেশে ফিরবে। তবে আর ফেরেনি তারা"।
ছেলে ও তার স্ত্রী-সন্তানের খবর না পেয়ে গত বছর ৯ জুন কলাবাগান থানায় একটি জিডি করেন বলে জানান তিনি।
খালেক জানান, "সৌদি যাওয়ার তিন মাস পর হঠাৎ অপরিচিত একটি নম্বর থেকে ফোন করে শিফাত। শুধু বলে, ভাল আছি। কোথায় আছে তা বলেনি”।
এর কয়েক মাস পরে আবার শ্যালকের সঙ্গে ফোনে কথা বলার সময় শিফাত পরিবার নিয়ে তুরস্কে অবস্থানের কথা জানিয়েছিলেন। এ থেকে খালেকের ধারণা ‘বিপথে’ গিয়ে পরিবার নিয়ে সিরিয়া বা তুরস্কে অবস্থান করছেন তার ছেলে।
আব্দুল খালেক বলেন, "কালিতলা এলাকা ছিল মাদকের আড্ডা । ছেলে মাদকে আশক্ত হওয়ার শঙ্কা থেকে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় ভারতের শিলিগুড়ির মাউন হারমান মিশনারি স্কুলে ভর্তি করে দেই। তারপর সেখান থেকে একই এলাকার রগভেলি স্কুলে ‘ও’ লেভেল পাশ করে শিফাত। এরপর ২০০৬ সালে ঢাকার ‘লন্ডন কলেজ অব লিগাল স্টাডিজ’ এ তাকে ‘এ’ লেভেলে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে পাশ করার পর আইন নিয়ে পড়তে যুক্তরাজ্যে যায় শিফাত। ২০১০ সালে বার এট ল পাশ করার পর দেশে ফেরে সে"।
যুক্তরাজ্যে থাকাকালেই শিফাতের আচরণে পরিবর্তন আসে বলে তার স্বজনরা জানান।
তার বাবা বলেন, ভারত থেকে লেখাপড়া করে আসার পর ঢাকা থাকার সময় শিফাতের চলাচল ছিল ‘স্টাইলিস্ট’ ছেলেদের মতো। কখনও কখনও কানে দুল লাগিয়ে গিটার হাতে বন্ধুদের সাথে ঘুরে বেড়াত। মাঝে মাঝে চুল বড় করে মেয়েদের মতো মাথায় বেনি করত। ধর্মকর্ম করতো না। তবে যুক্তরাজ্যে লেখাপড়ার শেষ দিকে তার আচরণে পরিবর্তন ঘটে। বার এট ল করার আগে সে দাড়ি রাখে। ২০১১ সালে দেশে ফেরার পর সে নিয়মিত নামাজ- রোজা করত”।
শিফাত ওমরা করতে যাওয়ার আগে তার শ্বশুর ও তিনি বারণ করেছিলেন বলে জানান খালেক।
"ওমরা না করে কিছুদিন পরে হজে যেতে বলা হয়েছিল তাকে। শিফাত তা না শুনে চলে যায়। সে জানায়, কম খরচে আমাদের সার্কেলের সাথে হজে যাচ্ছি। কোনো সমস্যা নেই।”
ছেলের এই অবস্থার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে এই ব্যবসায়ী বলেন, “মাদকের ছোবল থেকে দূরে রাখতে ছেলেকে বিদেশে পড়িয়ে উচ্চ শিক্ষিত করলেও সেই ছেলে চলে গেল বিপথে।”
শিফাতের নানা আইয়ুব উদ দ্দৌলা বেনু বলেন, “ছোট বেলা থেকে শিফাত দেশের বাইরে পড়ালেখা করতে গিয়ে বাবা- মার কাছ থেকে দূরে চলে যায়। বাবা-মার প্রতি পারিবারিক যে বন্ধন থাকে তা থেকে সে ছিল বঞ্চিত। জীবনের বেশিটা সময় ছিল একাকি। যখন সে বুঝতে শিখলো তখন তার বাবা-মার মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। সব কিছু মিলেই শিফাতের কিশোর ও শৈশব জীবনে একটা বড় ধরনের ভালবাসার ঘাটতি ছিল”।
বগুড়ার পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান জানিয়েছেন, শিফাতের সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে।
উল্লেখ্য, কয়েক বছর ধরে গৃহযুদ্ধে থাকা সিরিয়া ও ইরাকের বিস্তীর্ণ এলাকা দখলে নিয়ে জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস) খেলাফত ঘোষণার পর বিশ্বের নানা দেশের পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকেও কেউ কেউ সেখানে যোগ দেয়ার খবর এসেছে।