রামু সহিংসতার ৬ বছর
প্রকাশ | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৩:৫৩
আজ ভয়াল ২৯ সেপ্টেম্বর, রামু ট্র্যাজেডির ভয়াল সেই দিন। ২০১২ সালের এই দিনে সাম্প্রদায়িক উগ্রপন্থীরা ঝলসে দিয়েছিল কক্সবাজারের রামু উখিয়ার বৌদ্ধ বিহার ও পল্লী। ভেঙে দেয়া হয় শত বছরের সাম্প্রদায়িক ঐতিহ্য। প্রিয় আরাধনার স্থান ভেঙে ধংসস্তুপে পরিণত হয়।
বিভীষিকাময় সেই রাতে আগুনের লেলিহান শিখা থেকে প্রাণে বাঁচতে দিগ্বিদিক ছুটেছিল অসহায় বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের হাজারো নারী-পুরুষ। ভোর হতেই তারা হারিয়ে ফেলে জীবনের যা কিছু অর্জন। সেই কালরাতের কথা মনে করে এখনো আতঁকে উঠেন কক্সবাজারের বৌদ্ধ সম্প্রদায়।
হামলার এতদিন পর স্বাভাবিক পরিবেশে ফিরেছে রামু। বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের স্থানীয়রা মনে করছেন, এ পরিবেশ বজায় থাকলে রামুতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট হওয়ার আশংকা নেই।
রামু কেন্দ্রীয় সীমা মহাবিহারের সহকারী পরিচালক প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষু বলেন, একে একে ৬ বছর পার হয়ে গেলো। সেদিনের ভয়াবহতা বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীকে এখনো তাড়িয়ে বেড়ায়। তবে বর্তমানে রামুতে সব ধর্মের মানুষ অতীতের মত শান্তি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে বসবাস করছে। এভাবে চলতে থাকলে ধীরে ধীরে হয়ত বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মনের ক্ষত মুছে যাবে।
তবে তিনি অভিযোগ করে বলেন, পুলিশের দায়ের করা মামলাগুলো সাক্ষীর অভাবে ঠিকভাবে এগুচ্ছে না। এসব মামলায় একদিকে যেমন জড়িতরা বাদ পড়েছে তেমনি নিরপরাধ অনেক ব্যক্তিকেও জড়ানো হয়েছে। হামলার সময় ধারণ করা ছবি ও ভিডিও ফুটেজ দেখে যেন অন্তত জড়িতদের বিচার নিশ্চিত করার আহবান জানান তিনি।
সহিংসতা পরবর্তী সরকারের যথাযথ উদ্যোগের ফলে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত বিহারগুলো নতুন করে নির্মাণ করা হয়। নির্মিত এসব বিহারগুলোতে এখন বৌদ্ধ সম্প্রদায় নির্বিঘ্নে উপাসনা ও ধর্মীয় সকল কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। আবার দৃষ্টিনন্দন হওয়ায় রামুর বিহারগুলো দেখতে প্রতিদিন শত শত পর্যটন ছুটে আসছেন।
রামুর কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ যুব পরিষদের সহ সভাপতি সুনীল বড়ুয়া আরো বলেন, মাত্র ১ বছরের মাথায় সব ক্ষতিগ্রস্ত বৌদ্ধ বিহারগুলো দৃষ্টিনন্দনভাবে পুনঃনির্মাণ করায় সরকারের প্রতি কৃতঞ্জ।
রামু উপজেলা বৌদ্ধ যুব পরিষদের যুগ্ন আহবায়ক বিপুল বড়ুয়া জানান, সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টায় ক্ষতিগ্রস্ত বিহারগুলো নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু পুলিশের দায়ের করা মামলায় অনেক নিরীহ ব্যক্তিকে জড়িয়ে হয়রানি না করতে আহবান জানান তিনি।
একুশে পদকে ভূষিত বৌদ্ধ ধর্মীয় গুরু পণ্ডিত সত্যপ্রিয় মহাথের বলেন, আমরা এখনো আতংকের মধ্যে রয়েছি। যদিও আমাদেরকে সরকার পাহারা দেয়ার ব্যবস্থা করেছে। তবে আরো নিরাপত্তা প্রয়োজন।
কক্সবাজার পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন জানিয়েছেন, সহিংস ঘটনায় দায়ের করা মামলাগুলো বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে। তবে বিজ্ঞ আদালতে সাক্ষীরা না আসায় কয়েকটি মামলার কার্যক্রম তেমন এগুচ্ছে না। বৌদ্ধ বিহারগুলোতে পুলিশের পক্ষ থেকে নিরাপত্তামুলক ব্যবস্থা কার্যকর রয়েছে।
২৯ সেপ্টম্বর রামু সহিংসতার ৬ বছর উপলক্ষে রামুতে বৌদ্ধ যুব পরিষদ এর উদ্যোগে দিনব্যাপী কর্মসূচি পালন করা হবে বলে জানা গেছে। কর্মসূচির মধ্যে বিকালে শ্রীকুল গ্রামের লাল চিং-সাদা চিং মৈত্রী বিহার কমপ্লেক্সে অনুষ্ঠিত হবে স্মৃতিচারণ, হাজার প্রদীপ প্রজ্বলন। এছাড়া বিভিন্ন বিহারে পালন করা হবে ধর্মীয় কর্মসূচি।
উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে রামুর উত্তম বড়ুয়া নামের এক যুবকের বিরুদ্ধে ফেসবুকে পবিত্র কোরান শরিফ অবমাননার অভিযোগ এনে উগ্র ধর্মান্ধগোষ্ঠী রামুর বারটি প্রাচীন বৌদ্ধ বিহারও ২৬টি বসতঘরে অগ্নিসংযোগ করে। এসময় আরো ছয়টি বৌদ্ধ বিহার ও শতাধিক বসতঘরে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। পরদিন উখিয়া-টেকনাফে আরো কয়েকটি বৌদ্ধ বিহার ও বসতিতে হামলা চালানো হয়।