ছেলেকে আর পায়েস খাওয়ানো হয়নি মায়ের
প্রকাশ | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৫:৪৯
৩ সেপ্টেম্বর, ছেলে এসআই উত্তম কুমার সরকারের জন্মদিন ছিল। আর তাই জন্মদিন উপলক্ষে পায়েস রান্না করে টাঙ্গাইল থেকে ঢাকায় নিয়ে আসার কথা ভাবছিলেন মা। কিন্তু ঘাতক বাসের আঘাতে সকল স্বপ্নই অধরা রয়ে গেলো।
জন্মদিনের ঠিক আগের দিন ২ সেপ্টেম্বর ঢাকায় ঈগল পরিবহনের একটি বাসের চাপায় নিহত হন রূপনগর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) উত্তম কুমার সরকার।
ছেলের সঙ্গে ঢাকায় থাকতেন মা কামনা রানী সরকার। ঈদের ছুটিতে টাঙ্গাইলের কালিহাতী পৌরসভার পশ্চিম বেতডোবা গ্রামের বাড়িতে এসেছিলেন তিনি। ছেলের জন্মদিন উপলক্ষে ২ সেপ্টেম্বর বিকেলে তিনি টাঙ্গাইল থেকে ঢাকায় আসার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, রান্না করেছিলেন পায়েস। এমন সময়ই একটি ফোনে আসে উত্তম কুমারের নিহত হওয়ার খবর। থমকে যায় সব। জন্মদিনের পরিবর্তে ৩ সেপ্টেম্বর ছেলের মরদেহের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন মা।
মাত্র ৪৮ দিন বয়সী উপমাকে নিয়ে অঝোরে কাঁদছেন আর মুর্ছা যাচ্ছেন উত্তম কুমারের স্ত্রী তমা চৌধুরী। আমি কাকে নিয়ে বাঁচবো, আমাদের মেয়ের কী হবে? এমনই বিলাপে ভারী হয়ে উঠেছে উত্তম কুমারের বাড়ি। শুধু স্বজনরা নন, উত্তমের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে পুরো গ্রামে।
শোকের পাশাপাশি ক্ষোভ জানিয়েছেন স্বজনরা। স্বামী হত্যার বিচার দাবি করেছেন স্ত্রী তমা। ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে শোক জানাতে আসা মানুষের মধ্যেও। এটি দুর্ঘটনা নয়, হত্যাকাণ্ড উল্লেখ করে তারাও দ্রুততম সময়ে এর বিচারের দাবি জানান।
উত্তম কুমার সরকার কালিহাতী আরএস হাইস্কুল থেকে এসএসসি, কালিহাতী কলেজ থেকে এইচএসসি পাশের পর ভর্তি হন ভারতের বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখান থেকে ২০০৮ সালে মার্কেটিং-এ বিবিএ সম্পন্ন করে দেশে আসেন। ২০১২ সালে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে কনস্টেবল পদে যোগ দেন। নিজ যোগ্যতা ও মেধায় মাত্র ছয় বছরেই উপপরিদর্শক (এসআই) পদ লাভ করেন। ২০১৫ সালে ঢাকার ধামরাই উপজেলার মেয়ে তমা চৌধুরীকে বিয়ে করেন তিনি। তাদের ঘরে দেড় মাস বয়সী উপমা নামে এক কন্যাসন্তান রয়েছে।
এদিকে, ঢাকায় বাস চাপায় নিহত রূপনগর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) উত্তম কুমার সরকারের সৎকার সম্পন্ন হয়েছে।
৩ সেপ্টেম্বর (সোমবার)) রাত পৌনে ৯টায় উত্তমের মরদেহ তার গ্রামের বাড়ি কালিহাতী উপজেলার বেতডোবায় পৌঁছায়। এরপর উত্তমের মরদেহ তার মাকে একনজর দেখিয়ে কালিহাতী কেন্দ্রীয় শশ্মান ঘাটে সৎকারের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। এসময় শতশত গ্রামবাসী শশ্মান ঘাটে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন।