বাংলাদেশ-নেপাল বাণিজ্য বাড়াতে আগ্রহী দুই প্রধানমন্ত্রী
প্রকাশ | ৩০ আগস্ট ২০১৮, ১৫:০৩
বাংলাদেশ-নেপালের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি, বিশেষ করে বিদ্যুৎ সেক্টরে সহযোগিতা বাড়াতে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী আগ্রহ দেখিয়েছেন।
চতুর্থ বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে নেপাল সফরত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলির বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়।
৩০ আগস্ট (বৃহস্পতিবার) স্থানীয় সময় সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরকালীন আবাসস্থল হোটেল সোয়ালটি ক্রাউনি প্লাজায় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
পরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের এ বিষয়ে ব্রিফ করেন।
বৈঠকে বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার পাশাপাশি আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধি, দুই দেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি, বিশেষ করে বিদ্যুৎ সেক্টরের উন্নয়নে সহযোগিতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এছাড়া দুই নেতা আঞ্চলিক কানেকটিভিসহ পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন বলে জানান ইহসানুল করিম।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশকে নেপালের সহযোগিতার কথা স্মরণ করেন।
এ অঞ্চলের সবার অভিন্ন সমস্যা দারিদ্র্যতা বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের লক্ষ্য দারিদ্র্য নির্মূল করা। আমরা শুধু নিজেরাই উন্নয়ন করতে চাই না, আঞ্চলিক উন্নয়ন চাই। সৈয়দপুর বিমানবন্দর ও বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দরগুলো ব্যবহারের সুযোগের কথা তুলে ধরে নেপালকে এসব বন্দর ব্যবহার করার প্রস্তাব দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দুযোর্গ মোকাবিলা পারস্পরিক সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, দুযোর্গ ব্যবস্থাপনায় নেপাল বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে পারে।
নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি দু’দেশের মধ্যে সহযোগিতা নতুন নতুন ক্ষেত্র খুঁজে বের করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তার আমন্ত্রণ গ্রহণ করে বিমসটেক সম্মেলনে যোগ দিতে নেপাল আসায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ দেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী।
বৈঠকে নেপাল থেকে ৫০০ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ বাংলাদেশে আমদানির বিষয়েও আলোচনা করেন।
বৈঠকে অন্যদের মধ্যে বাংলাদেশ ও নেপালের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিব, নেপালে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত উপস্থিত ছিলেন।
এসময় প্রধানমন্ত্রীর অতিরিক্ত প্রেস সচিব নজরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভুটানের অন্তর্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা দাসো শেরিং ওয়াংচুকের সঙ্গে বৈঠক করেন।
এর আগে ৩০ আগস্ট (বৃহস্পতিবার) বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টিসেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশনের (বিমসটেক) চতুর্থ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সকাল ৮টা ৫ মিনিটে বাংলাদেশ বিমানের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইটে ঢাকা থেকে কাঠমান্ডুর উদ্দেশে রওনা হন প্রধানমন্ত্রী। স্থানীয় সময় সকাল ৯টা ৮ মিনিটে অবতরণ করে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ভিভিআইপি ফ্লাইট বিজি-১৮৭১।
নেপালের উপপ্রধানমন্ত্রী ঈশ্বর পোখারেল এবং নেপালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাশরাফি বিনতে শামসসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেয়া হয় লালগালিচা সংবর্ধনা। বিমানবন্দরে এ সময় তাকে গার্ড অব অনারও দেয়া হয়।
অভ্যর্থনা পর্ব শেষে প্রধানমন্ত্রীকে সুসজ্জিত মোটর শোভাযাত্রাসহকারে হোটেল সোয়ালটি ক্রাউন প্লাজায় নিয়ে যাওয়া হবে। নেপাল সফরকালে প্রধানমন্ত্রী সেখানেই অবস্থান করবেন।
বিকালে প্রধানমন্ত্রী নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সোয়ালটি ক্রাউন প্লাজা হোটেলে অনুষ্ঠেয় ৪র্থ বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্বে যোগ দেবেন।
সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলা, আঞ্চলিক যোগাযোগ এবং ব্যবসা-বাণিজের উন্নয়নের বিষয়ে সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর নেতৃবৃন্দের অলোচনার মূল বিষবস্তু হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার, শ্রীলংকা, থাইল্যান্ড, ভুটান ও নেপালের নেতৃবৃন্দ সম্মেলনে তাদের তিন বাহিনীর সম্মিলিত সামরিক অনুশীলন এবং একটি মুক্তবাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়েও মতবিনিময় করবেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং অন্যান্য নেতৃবৃন্দ স্থানীয় হায়াৎ রিজেন্সি হোটেলে তাদের সম্মানে নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শার্মা ওলি আয়োজিত নৈশভোজেও যোগ দেবেন। প্রধানমন্ত্রী শুক্রবার অপরাহ্নে দেশে ফিরবেন।