বাসের ধাক্কায় প্রাণ গেল ১৫ যাত্রীর

প্রকাশ : ২৬ আগস্ট ২০১৮, ০০:০৮

জাগরণীয়া ডেস্ক

নাটোরের বড়াইগ্রাম-লালপুর সীমান্তে যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি লেগুনাকে পেছন থেকে ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলে ১০ জন যাত্রী নিহত হয়েছেন। এছাড়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরো ০৫ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও অন্তত ২৫ জন।

২৫ আগস্ট (শনিবার) বিকেল ৪টার দিকে নাটোর-পাবনা মহাসড়কের ক্লিক মোডের সাদিয়া ফিলিং স্টেশনের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনা নিহতরা সবাই লেগুনার যাত্রী বলে জানা গেছে।

রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত ১১ জনের পরিচয় জানা গেছে। এরা হলেন- পাবনা জেলার মুলাডুলি গ্রামের মন্টু রোজারিওর স্ত্রী আদরী বিশ্বাস (৩৬), ছেলে প্রত্যয় বিশ্বাস (১২), মেয়ে স্বপ্না বিশ্বাস (১০), নাটোরের বড়াইগ্রামের শাপলা বেগম (২০), শেফালি বেগম (৪০), রজুফা বেগম (৪৫), লজেলা বেগম (৬৫) রোকন আলী (২২), সোবহান, ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশি গ্রামের সুবহান আলী (৭৫), ঠাকুরগাঁও জেলার লেগুনার চালক আব্দুর রহিম (৩৫)। 

আহতদের অবস্থার অবনতি হলে সন্ধ্যায় অ্যাম্বুলেন্সে করে দুই শিশুসহ সাতজনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। পরে সুরাইয়া (০২) নামে এক শিশু মারা গেছে বলে রামেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক (এসআই) শফিকুল ইসলাম শফিক জানান। আহতদের মধ্যে পাঁচজনের নাম জানা গেছে। তারা হলেন- লাইলী (৪৫), বৃষ্টি (১০), ডলি (১৮), কুলসুম (৮), রফিক (৩৫)। এছাড়া আনুমানিক ৪০ বছরের এক ব্যক্তি ও ৫ বছরের এক শিশুর নাম জানা যায়নি।

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্র জানায়, বিকেলে পাবনা থেকে যাত্রী নিয়ে চ্যালেঞ্জার পরিবহনের একটি বাস বগুড়ার উদ্দেশে যাচ্ছিল। পথিমধ্যে লালপুর সাদিয়া ফিলিং স্টেশনের সামনে গেলে বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি লেগুনাকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই ১০ জন নিহত হয়। নিহতরা সবাই লেগুনার যাত্রী বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। লেগুনাটি পাবনা থেকে বনপাড়ার দিকে যাচ্ছিল।

প্রত্যক্ষদর্শীর জানান, দুর্ঘটনার সময় লেগুনার চালক মুঠোফোনে কথা বলছিলেন। দুর্ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন।

এলাকাবাসী জানান, দুর্ঘটনার পরপর তাঁরা লেগুনার চারজনসহ বাসের আহত আট যাত্রীকে উদ্ধার করেন। পরে বনপাড়া হাইওয়ে থানা, লালপুর থানা, নাটোর ও লালপুর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা দুর্ঘটনাস্থলে আসেন। আহত লোকজনকে বড়াইগ্রামের বনপাড়া শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় লেগুনার আরও ০৫ যাত্রীর মৃত্যু হয়।

স্থানীয় ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা মহিউদ্দিন জানান, বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে খাদে পড়ে গেছে। আহতদের উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। 

বনপাড়া হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিএম সামসুন নূর বলেন, লাশগুলো তাঁর থানায় রাখা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে লেগুনাটির নিবন্ধন ও ফিটনেস ছিল না। বাসটি এ সড়কে নিয়মিত চলাচল করে।

লালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম বলেন, ‘দুর্ঘটনাকবলিত বাসের চালক পলাতক। লেগুনার চালক নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।’

নাটোরের পুলিশ সুপার (এসপি) বিপ্লব বিজয় তালুকদার জানান, দুর্ঘটনায় ১০ জন নিহত হওয়ার খবর শুনেছি। ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিস ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছে। বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে গেছে।

নাটোর জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজ্জাকুল ইসলাম দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের বলেন, এ দুর্ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সাইদুজ্জামানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অপর সদস্যরা হলেন- অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বড়াইগ্রাম সার্কেল) হারুনুর রশিদ, বিআরটিএ’র সহকারী পরিচালক সাইদুর রহমান।

এছাড়া বগুড়া হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জানিয়েছেন হাইওয়ে পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান।

নাটোর জেলা প্রশাসক শাহিনা খাতুন জানান, দুর্ঘটনা তদন্তে এই দুই কমিটিকে আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে এ বিষয়ে বিস্তারিত তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এছাড়া জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহত প্রত্যেক পরিবারকে ২০ হাজার টাকা, আহতদের ১০ হাজার টাকা এবং বিনা খরচে চিকিৎসা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত