নুশরাত হত্যা মামলার আসামি জামিনে, পরিবারে আতংক
প্রকাশ | ২১ আগস্ট ২০১৮, ১৪:৪২
নুশরাত ধর্ষণ ও হত্যা মামলার ২ নং আসামি মোঃ বোরহান সাম্প্রতি কারাগার থেকে জামিনে বের হয়ে আসায় আতংক বিরাজ করছে পরিবারে।
দীর্ঘ ৫ মাস পার হলেও নিজেদের সান্ত্বনা দিতে পারছেন না নুশরাতের মা রেহানা বেগম ও তার বাবা এরশাদ হোসেন। মেয়েকে হারিয়ে রাত-দিন শুধু আহাজারি করছেন।
২০ আগস্ট (সোমবার) সকালে নুশরাতের বাড়িতে গেলে দেখা যায়, তার মা রেহানা বেগম মেয়ের জামা কাপড়, বই, খেলনা হাতে নিয়ে আহাজারি করছেন। অপরদিকে নুশরাত হত্যা মামলার আসামি মোঃ বোরহান জামিন পাওয়ার পর শোকের সাথে যোগ হয়েছে আতংক।
পরিবারটির অভিযোগ, আসামি মোঃ বোরহান লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার নোয়াগাঁও গ্রামের ধানিয়ার বাড়ির আবদুল মান্নানের ছেলে আফতাব হোসেন রিপনসহ কয়েকজন নুশরাতের পরিবার ও নুশরাতের মামাতো ভাই সাইফুল ইসলামকে হুমকি দিয়ে আসছে।
এতে নুশরাতের পরিবারের লোকজন আতংকে দিনাতিপাত করছেন। আফতাব তার ফেসবুক পেজে এ ব্যাপারে কয়েকবার স্ট্যাটাস দিয়েছেন বলেও অভিযোগ করেছেন নুশরাতের পরিবারের লোকজন।
নুশরাতের মা রেহানা বেগম ও বাবা এরশাদ হোসেন জানান, শাহ আলম রুবেলের সাথে আমাদের কোন শত্রুতা ছিলো না। অথচ আমার একমাত্র মেয়েকে এতটা নির্মমভাবে ধর্ষণ শেষে হত্যা করলো!
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ২৩ মার্চ শুক্রবার দুপুরে উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়নের নোয়াগাঁও নজুমুদ্দিন বাড়ির (কালু মেস্তুরির বাড়ির) প্রবাসী এরশাদ হোসেনের মেয়ে ও স্থানীয় পশ্চিম নোয়াগাঁও ফয়েজুল রাসূল সুন্নিয়া মাদ্রাসার তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী নুশরাত জাহান (৭) বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়। পরদিন নুশরাতের নিকটাত্মীয় আবদুল মান্নান বাদী হয়ে রামগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। জিডির সূত্র ধরে তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই মোহাম্মদ কাউসারুজ্জামান বিভিন্ন স্থানে তদন্ত চালায়।
পরে, গত ২৬ মার্চ সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই মোহাম্মদ কাউসারুজ্জামান স্থানীয় এলাকাবাসীর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের ব্রহ্মপাড়া গ্রামের ওয়াপদা খালে ভাসমান বস্তাবন্দি অবস্থায় একটি শিশুর লাশ পাওয়ার পর শিশু নুশরাতের মামা মোঃ জিয়া তার ভাগ্নীর লাশ শনাক্ত করেন।
শিশু নুশরাতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হলে চিকিৎসক তাকে ধর্ষণ শেষে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে মর্মে প্রতিবেদন দেয়। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনসহ সারাদেশের মানুষ নুশরাত হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তারে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ কর্মসূচি অব্যাহত রাখে। এমনকি নোয়াগাঁও বাজারে নুশরাত হত্যাকারীর গ্রেপ্তার দাবিতে আয়োজিত মানববন্ধনে অন্যতম ভূমিকা পালন করতেও দেখা যায় মূল অভিযুক্ত শাহ আলম রুবেলকে।
পুলিশ লাশসহ উদ্ধারকৃত ব্যাগের ছবি দিয়ে লিফলেট প্রকাশ করে তদন্ত চালায়। তদন্তের এক পর্যায়ে লাশ বহনকারী সিএনজি অটোরিকশাচালক তারেক হোসেন পুলিশকে শাহ আলম রুবেলের বন্ধুর বোরহান উদ্দিনের মাধ্যমে সিএনজি ভাড়া করে নুশরাতের লাশ বহনের কথা জানিয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করে। এতে শাহ আলম রুবেল ও বোরহান উদ্দিন গা-ডাকা দেয়।
পুলিশ খুলনার ফুলতলা পুলিশের সহযোগীতায় ১ এপ্রিল শাহ আলম রুবেল (২৫) ও বোরহান উদ্দিনকে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেন রানার সহযোগীতায় ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করলে আদালত তাদের রিমান্ড মঞ্জুর করলে মূল ঘটনা বেরিয়ে পড়ে। পরে আদালতে ১৬৪ ধারায় শাহ আলম রুবেল তার জবানবন্দি দেয়।
জবানবন্দিতে শাহ আলম রুবেল জানান, ঘটনার দিন শুক্রবার সকালে ভাতিজি নুশরাত জাহান শাহ আলম রুবেলদের ঘরে টিভি দেখার সময় নুশরাতকে ধর্ষণের চেষ্টা করলে নুশরাত চিৎকার দেয়। এসময় শাহ আলম রুবেল নুশরাতের গলা চেপে ধরে ধর্ষণ করলে নুশরাতের জিহবা ও চোখ বের হয়ে যায়। রুবেল এসময় বুঝতে পারে নুশরাত ধর্ষণের সময় মারা গেছে। রুবেল একটি পাটি দিয়ে নুশরাতের লাশ মুড়িয়ে ট্রাভেলব্যাগে ভরে ঘরের আলমিরার উপর লাশ রেখে দেয়। ঐদিন রাত ৮টায় বন্ধু বোরহান উদ্দিনের সহযোগীতায় সিএনজি অটোরিকশা ভাড়া করে ব্যাগভর্তি নুশরাতের লাশ কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের ব্রহ্মপাড়া গ্রামের ওয়াপদা বেড়িবাঁধ সংলগ্ন ব্রিজের নিছে ফেলে দেয়।
তিনদিন পর ২৬ মার্চ সোমবার সকালে স্থানীয় লোকজন ট্রাভেলব্যাগটি ব্রিজের নিছে পানিতে ভাসমান অবস্থায় দেখে রামগঞ্জ থানা পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ নুশরাতের অর্ধগলিত মৃতদেহ উদ্ধার করে।
এ ঘটনায় শিশু নুশরাতের মা রেহানা বেগম শাহ আলম রুবেল ও বোরহান উদ্দিনকে আসামি করে রামগঞ্জ থানায় একটি মামলা করা হয়।
দীর্ঘ তদন্ত ও স্বাক্ষীর স্বাক্ষগ্রহণ শেষে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই মোহাম্মদ কাউসারুজ্জামান লক্ষ্মীপুর পুলিশ সুপার কার্যালয়ে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই মোহাম্মদ কাউসারুজ্জামান জানান, চলতি মাসের ৯ আগস্ট (বৃহস্পতিবার) নারী ও শিশু নির্যাতন দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের মাননীয় বিচারকের নিকট চার্জশিট জমা দেওয়ার পর বিজ্ঞ বিচারক মামলাটি গ্রহণ করে আমলে নিয়েছেন।