অবশেষে বাংলাদেশি পাসপোর্ট পেলেন লুসি হল্ট

প্রকাশ : ১০ জুলাই ২০১৮, ১৪:৩৪

জাগরণীয়া ডেস্ক

 

নাগরিকত্ব পাওয়ার পর এবার বাংলাদেশি পাসপোর্ট হাতে পেয়েছেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে বিশেষ অবদান রাখা বৃটিশ নাগরিক লুসি হেলেন ফ্রান্সিস হল্ট।

গত ৯ জুলাই (সোমবার) বরিশাল নগরের অক্সফোর্ড মিশনে লুসির হাতে পাসপোর্টটি তুলে দেন বাণিজ্য মন্ত্রনালয়ের যুগ্ম সচিব শফিক জামান। 

পাসপোর্ট পেয়ে উচ্ছ্বসিত লুসি হল্ট বলেন, আমি খুবই খুশী। আমি এই বাংলার মাটিতেই মরতে চাই এবং এখানেই সমাহিত হতে চাই। এই দেশকে আমি অনেক ভালোবাসি।

গত ৩১ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে এক অনুষ্ঠানে লুসি হেলেনকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করা হয়। ৫৭ বছর ধরে এদেশে বাস করে এদেশের মানুষের জন্য যে অকৃত্রিম ভালোবাসা ও নিঃস্বার্থ মানবতা দেখিয়েছেন তার স্বীকৃতিস্বরূপ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লুসি হেলেনের কাছে সম্মানসূচক নাগরিকত্বের সনদ হস্তান্তর করেন।

উল্লেখ্য, ১৯৩০ সালের ১৬ ডিসেম্বর যুক্তরাজ্যের সেন্ট হ্যালেন্সে জন্ম হয় লুসি হেলেন ফ্রান্সিস হল্ট এর। ১৯৬০ সালে তিনি প্রথম বাংলাদেশে আসেন। যোগ দেন বরিশাল অক্সফোর্ড মিশনে। ১৯৭১ সালে যশোর ক্যাথলিক চার্চের স্কুলে শিশুদের ইংরেজি পড়াতেন সিস্টার লুসি। বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে চার্চটি বন্ধ করে মিশনের সবাই খুলনায় নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান। কিন্তু পালিয়ে না গিয়ে নিজের জীবন বিপন্ন করে লুসি ছুটে যান পাশের ফাতেমা হাসপাতালে। সেখানে আহত অসংখ্য নারী, পুরুষ, শিশুর কান্না দেখে আপ্লুত লুসি অসহায় মানুষদের সেবা দিতে চাইলেন। ভিনদেশি এক নারীর এমন আগ্রহ দেখে চিকিৎসকরা বিস্মিত হলেও সম্মতি দেন। এরপর থেকেই মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে যুদ্ধাহত ব্যক্তিদের শুশ্রূষা দিতে থাকেন লুসি।

তারপর অনেক বছর কেটে গেছে। কিন্তু এখনো মানুষের সেবা করে যাচ্ছেন ৮৭ বছর বয়সী এই ব্রিটিশ নারী। এমনকি নিজের জন্মভূমিতেও ফিরে যাননি। ২০০৪ সালে অবসর গ্রহণের পর এখনো বাংলাদেশকে ভালোবেসে বরিশাল নগরের অক্সফোর্ড মিশনে দুস্থ শিশুদের অবৈতনিক ইংরেজি শিক্ষক হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। তার শেষ ইচ্ছা তাকে যেন এই বাংলার মাটিতেই চিরনিদ্রায় সমাহিত করা হয়।

লুসি বলেন, ‘বাংলাদেশের জন্ম ১৬ ডিসেম্বর আর আমার জন্মও একই দিনে। এটা কাকতালীয় হলেও বিষয়টি আমাকে খুব ভাবায়। হয়তো এটা ঈশ্বরের খেয়াল! অবসর গ্রহণের পর সবাই দেশে ফিরে যায়। কিন্তু আমি এই দেশকে এত ভালোবেসে ফেলেছি যে, এর মায়া ছেড়ে যেতে মন সায় দেয়নি। তাই জীবনের সেরা সময়গুলো কাটানো এই বরিশালেই ফিরে এসেছি। মৃত্যুর পর এখানের মাটিতেই সমাহিত হতে চাই।’

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত